ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় বাংলায় কৃষক আন্দোলনের বর্ণনা |

ভারতছাড়ো আন্দোলনে কৃষকদের ভূমিকা | মাধ্যমিক ইতিহাস

ভারত ছাড়ো আন্দোলন পর্বে বাংলায় কৃষক আন্দোলন :

ভূমিকা : ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় বাংলা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনের কেন্দ্রভূমিতে পরিণত হয়েছিল।কংগ্রেসের প্রথম সারির নেতারা কারারুদ্ধ হলেও জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে আঞ্চলিক নেতাদের তত্ত্বাবধানে শহরে এবং গ্রামে আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল। ভারত ছাড়ো আন্দোলনে কৃষকরা ছিল অনেক বেশি প্রত্যয়ী এবং ঐক্যবদ্ধ। সতীনাথ ভাদুড়ীর ‘জাগরী’ উপন্যাসের আমরা কৃষকদের সংগ্রামী ভূমিকা লক্ষ করি।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় বাংলায় কৃষক আন্দোলনের প্রসার :

আন্দোলনের প্রসার : গোটা বাংলা জুড়ে ভারত ছাড়ো আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করেছিল। মেদিনীপুর, বীরভূম, দিনাজপুর, ফরিদপুরে এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল। বীরভূম ও দিনাজপুরের সাঁওতাল উপজাতি ও মুসলিম কৃষিজীবীরা এই আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল। মেদিনীপুরের তমলুকও কাঁথি মহকুমা এবং দিনাজপুরের বালুরঘাটে এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় বাংলায় কৃষক আন্দোলনের চরিত্র :

কৃষক আন্দোলনের চরিত্র :
(১) চরিত্রগত দিক থেকে এই আন্দোলনে বাংলার আদিবাসী সম্প্রদায়, রাজবংশী ও নমঃশূ দ্ররা অংশ নিয়েছিল।
(২) এই আন্দোলনে কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে যোগদান না করার নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও অনেকেই অংশগ্রহণ করেছিল।
(৩) পূর্ববঙ্গের মুসলিম কৃষকদের অনেকেই এই আন্দোলনে অংশ নেয়নি।
(৪) এই আন্দোলনে বহুক্ষেত্রে উচ্চবর্ণের মানুষেরা কৃষকদের প্রতিপক্ষ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনে কৃষক আন্দোলনের মূল কেন্দ্র :
ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় কৃষক আন্দোলনের চারটি মূল কেন্দ্র ছিল যথা-
১) বিহার এবং যুক্তপ্রদেশ এর পূর্ব দিক
২) বাংলার মেদিনীপুর
৩) উড়িষ্যা
৪) মহারাষ্ট্র,গুজরাট।

বিহার: বিহারে কৃষক আন্দোলনের সাংগঠনিক প্রস্তুতি নিয়েছিল কৃষাণ সভা। রাহুল সাংকৃত্যায়ন মন্তব্য করেছেন “প্রতিটি মানুষ তার নিজস্ব নেতা হয়ে উঠেছেন”।
i. মুঙ্গের, গয়া, রেওয়া জেলার কৃষকরা অতিরিক্ত কর বন্ধের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে।
ii. বিহারে ৮০ শতাংশের বেশি পুলিশ চৌকি শাসকের হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিল। দ্রুত কৃষক বিদ্রোহ পশ্চিম বিহারে ছড়িয়ে পড়েছিল। সেখান থেকে বেনারস, বালিয়া জেলায় দশটি থানা আন্দোলনকারীদের দখলে চলে আসে।

উড়িষ্যা: উড়িষ্যাতে কিষান সংঘ এবং প্রজা মণ্ডল গুলির নেতৃত্বে কৃষক আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল।
i. পুরী, কটক, বালেশ্বর এর মত উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে কৃষকরা ‘আসন্ন ধ্বংসের’ গুজবে মেতে ওঠে। প্রকাশ্যে আইন অস্বীকার করে থানা গুলি থেকে বন্দীদের মুক্তি দেওয়া হয়। চৌকিদারি কর দেওয়া বন্ধ করে দেয়,জমিদারদের কাছারি বাড়ি আক্রমণ করে, মহাজনদের কাছ থেকে ধান কেড়ে নেয়।
ii. কোরাপুরে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর লোকেরা খাজনা বন্ধের আন্দোলন শুরু করে।

বাংলা: ভারত ছাড়ো আন্দোলন বাংলায় দিনাজপুর, বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ায়, ছড়িয়ে পড়েছিল তবে মূল কেন্দ্র ছিল মেদিনীপুর।
i. প্রবল জলোচ্ছ্বাসে ১৬ ই ডিসেম্বর প্রায় ১৫ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। অথচ সরকারি উদাসীনতায় সাধারণ মানুষ এবং কৃষকরা তীব্রভাবে আন্দোলনমুখী হয়ে ওঠেন।
ii. সুতাহাটা, নন্দবাজার, গেঁওখালি, চৈতন্যপুর ইত্যাদি স্থানে সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু হয়ে গিয়েছিল।

গুজরাট ও মহারাষ্ট্র: গুজরাটের আমেদাবাদ, রাজকোট, পোরবন্দরে আন্দোলন তীব্র হয়ে উঠেছিল। গুজরাটের সুরাট, খান্দেশ প্রভৃতি জেলায় কৃষকরা গেরিলা আক্রমণ চালায়।সুরাটে কৃষকরা রেলপথ অবরোধ করে রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনে কৃষক আন্দোলনের তীব্রতা :

আন্দোলনের তীব্রতা হ্রাস : ব্রিটিশ সরকারের তীব্র দমননীতির ফলে এই আন্দোলন, ধীরে ধীরে স্তিমিত হয়ে আসে।

উপসংহার : মেদিনীপুরে জাতীয় সরকার গঠিত হলে তাতে বহু কৃষক অংশ নিয়েছিল। ভারত ছাড়ো আন্দোলনের প্রসার বাংলায় কৃষক আন্দোলনের গতি পরিবর্তন করে দিয়েছিল |

Rlearn Education