অদল বদল : পান্নালাল প্যাটেল

মাধ্যমিক বাংলা সাজেশান : অদল ও বদল

■ সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর দাও : (শব্দসংখ্যা ১৫০) [ প্রশ্নের মান – ৫]

প্রশ্ন ১। ‘অদল বদল’ গল্পের নামকরণের সার্থকতা বিচার করো।
উত্তর : পান্নালাল প্যাটেল-এর ‘অদল বদল’ গল্পটি নামকরণের বিচারে যথেষ্ট ব্যঞ্জনাধর্মী, শিল্পোজ্জ্বল, সার্থক এক গল্প। অমৃত ও ইসাব নামে দুই বন্ধু এক বিশেষ পরিস্থিতিতে নিজেদের জামার অদল-বদল করেছে। অমৃত চেয়েছিল, ইসাবকে তার বাবার প্রহার থেকে রক্ষা করতে। অন্যদিকে ইসাব অমৃতের বাবার প্রহারের কথা তুললে অমৃত যুক্তি হিসেবে তার মায়ের স্নেহের আশ্রয়ের কথা উল্লেখ করেছে। ঘটনাটিতে অমৃত ও ইসাবের অকৃত্রিম বন্ধুত্ব ফুটে উঠেছে। খবরটি ঘটনা পরম্পরায় ইসাবের বাবা, অমৃতের মা, অমৃতের বাবা, গ্রামপ্রধান ও গ্রামের ছোটো-বড়ো সকলের কাছে পৌঁছে গেছে। তাতে গ্রামপ্রধান অমৃত ও ইসাবকে যথাক্রমে ‘অদল’ ও ‘বদল’ বলে ডাকবেন বলেছেন, এরপরে “অমৃত ইসাব অদল-বদল অদল-বদল” ধ্বনিটি ক্রমশ গ্রাম পেরিয়ে আকাশ-বাতাসকেও মুখরিত করেছে।
অমৃত-ইসাবের জামা অদল-বদলের ঘটনাটি শেষ পর্যন্ত দুই বন্ধুর সৌহার্দ্য, প্রীতি ও আন্তরিকতার অদল-বদল বা বিনিময়ে পৌঁছে গেছে। জীবনের সেই ইতিবাচক ভাবনায় গল্পটি উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। তাই গল্পটির নামকরণও হয়েছে খুবই ব্যঞ্জনধর্মী ও সার্থক।

প্রশ্ন ২। “তুমি কী কাণ্ডটাই না করেছিলে”—অমৃত কীসের জন্য অনেক কিছু করেছিল? তার করা কাণ্ডের পরিচয় দাও।
উত্তর : পান্নালাল প্যাটেলের ‘অদল বদল’ গল্পের অমৃত তার বাবা-মায়ের কাছ থেকে নতুন জামা পাওয়ার জন্য অনেক কিছুই করেছিল। অমৃত ইসাবের নতুন জামার মতো জামা পাওয়ার জন্য তার মা-বাবাকে খুব জ্বালিয়েছিল। তার মা তাকে বুঝিয়েছিল যে, ইসাব ক্ষেতে কাজ করে, তার জামা ছিঁড়ে গেছে, তাই সে নতুন জামা পেয়েছে। এদিকে অমৃতের জামা তো প্রায় নতুনই রয়েছে। এতে অমৃত নিজের জামার ছেঁড়া জায়গায় আঙুল ঢুকিয়ে আরও ছিঁড়ে দিয়েছে। এরপরে অমৃতের মা ইসাবের নতুন জামা পাওয়ার ক্ষেত্রে তার বাবার কাছে থেকে মার খাওয়ার কথা বলেছেন অমৃত ও তখন নতুন জামা পাওয়ার জন্য মার খেতে প্রস্তুত হয়ে বলেছেন “ঠিক আছে, আমাকে বেঁধে রাখে! মারো!”
তারপরেও অমৃত জামা না পেলে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করেছে, খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে এবং রাত্রিতে বাড়ি ফিরতে অসম্মত হয়েছে। শেষ পর্যন্ত জামা পেয়ে ও শান্ত হয়েছে। অমৃত নতুন জামা পাওয়ার জন্য এসব কাণ্ডই ঘটিয়েছে।

প্রশ্ন ৩। “ক্রমশ গ্রাম পেরিয়ে আকাশ- বাতাসও ‘অমৃত ইসাব অদল বদল অদল বদল’ এই আওয়াজে মুখরিত হয়ে উঠল”—গল্পের আলোকে অংশটির নিহিতার্থ ব্যাখ্যা করো।

