বাংলায় কারিগরি শিক্ষার বিকাশ| মাধ্যমিক ইতিহাস

প্রশ্ন:- বাংলায় কারিগরি শিক্ষার বিকাশের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

ভূমিকা :- উনিশ শতকে বাংলায় আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষা ও বিজ্ঞান শিক্ষার যথেষ্ট অগ্রগতি ঘটে। এর ফলে বাংলায় কারিগরি শিক্ষার মুক্ত প্রসার ও অগ্রগতি শুরু হয়। এই বিষয়ে কয়েকজন ইংরেজ ও ভারতীয়রে উদ্যোগ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ প্রতিষ্ঠা:

বাংলার সর্বপ্রথম উল্লেখযোগ্য কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার রাইটার্স বিল্ডিং-এ প্রতিষ্ঠিত ক্যালকাটা কলেজ অব সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং। কলেজটি ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে শিবপুরে স্থানান্তরিত হয় এবং নতুন নাম হয় ‘বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ।

কারিগরি শিক্ষার প্রসারের দাবি:

উনিশ শতকের শেষ দিকে কংগ্রেস-সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংবাদপত্রগুলিতে কারিগরি শিক্ষার প্রসারের দাবি জানানো শুরু হয়। এর পরিণতি হিসেবে কলকাতায় “অ্যাসোসিয়েশন ফর দি অ্যাডভান্সমেন্ট অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল এডুকেশন’ (১৯০৪ খ্রি.), যাদবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ’ (১৯০৬ খ্রি.) প্রভৃতি গড়ে ওঠে।

বেঙ্গল টেকনিকাল ইন্সটিটিউট:

১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে স্বদেশি আন্দোলনের সময় ব্রিটিশ সরকারের শিক্ষাব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে দেশে জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেই সূত্রেই বাংলায় আইনজীবী তারকনাথ পালিতের প্রচেষ্টায় ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের ২৫ জুলাই কলকাতায় ‘বেঙ্গল টেকনিকাল ইন্সটিটিউট’ নামে কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে।এই প্রতিষ্ঠানে বাংলার বহু শিক্ষিত যুবক কারিগরিবিদ্যা লাভ করে স্বনির্ভর ও স্বাবলম্বী হয়ে ওঠে।

CET :

দেশীয় শিক্ষাব্যবস্থার ব্যাপক প্রসারের উদ্দেশ্যে ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ‘বেঙ্গল টেকনিকাল ইন্সটিটিউট’ ও ‘বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ’ একত্রে মিশে যায়। এর নতুন নাম হয় ‘বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ অ্যান্ড টেকনিকাল স্কুল’। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে এই ঐক্যবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নাম হয় ‘কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি’ বা CET ।এই প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন উদ্যোগ গুলি হল –

(১) জ্ঞানচর্চার শাখা:

CET-এ কলাবিভাগের পাশাপাশি পদার্থবিদ্যা, রসায়ন প্রযুক্তি, শিল্পপ্রযুক্তি প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা হয়।

(২) জার্নাল প্রকাশ:

CET এর ছাত্রছাত্রীরা ‘টেক’ নামে একটি জার্নাল প্রকাশ করে। এই জার্নালের প্রথম সংখ্যাটি তাঁরা স্বদেশি আন্দোলনের যুগের সেই সকল আত্মত্যাগীদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেন যাঁরা জাতীয় শিক্ষার স্বপ্ন দেখেছিলেন।

উপসংহার : ব্রিটিশ শাসক ও শিল্পপতিরা কারিগরি ক্ষেত্রে ভারতীয়দের অদক্ষ বলে মনে করত। এজন্য তারা কারিগরি শিক্ষার পর্যাপ্ত ও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ না করায় বাংলায় কারিগরি শিক্ষার যথার্থ প্রসার ব্যহত হয়। স্বাধীনতার পরে ভারতে কারিগরি শিক্ষার প্রসারে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এর মধ্যে অন্যতম হল ভারতের বিভিন্ন শহর সহ পশ্চিমবঙ্গের খড়গপুরে ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি’ (১৯৫১ খ্রি.)-র প্রতিষ্ঠা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *