মহামারি করোনা ভাইরাস| বাংলা রচনা

মহামারি করোনা ভাইরাস ৷ সাম্প্রতিক ঘটনা | রচনা : মহামারি করোনা

রচনা সংকেতঃ 1. ভূমিকা 2. করোনা ভাইরাসের লক্ষণ 3. করোনা ভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ 4. করোনা থেকে রোগমুক্তির উপায় 5. বিশ্বের পরিসংখ্যান 6. উপসংহার

Bangla Rochona : Corono Virus

ভূমিকা : বর্তমান পৃথিবীর মানুষ এক ব্যাপক সংকটের মুখােমুখি, যার নাম মহামারি করােনা । বিশ্বব্যাপী একটি নতুন রােগের বিস্তারকেই মহামারি বলে। স্বাভাবিকভাবেই নতুন রােগ সংক্রমিত হলে প্রাথমিক পর্যায়ে মানুষের রােগপ্রতিরােধ ক্ষমতা থাকে না, ফলে তা সহজেই ছড়িয়ে পড়ে। করােনার ভয়াবহতাও এখানেই যে তা অতি দ্রুত মানুষকে সংক্রমিত করে এবং এই রােগ থেকে প্রতিকারের কোনাে ওষুধ এখনও আবিষ্কৃত হয়নি।

লক্ষণ : করােনা একটি সংক্রামক ব্যাধি, যা সদ্য আবিষ্কৃত নভেল করােনা ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হয়। এই রােগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শ্বাসজনিত সমস্যায় ভােগেন এবং বিশেষ কিছু চিকিৎসা ছাড়াই সুস্থ হয়ে ওঠেন। এই রােগের সাধারণ লক্ষণ হল কাশি, গলা ব্যথা, জ্বর, হাঁচি, শ্বাসকষ্ট। তবে উপসর্গহীন রােগীও থাকতে পারে। উপসর্গহীন বা সামান্য আক্রান্ত ব্যক্তিরা সহজে সুস্থ হয়ে যেতে পারেন। তবে বয়স্ক মানুষ এবং যারা হৃদরােগ, ডায়াবেটিস, শ্বাসকষ্ট অথবা ক্যানসারে আক্রান্ত তাদের জন্য এই রােগ বিপজ্জনক।

প্রথম সংক্রমণ : কোভিড-১৯ বা নভেল করােনা ভাইরাসে মানুষ প্রথম আক্রান্ত হয় ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চিনের উহান প্রদেশে। চিকিৎসকরা রােগটি শনাক্ত করার আগেই অতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে করােনা। রােগের ভয়াবহতাকে লক্ষ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০২০ সালের ১১ মার্চ এই রােগকে মহামারি বলে নির্দেশ দেয়। করােনা রােগ সারা বিশ্বে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়লেও আমেরিকা, চিন, ইতালি, ব্রাজিল, ভারতবর্ষ ইত্যাদি দেশগুলিতে ভয়ানক রূপ নেয়।

রােগমুক্তির উপায় : যে-কোনাে রােগ থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় প্রতিষেধক বা ওষুধ। কিন্তু করােনার প্রতিষেধক বা ওষুধ এখনও অবধি আবিষ্কৃত হয়নি। কিন্তু ওষুধ পাওয়ার আগে পর্যন্ত কতগুলি সাবধানতা অবলম্বন করলে রােগমুক্তি সম্ভব। এই রােগ সংক্রমণ প্রতিরােধ করার একমাত্র উপায় অসচেতনতা দূরীকরণ। তাই সর্বপ্রথম করােনা ভাইরাস সম্পর্কে ভালােভাবে জানতে হবে এবং এই রােগের কারণ ও কীভাবে তা ছড়ায় সে বিষয়ে সচেতন হতে হবে।
মহামারি সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বারবার হাত ধােয়া অথবা অ্যালকোহলযুক্ত স্যানিটাইজার দিয়ে হাত শােধন করার কথা বলা হয়েছে এবং সেই সঙ্গে নিজের মুখে বা নাকে-চোখে অপরিষ্কার হাত দেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। বাইরে বেরােনাের সময় মাস্ক পরা অত্যাবশ্যক। সর্বোপরি সামাজিক দূরত্ব মেনে চললে এই মহামারির সঙ্গে যুদ্ধে আমাদের সাফল্যলাভ সম্ভব।

বিশ্বের পরিসংখ্যান : ২০২০ সালে ১ আগস্ট পর্যন্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশ্বের ১৮৮টি দেশে ১৭.৫ মিলিয়নের মতাে মানুষ এই রােগে আক্রান্ত হয়। যার মধ্যে ৬৭৯০০০ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং ১০.৩ মিলিয়ন মানুষ সুস্থ হয়ে উঠেছে। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মহামারি করােনার ভারতে প্রথম সংক্রমণের খবর পাওয়া যায় ২০২০ সালের ৩০ জানুয়ারি। কিন্তু বর্তমানে ভারতে করােনা সংক্রমণ এত মারাত্মক আকার ধারণ করেছে যে ২০২০ সালের আগস্ট মাসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ হয়েছে ভারতে এবং বিশ্বের প্রেক্ষাপটে আমেরিকা ও ব্রাজিলের পরেই এখন ভারতের স্থান। করােনা মােকাবিলার জন্য ভারতে প্রায় আড়াই মাস সম্পূর্ণ লকডাউন বহাল ছিল। ভারতের মতাে উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতির কথা মাথায় রেখে লকডাউন তুলে নেওয়া হলে সংক্রমণ বাড়ে।করােনা মােকাবিলায় রাজ্য সরকার আনলক পর্বের মাঝেও জুলাই মাসে তিন দিন এবং সারা আগস্ট মাসে সাত দিন সম্পূর্ণ লকডাউনের নির্দেশ দিয়েছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা জাগাতে বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।

উপসংহার : প্রতিটি অন্ধকার রাত্রির কালিমা মুছে যেমন নতুন ভােরের সূর্যোদয় হয়, তেমনি বিশ্বের ‘গভীর গভীরতর অসুখ’-এর গ্লানি একদিন মুছে যাবে। আশা করা যায়, সে সুদিন আর খুব দূরে নেই। আমেরিকা, ইংল্যান্ড, রাশিয়া-সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ প্রতিষেধক আবিষ্কারের চেষ্টা করছে। ভারতের বিভিন্ন ওষুধ নির্মাণ সংস্থাও এই প্রতিষেধক তৈরিতে আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছে। এই প্রচেষ্টা নিশ্চয়ই খুব শীঘ্র সফল হবে। আর সেইদিন সারা পৃথিবীর মানুষ এই করােনা-মৃত্যুর ভয়াবহতা কাটিয়ে নতুনভাবে বেঁচে উঠবে।

Rlearn Education