বৃদ্ধাশ্রমে বসবাসকারী মানুষের আত্মকাহিনি

বৃদ্ধাশ্রমে বসবাসকারী মানুষের আত্মকাহিনি |বাংলা রচনা

ভূমিকা:

এই বৃদ্ধাশ্রমে আসার আগে আমি এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের গৃহবধূ ছিলাম। আমার একমাত্র সন্তানকে যথেষ্ট আদরযত্নে বড়ো করে তুলেছিলাম |সে উচ্চশিক্ষিত হয়ে বিদেশে পাড়ি দিল | আমাদের সঙ্গে কমল তার যোগাযোগ। হঠাৎ স্বামীও গত হলেন। সংসারে হয়ে পড়লাম একেবারেই একা, নিঃসঙ্গ। আত্মীয়স্বজনেরা সকলেই নিজেদের কাজে ব্যস্ত। কে আর আমার খোঁজ রাখে। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম স্বামীর জমানো টাকা অবলম্বন করে বৃদ্ধাশ্রমকেই করে তুলব আমার আবাস | যা ভাবা তাই কাজ| আশ্রয় নিলাম বৃদ্ধাশ্রমেই |

বৃদ্ধাশ্রমে দিনযাপনের বর্ণনা:

বৃদ্ধাশ্রমে এসে নিঃসঙ্গতার হাত থেকে রেহাই পেলাম, পেলাম নিরাপত্তাও। এখানে ভালো – মন্দে দিন কাটে। এখানে যারা আছেন, তাদের সকলের সঙ্গে যে আমার মনের মিল হয় এমন নয়, তবু সবাইকে নিয়ে মানিয়ে চলাই যে জীবনের ধর্ম সেকথা ভুলি কেমন করে। তাই সবাইকে নিয়ে মিলেমিশে, গল্প- গুজব করে বৃদ্ধাশ্রমে দিন কাটাতে মন্দ লাগে না।

এখানে থেকে কত দৃশ্য চোখে পড়ে। দেখি, কেউ ছেলের চিঠি পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে তা পড়ে শোনাচ্ছেন। আবার কারোর বা দেখা মেলে না। আমার ছেলে দেখা করতে না এলেও চিঠি দেয় সুবিধামতো। আমার অসুবিধার কথা তাতে জানতে চায়, আরও নানা কথা লেখে–ঝাপসা চোখে সবটা পড়ে উঠতে পারি না। আমরা সকলে একসঙেগ বসে তাস, লুড়ো ইত্যাদি খেলে সময় কাটাই|এমন অনেকে আছেন যারা গান ভালোবাসেন – তাদের সাথে গলা মেলাতে বা গান শুনতে শুনতে মাঝে মাঝে যেন হারিয়ে যাই সেই পুরোনো দিনগুলিতে । এই জীবন ফেলে আসা সংসার জীবন থেকে একেবারেই অন্যরকম।

অসুখ- বিসুখ হলে কর্তৃপক্ষের দেখাশোনার পাশাপাশি আমার সঙ্গীসাথীদের সেবাযত্নও কম পাই না| এও এক পরম পাওয়া বলে মনে হয়। বার বার এই উপলব্ধি হয় যে, বয়সের শেষপ্রান্তে দাড়িয়ে বেশ কয়েকজন ভালো বন্ধু পেলাম।

উপসংহার: এইভাবে জীবনের শেষ কটা দিন কাটিয়ে কবে সেই পরম বন্ধুর কাছে যাব- -এখন শুধু সেই অপেক্ষাতেই রয়েছি।

Rlearn Education