আইন অমান্য আন্দোলনে শ্রমিকদের ভূমিকা

Ayin Ommanno Andolone Sromikder bhumika

প্রশ্ন:- আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলনের বর্ণনা দাও।

ভূমিকা :- মহাত্মা গান্ধির নেতৃত্বে জাতীয় কংগ্রেস ভারতের ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু করে। এই আন্দোলনে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের শ্রমিকরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করলে আইন অমান্য আন্দোলন জোরদার হয়ে ওঠে।

মহারাষ্ট্রে ধর্মঘট : আইন অমান্য আন্দোলনের সময় মহারাষ্ট্রের শোলাপুর, নাগপুর ও বোম্বাই-এ ব্যাপক শ্রমিক ধর্মঘট সংঘটিত হয়। বোম্বাইয়ে প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক স্বাধীনতার দাবি জানায়। বোম্বাইয়ের রেল শ্রমিকরা রেললাইনে শুয়ে, রেল অবরোধ করে আইন অমান্য করে।

বাংলায় ধর্মঘট : আইন অমান্য আন্দোলনে যোগ দিয়ে কলকাতার বিভিন্ন চটকল, পরিবহণ ও শিল্পকারখানার শ্রমিকরা ধর্মঘট করে। এছাড়া কুলটির লৌহ-ইস্পাত কারখানা, রানিগঞ্জের কয়লাখনি প্রভৃতি স্থানের শ্রমিকরাও ধর্মঘট করে।

অন্যান্য স্থানে ধর্মঘট : গান্ধিজি গুজরাটের ডান্ডি নামক স্থানে ব্রিটিশ সরকারের লবণ আইন ভেঙে আইন অমান্য করেন। এই আন্দোলনে গান্ধিজির সঙ্গে বহু শ্রমিক অংশ নেয়। করাচি বন্দর, হীরাপুরে লৌহ-ইস্পাত কারখানা, আসামের ডিগবয় তৈল শোধনাগার, মাদ্রাজের শিল্পকারখানার শ্রমিকরাও ধর্মঘটে শামিল হয়।

কমিউনিস্ট পার্টির ভূমিকা : শ্রমিকদের আইন অমান্য আন্দোলনে শামিল করার ক্ষেত্রে কমিউনিস্ট পার্টির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। সোমনাথ লাহিড়ী প্রমুখ কমিউনিস্ট নেতার নেতৃত্বে ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে রেড ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হয়। শ্রমিক ধর্মঘটে কমিউনিস্ট পার্টির সক্রিয় ভূমিকা থাকায় সরকার১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে কমিউনিস্ট পার্টিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

শ্রমিক শ্রেণির পুনর্জাগরণ : ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে গান্ধিজির আইন অমান্য আন্দোলনের সঙ্গে শ্রমিকদের আন্দোলনও দুর্বল হয়ে পড়ে। এরপর ১৯৩৭-এর নির্বাচনে কংগ্রেস ৭টি প্রদেশে মন্ত্রীসভা গঠন করলে শ্রমিকদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা দেখা দেয়। আবার নতুন করে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন গড়ে উঠতে থাকে এবং শ্রমিক ধর্মঘট শুরু হয়।

উপসংহার :- মিরাট ষড়যন্ত্র মামলার (১৯২৯ খ্রি.) পর ভারতে শ্রমিক আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়েছিল। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে আইন অমান্য আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে শ্রমিক আন্দোলন আবার সক্রিয় হওয়ার সুযোগ পায়। শ্রমিকদের সহযোগিতায় আইন অমান্য আন্দোলন শক্তিশালী রূপ ধারণ করে। তবে আইন অমান্য আন্দোলন ক্রমশ দুর্বল হতে থাকলে শ্রমিক আন্দোলনও স্তিমিত হয়ে পড়ে।

Rlearn Education