বাংলার বিজ্ঞানচর্চা প্রসারের ক্ষেত্রে IACS-এর ভূমিকা

বাংলার বিজ্ঞানচর্চা প্রসারের ক্ষেত্রে IACS-এর ভূমিকা কী ছিল?

উত্তর :

ভূমিকা :

বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার প্রসারের ক্ষেত্রে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় IACS বা ভারতীয় বিজ্ঞানসভা। আর IACS প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মহেন্দ্রলাল সরকার বাংলায় বিজ্ঞান চর্চার প্রসারে একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত হন।

মহেন্দ্রলালের ভূমিকা :

বিজ্ঞানমনস্ক মহেন্দ্রলাল সরকার ছিলেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে পাস করা
দ্বতীয় এম. ডি.। তিনি অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসক হলেও বিভিন্ন স্থানে তিনি হোমিয়োপ্যাথির সপক্ষে বক্তব্য রাখেন। তাই অ্যালোপ্যাথ চিকিৎসকের সমাজ থেকে তিনি বহিষ্কৃত হন। এরপরই তিনি একটি বিজ্ঞানসভা গঠনের প্রস্তাব রাখেন।

১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে তাঁর সম্পাদিত ‘Calcutta Journal of Medicine’ নামক মাসিক পত্রিকায় বিজ্ঞানসভা গঠনের প্রস্তাব রাখেন। তিনি এ বিষয়ে একটি প্রসপেকটাসও প্রকাশ করেন যা ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকায় ছাপা হয়। বঙ্কিমচন্দ্রের বঙ্গদর্শন’ পত্রিকায় এ বিষয়ে বিস্তৃত আলোচনা করা হয়। মহেন্দ্রলালের এইরূপ প্রসপেকটাসকে যোগেশচন্দ্র বাগল
ভারতীয় বিজ্ঞানচর্চার ম্যাগনাকার্টা বলেছেন।


IACS-এর উদ্দেশ্য ও অবদান :

১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার বউবাজার স্ট্রিটে প্রতিষ্ঠিত হয় IACS, যার উদ্দেশ্য
(i) একটি বিজ্ঞানচর্চার প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার মাধ্যমে প্রযুক্তিগত বিজ্ঞানসাধনার উন্নতি ঘটানো।
(ii) মহেন্দ্রলাল সরকার চেয়েছিলেন IASC যেন লন্ডনের Royal Institute -এর মতো সম্মান অর্জন করে।
(iii) মহেন্দ্রলাল IASC এর পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে বিজ্ঞান বিষয়ে সভা করতেন। এই সভায় বক্তৃতাগুলি ছাত্রদের মধ্যে যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিল।
(iv) মহেন্দ্রলালের মৃত্যুর পর IASC আরও প্রসার লাভ করে। মেঘনাদ সাহা, সি. ভি. রমন, কে. এম কৃষ্ণান এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন।
(v) শুধু তাই নয় এখান থেকে গবেষণা করেই ভারতীয় হিসেবে পদার্থবিদ্যায় প্রথম নোবেল পান সি. ভি. রমন।
(vi) মেঘনাদ সাহার এখানে আলোকবিজ্ঞান, প্রভৃতি বিষয়ের গবেষণা সূচনা করেন।

———————————————————

আরও পড়ুন : বাংলায় নমঃশুদ্র আন্দোলন

———————————————————

IASC গঠনে সমালোচনা :

IASC প্রযুক্তিবিদ্যার ওপর গুরুত্ব নিয়ে গড়ে উঠেছিল। ইন্ডিয়ান লিগের নেতারা এই সময় কারিগরিবিদ্যার প্রসার ঘটাতে চেয়েছিলেন। ফলত একটি দ্বন্দ্ব গড়ে উঠেছিল। এ বিষয়ে সেনেট হলে ঐতিহাসিক বিতর্ক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এখানে ফাদার লাঁফো, রাজেন্দ্রলাল মিত্র (প্রযুক্তিবিদ্যার পথিকৃৎ) প্রমুখ বক্তৃতা রাখেন IASC গঠনের পক্ষে। এছাড়া
(i) হিন্দুমেলা IASC গঠনকে সমর্থন করে।
(ii) সতীশচন্দ্র মুখার্জির ‘ডন সোসাইটি’ ও ‘ডন পত্রিকা’ এর জন্য জনমত গড়ে তোলা।
অবশেষে প্রযুক্তিগত দিক থেকে বিজ্ঞানের অগ্রগতির জন্য সরকারি সাহায্য পায় IASC। কিন্তু মহেন্দ্রলাল চেয়েছিলেন দেশীয় মানুষের ব্যায়ভারেই IASC গড়ে উঠবে। তবেই তা জাতীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে।

মূল্যায়ন :

এভাবে IASC গঠনের মাধ্যমে ড. মহেন্দ্রলাল সরকার ঔপনিবেশিক ভারতে বিজ্ঞানচর্চার যে পরিবেশ গড়ে উঠেছিল তা পরবর্তীকালে বাংলায় বিজ্ঞানের অগ্রগতি ঘটিয়েছিল। বিজ্ঞানসাধনায় মহেন্দ্রলাল সরকারের এরকম অবদান থাকায় তাকে ‘জাতীয় বিজ্ঞানচর্চার জনক’ বলে অভিহিত করা হয়।

Rlearn Education