উত্তর : পান্নালাল প্যাটেল রচিত ‘অদল বদল’ গল্পে ‘অমৃত-ইসাব অদল বদল অদল বদল’ ধ্বনিটি অমৃত ইসাবদের গ্রাম পেরিয়ে আকাশ- বাতাসকে মুখরিত করেছে। আসলে ধ্বনিটির মধ্যে আছে অকৃত্রিম বন্ধুত্ব। সেই বন্ধুত্বেই অমত-ইসাবদের গ্রাম সহ পারিপার্শ্বিক জনজীবন প্রভাবিত হয়েছে। অমৃত-ইসাব একই পাড়ার দুই ছেলে। তাদের মধ্যে আছে নানান বিষয়ে সাদৃশ্য। হোলির পড়ন্ত বিকেলে দুই বন্ধু সান বাঁধানো ফুটপাতে বসেছে। কালিয়া নামে এক ছেলে ঘটনা পরম্পরায় অমৃতকে ছুঁড়ে মাটিতে ফেলেছে। ইসাব তার অকৃত্রিম বন্ধুত্বের দাবিতে সেই কালিয়াকে ল্যাং মেরে মাটিতে ফেলেছে। এই ঘটনায় ইসাবের জামা ছিঁড়েছে এবং তার বাবার কাছে মার খাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। অমৃত নিজের অক্ষত জামাটিকে ইসাবকে দিয়েছে এবং তার বাবার মারের হাত থেকে তাকে বাঁচিয়েছে। এদিকে নিজের ঘরের মার খাওয়া প্রসঙ্গে অমৃত বলেছে যে, তার বাবা মারলেও মা তো আছেন; রক্ষা করবেন। এই ঘটনাটির খবরটি এক সময় ইসাবের বাবা, অমৃতের মা-বাবা, গ্রাম প্রধান সহ সকলের কাছে পৌঁছেছে এবং সাদরে গৃহীত হয়েছে। গ্রাম প্রধান তো আনন্দে অমৃত ও ইসাবকে যথাক্রমে ‘অদল’ ও ‘বদল’ বলে ডাকবেন বলেছেন। আর তখনই অমৃত- ইসাবের সৌহার্দ্য ও প্রীতি প্রকাশকে ‘অমৃত ইসাব অদল বদল অদল বদল’ ধ্বনিটি গ্রামের সংকীর্ণতা পেরিয়ে বৃহত্তর জনসমাজে ছড়িয়ে পড়েছে।

প্রশ্ন ৪। “কী খাঁটি কথা! অমৃতের জবাব আমাকে বদলে দিয়েছে”—এখানে খাঁটি কথাটি কী? সেই কথা ইসাবের বাবাকে কীভাবে বদলে দিয়েছে? ২ + ৫
উত্তরঃ পান্নালাল প্যাটেলের ‘অদল বদল’ গল্পে অমৃত একসম বন্ধু ইসাবকে তার বাবার প্রহারের হাত থেকে বাঁচিয়েছে এবং নিজের সম্বন্ধে বলেছে, “আমার তো মা রয়েছে।” এখানে অমৃতের এই কথাটিই হল খাঁটি কথা। প্রকৃত পক্ষে খাঁটি কথা হল অমৃতের অকৃত্রিম বন্ধুত্বের অনুভূতি।

‘অদল বদল’ গল্পে অমৃত ও ইসাব হল দুই যথার্থ বন্ধু। হোলির পড়ন্ত বিকেলে দুজনেই নতুন জামা পরে শান বাঁধানো ফুটপাত এসে বসেছে। কালিয়া নামে এক ছেলে অমৃতকে ছুঁড়ে মাটিতে ফেলেছে এবং ইসাব তার বন্ধুত্বের দাবিতে সেই কালিয়াকে ল্যাং মেরে ফেলে দিয়েছে। এই ঘটনায় ইসাবের জামা ছিঁড়েছে। ইসাব তার বাবার কাছ থেকে প্রহারের আশঙ্কা করেছে। অমৃত তখন নিজের অক্ষত জামাটিকে ইসাবকে দিয়েছে এবং প্রহারের হাত থেকে ইসাবকে রক্ষা করেছে। ইসাব অমৃতের ঘরে অমৃতের প্রহারের প্রসঙ্গ তুললে অমৃত বলেছে, “আমার তো মা রয়েছে”। অমৃতের এই অকৃত্রিম বন্ধুত্বের কথাটি ইসাবের বাবার কানে গেছে। তিনি একই সঙ্গে অমৃতের বন্ধুত্ব এর শ্রেষ্ঠত্ব ও নিজের পিতৃ হৃদয়ের ঘাটতিকে খুঁজে পেয়েছে। তিনি বুঝতে পেরেছেন যে, অমৃত যদি বন্ধুত্বের খাতিরে ইসাবকে রক্ষা করতে পারে, তবে তিনি কেন সন্তান-বাৎসল্যের দাবিতে ইসাবকে প্রহার করা থেকে বিরত থাকতে পারবেন না। সেই মুহূর্ত থেকে তার পিতৃহৃদয়ের পরিবর্তন ঘটেছে; এটাই হল তার বদলে যাওয়া।

