অলিন্দ যুদ্ধ | বিনয় ,বাদল ও দীনেশের অবদান

রাইটার্স বিল্ডিং আক্রমণ | অলিন্দ যুদ্ধ | বিনয় কৃষ্ণ বসু, বাদল গুপ্ত এবং দীনেশ গুপ্ত

ভূমিকা: সুভাষচন্দ্র বসুর উদ্যোগে ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স (বি ভি) নামে একটি স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গড়ে ওঠে। এই বাহিনীর অন্যতম সদস্য ছিলেন বিনয় কৃষ্ণ বসু, বাদল গুপ্ত এবং দীনেশ গুপ্ত। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ৮ ডিসেম্বর তাঁরা কলকাতার রাইটার্স বিল্ডিং আক্রমণ করেন। এই ঘটনা অলিন্দ যুদ্ধ নামে পরিচিত।

[1] লোম্যান হত্যা:

মিটফোর্ড মেডিকেল স্কুলের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র বিনয় বসু বাংলার অত্যাচারী পুলিশ ইনস্পেকটর লোম্যান এবং ঢাকার পুলিশ সুপার হাডসনকে লক্ষ করে গুলি চালালে লোম্যানের মৃত্যু (১৯৩০ খ্রি.) হয়। ঘটনার পর বিনয় গা ঢাকা দেন। লোম্যান হত্যাকাণ্ডের পর যুবকদের ওপর পুলিশি অত্যাচার চরমে ওঠে।

[2] সিম্পসনকে হত্যার পরিকল্পনা: ইতিমধ্যে কারা বিভাগের ইনস্পেকটর জেনারেল কর্ণেল সিম্পসনের উদ্যোগে আলিপুর জেলে বন্দি সুভাষচন্দ্র-সহ         বিভিন্ন নেতার ওপর চরম শারীরিক নির্যাতন শুরু    হয় |ফলে বিনয় বসু সিম্পসনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। সিম্পসন রাইটার্স বিল্ডিং- এ তার দফতরে বসতেন।এজন্য বিনয় বসু রাইটার্স বিল্ডিং আক্রমণ করে সিম্পসনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। 


[3] অভিযান:

বিপ্লবী বিনয় বসুর নেতৃত্বে বাদল গুপ্ত ও দীনেশ গুপ্ত ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে ৮ ডিসেম্বর দুপুর ১২টায় কলকাতার রাইটার্স বিল্ডিং আক্রমণ করে। অসংখ্য পুলিশের প্রহরা অতিক্রম করে তাঁরা নিমেষে সিম্পসনের দফতরের সামনে চলে যান এবং সিম্পসনের সহকারী জ্ঞান গুহকে ঠেলে দফতরে ঢুকে পড়েন যেখানে সিম্পসন কর্মরত। বিনয় মুহূর্তের মধ্যে বলে উঠলেন, “প্রে টু গড কর্নেল | ইওর লাস্ট আওয়ার হ্যাস কাম।” সঙ্গে সঙ্গে বিপ্লবীদের পিস্তলের ৬টি গুলি সিম্পসনের দেহ বিদীর্ণ করে দেয় এবং দেহটি মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে।

[4] অলিন্দ যুদ্ধ:

বিপ্লবীরা পালাতে গেলে পুলিশ কমিশনার টেগার্টের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশবাহিনী তাঁদের ঘিরে পালটা আক্রমণ চালায়। বিপ্লবীরাও গুলি চালাতে থাকে। দীনেশ গুলিবিদ্ধ হয়েও লড়াই চালিয়ে যান। রাইটার্স বিল্ডিং-এর বারান্দায় সংঘটিত উভয় পক্ষের এই লড়াই ‘অলিন্দ যুদ্ধ’ নামে পরিচিত।

[5] মৃত্যু:

বিপ্লবীদের গুলি ফুরিয়ে এলে তারা রাইটার্স বিল্ডিং- এর একটি ফাঁকা ঘরে ঢোকেন। সেখানে বাদল পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেন। বিনয় ও দীনেশ নিজেদের রিভলভারের শেষ দুটি গুলি নিজেদের মস্তিষ্কে চালিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। পরে হাসপাতালে বিনয় নিজের মস্তিষ্কের ক্ষতস্থানে আঙুল চালিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। চিকিৎসায় দীনেশ সুস্থ হয়ে ওঠার পর তাঁর ফাঁসি হয়।

উপসংহার:

বিনয়-বাদল-দীনেশের সীমাহীন দুঃসাহস আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে বিরল| অলিন্দ যুদ্ধের ঘটনা ভারতের ব্রিটিশ শাসকদের মনে
গভীর আতঙ্কের সৃষ্টি করে। তারা উপলব্ধি করে যে, এদেশে ব্রিটিশদের জীবন মোটেই আর নিরাপদ নয়। এই বিপ্লবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গীতিকার মোহিনী চৌধুরীর ভাষায় বলা যায়, “মুক্তির মন্দির সোপানতলে, কত প্রাণ হল বলিদান, লেখা আছে অশ্রুজলে।” ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর কলকাতার ডালহৌসি স্কোয়ারের নাম রাখা হয়েছে ‘বিনয়-বাদল-দীনেশ বাগ’ বা সংক্ষেপে বিবাদী বাগ।

Rlearn Education