ভ্রমণের প্রয়োজনীয়তা | ভ্রমণ শিক্ষার অঙ্গ | বাংলা প্রবন্ধ রচনা |Bhromoner Proyojoniota
রচনা সংকেত :
- ভূমিকা
- ভ্রমণের সেকাল
- ভ্রমণের শিক্ষাগত প্রয়োজনীয়তা
- দেশভ্রমণ এবং জাতীয় সংহতি
- দেশভ্রমণের মাধ্যমে বিনোদন
- ভ্রমণের অর্থকরী দিক
- উপসংহার |
ভূমিকা :
মানুষের মধ্যে আদিম কাল থেকেই ভ্রমণের প্রবৃত্তি রয়েছে। একসময় পশু- শিকারের জন্য মানুষ জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াত। তা ছিল তার বাঁচার প্রয়োজনে ভ্রমণ | তারপর নিজের বুদ্ধি আর সাহসকে কাজে লাগিয়ে সেই প্রয়োজন মিটেছে। কিন্তু ভ্রমণ নেশার মতো মিশে গেছে মানুষের রক্তের সঙ্গে।
ভ্রমণের সেকাল :
মধ্যযুগে মানুষ পায়ে হেঁটে, ঘোড়া বা উটের পিঠে চেপে ভ্রমণে বের হত। ভারত তথা পৃথিবীর ইতিহাসে এভাবেই বিখ্যাত হয়ে আছেন মেগাস্থিনিস, ফা-হিয়েন, হিউয়েন সাঙ কিংবা মার্কোপোলো, লিভিংস্টোনরা। আর এদের সেই ভ্রমণের বৃত্তান্ত হয়ে উঠেছে তৎকালীন সমাজ-রাজনীতি- অর্থনীতির এক বিশ্বস্ত দলিল | অজানার সন্ধানে, অচেনাকে চেনার আগ্রহে মানুষের সেই পথ চলা আজও থামেনি।
ভ্রমণের শিক্ষাগত প্রয়োজনীয়তা:
বই পড়ে ছাত্রছাত্রীরা যে জ্ঞান লাভ করে, ভ্রমণের মধ্য দিয়ে তারা সেই জ্ঞানকেই প্রত্যক্ষ করে। ঐতিহাসিক স্থানে ভ্রমণে যেমন উপলব্ধি করা যায় ইতিহাসের গাম্ভীর্যকে, তেমনি প্রকৃতির সান্নিধ্যে ভূগোলের নিবিড় পাঠও সম্ভব। কোনো বিশেষ অঞ্চলের মানুষের জীবনধারা, সংস্কৃতি ইত্যাদির সঙ্গেও পরিচয় ঘটে ভ্রমণের মধ্য দিয়ে।
দেশভ্রমণ এবং জাতীয় সংহতি:
এক অঞ্চলের মানুষ যখন অন্য অঞ্চলে ভ্রমণ করে—সেখানকার জীবনধারার সঙ্গে পরিচিত হয়, স্বাভাবিকভাবেই তৈরি হয় এক ভাবগত ঐক্য| এই ঐক্য জাতীয় সংহতির পথ প্রশস্ত করে। তৈরি হয় বিভিন্ন জাতি ও ধর্মের মানুষের মধ্যে সহমর্মিতার বোধ।
দেশভ্রমণের মাধ্যমে বিনোদন:
একঘেয়ে ক্লান্তিকর জীবনে দেশভ্রমণ নিয়ে আসে মুক্তির স্বাদ | ফলে নতুন উদ্দীপনা ও প্রাণশক্তি অর্জন করা সম্ভব হয়। ছাত্রছাত্রী থেকে সাধারণ মানুষ—সকলের পক্ষেই এর ফলে কাজকর্মে নতুন ভাবে মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হয়। মনের বিকাশে ভ্রমণের ভূমিকা তাই বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
ভ্রমণের অর্থকরী দিক:
বিজ্ঞানের কল্যাণে যাতায়াতের পথ সুগম হওয়ায় পর্যটন আজ এক শিল্পে পরিণত হয়েছে। হোটেল, রেস্তোরাঁ এবং স্থানীয় ভিত্তিতে বিভিন্ন শিল্পদ্রব্য উৎপাদনের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন সম্ভব হচ্ছে। দেশ এই পর্যটন শিল্পের পৃষ্ঠপোষকতা করে বৈদেশিক মুদ্রা রোজগার করছে।
উপসংহার:
দেশভ্রমণ মনকে উদার ও প্রসারিত করে। ভ্রমণের মাধ্যমে পাঠ্যপুস্তকে পড়া ইতিহাস, ভূগোল চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে ওঠে। গন্ডিবদ্ধ জীবনের বাইরে যে বিপুল পৃথিবী রয়েছে তার সঙ্গে পরিচিত করায়। এককথায় একজন মানুষ যে বিরাট পৃথিবীর অন্তর্গত এই ধারণার জন্ম দেয়। এখানেই দেশভ্রমণের সার্থকতা ও প্রয়োজনীয়তা।