প্রশ্ন ৫। ‘অদল-বদল’ গল্পে সংকীর্ণ সাম্প্রদায়িকতার উর্দ্ধে চিরন্তন বন্ধুপ্রীতি ফুটে উঠেছে—আলোচনা করে বুঝিয়ে দাও।
উত্তর: পান্নালাল প্যাটেলের ‘অদল-বদল’ গল্পে হিন্দু-মুসলিমের সাম্প্রদায়িকতার ঊর্ধ্বে চিরন্তন মনুষ্যত্ব নির্ভর বন্ধুত্বের প্রাধান্য ঘটেছে। হিন্দু পরিবারের ছেলে অমৃত এবং মুসলিম পরিবারের ছেলে ইসাব একই পাড়াতে থাকে এবং একই স্কুলে একই শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। তাদের বন্ধুত্বের মধ্যে কোনো সংকীর্ণতা ছিল না। হোলির পড়ন্ত বিকেলে দুজনে একই ধরনের নতুন জামা পরে, সানবাঁধানো ফুটপাতে এসে বসেছিল। ঘটনা পরম্পরায় কালিয়া নামে এক ছেলে অমৃতকে ছুঁড়ে মাটিতে ফেলে দেয়। বন্ধুত্বের দাবিতে ইসাবের মেজাজ বিগড়ে গিয়েছিল এবং কালিয়াকে ল্যাং মেরে ফেলে দিয়েছিল। তাতে ইসাবের জামা ছিঁড়ে গিয়েছিল। ইসাবের বাবা সেই কারণে ইসাবকে প্রহার করবেন—একথা জেনে অমৃত নিজের জামাটি ইসাবকে দিয়েছিল। আর সে নিজের বাড়িতে ছেঁড়া জামার কারণে বাবার প্রহার প্রসঙ্গে মায়ের স্নেহ ছায়ার কথাই বলে। অমৃত-ইসাবের বন্ধুত্বের কারণে জামাবদলের কাহিনিটি ইসাবের বাবা, অমৃতের মা-বাবা সহ গ্রামের ছোটো-বড়ো সকলের কাছে পৌঁছে যায় এবং আনন্দের সঙ্গে গৃহীত হয়।
গ্রামপ্রধান তো অমৃতকে অদল আর ইসাবকে বদল বলে ডাকবেন বলেছিলেন। সৌহার্দ্য, আন্তরিকতা ও প্রীতিব ধ্বনি—“অমৃত-ইসাব অদল-বদল অদল-বদল” গ্রাম পেরিয়ে আকাশ-বাতাসকেও মুখরিত করে তোলে। এইভাবে সংকীর্ণ সাম্প্রদায়িকতার ঊর্ধ্বে চিরন্তন বন্ধুত্বের জয়গান গাওয়া হয়েছে ‘অদল বদল’ গল্পে।


প্রশ্ন ৬। ‘অদল বদল’ গল্পে সম্প্রদায়ের গণ্ডি অতিক্রম করে কীভাবে বন্ধুত্ব ও সমানুভূতি জয়ী হয়েছে তা আলোচনা কর।
উত্তর : গুজরাটি লেখক পান্নালাল প্যাটেলের লেখা ‘অদল বদল’ গল্পটি বন্ধুত্বপ্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্বরূপ ‘সাহিত্য সঞ্চয়নে স্থান পেয়েছে। লেখক একজন সমাজ সচেতন সাহিত্যিক হিসেবেই এই গল্পে সংকীর্ণ ভেদবুদ্ধির ঊর্ধ্বে স্থান দিয়েছেন মানবিক- তাকে। অমৃত ও ইসাব দুই ভিন্ন স্বভাবের ও ভিন্ন সম্প্রদায়ের কিশোর। কিন্তু তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্বটি খাঁটি। ইসাবের মতো জামা পাওয়ার জন্য অমৃতকে অনেক অন্তরায় অতিক্রম করতে হয়েছে। সে মার খেতেও রাজি কিন্তু তার ইসাবের মতো একটি জামা চাই। তারপর কালিয়া অমৃতকে আঘাত করলে ইসাবের মেজাজ চড়ে যায়; বন্ধুর ওপর এহেন
অত্যাচার ইসাব সহ্য করেনি। সে ল্যাং মেরে ফেলে দিয়েছে কালিয়াকে। কালিয়ার সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে ইসাবের জামা ছিঁড়ে গেলে ইসাবকে বাবার মার থেকে বাঁচাতে অমৃত তাকে নিজের নতুন জামা অনায়াসে (নির্দ্বিধায়) পরিয়ে দিয়েছে, নিজের মার খাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা উপেক্ষা করেও।

ইসাবও বন্ধুর কথা ভোলেনি, সে জিজ্ঞাসা করেছে, “তোর কী হবে?” তারপর আর উত্তরে অমৃত বলেছে, “আমার তো মা আছে।” আর এই একটা উত্তরেই সে সংকীর্ণতা,সাম্প্রদায়িক তাকে অতিক্রম করে এমন এক স্থানে উত্তীর্ণ হয়েছে যেখানে বন্ধুত্বের দামই সর্বাধিক। সুন্দর জীবন গড়ে উঠে মানবধর্মের অনুশীলনে। আর অমৃত-ইসাব ভিন্ন সম্প্রদায়ভুক্ত হয়েও তাদের বন্ধুত্ব সমানুভূতিকে এমন জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে যেখানে ভালোবাসাই একমাত্র সত্য ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক নজির সেখানে হয়ে যায় অপ্রাসঙ্গিক।

Rlearn Education