বিজ্ঞান চর্চায় কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ ও বসু বিজ্ঞান মন্দিরের অবদান

প্রশ্ন:- বিজ্ঞান চর্চায় কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ ও বসু বিজ্ঞান মন্দিরের অবদান আলোচনা কর |Model Activity Task 2020

উত্তর :

বিজ্ঞানচর্চায় কলকাতা বিজ্ঞান কলেজের ভূমিকা:

বাংলায় স্বদেশী বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে কলকাতা বিজ্ঞান কলেজের ভূমিকা ছিল নিম্নরূপ। –

ভূমিকা :- লর্ড কার্জনের বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় বয়কট আন্দোলন অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এই সময় স্বদেশী বিজ্ঞানচর্চার প্রসার ঘটানোর উদ্দেশ্যে শিক্ষাদরদি স্যার তারকনাথ পালিত ও স্যার বাসবিহারী ঘোষ ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।

মৌলিক গবেষণা: কলকাতা বিজ্ঞান কলেজের শিক্ষার্থী ও গবেষকরা সক্রিয় সহযোগিতা পেয়ে বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় মৌলিক গবেষণার কাজ করার সুযোগ পান, যার ফলে বিজ্ঞানচর্চার যথেষ্ট মানোন্নয়ন ঘটে।

খ্যাতনামা শিক্ষার্থী: কলকাতা বিজ্ঞান কলেজে পড়াশোনা এবং বিজ্ঞানসাধনা করে বহু শিক্ষার্থী পরবর্তীকালে বিশ্বে খ্যাতি অর্জন করেছেন। এদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখ- যোগ্য ছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ বসু, মেঘনাদ সাহা, জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ, জ্ঞানেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।

খ্যাতনামা শিক্ষক:সেই যুগের বহু স্বনামধন্য শিক্ষক ও বিজ্ঞানী কলকাতা বিজ্ঞান কলেজে শিক্ষাদান করেন। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, স্যার চন্দ্রশেখর ভেঙ্কটরমন, শিশিরকুমার মিত্র প্রমুখ।

শিক্ষকদের উদ্যোগ: কলকাতা বিজ্ঞান কলেজের বিভিন্ন শিক্ষক দেশ ও সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। শিক্ষক আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় ‘বেঙ্গল কেমিক্যালস’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশের যুবসমাজকে সরকারি চাকরির মুখাপেক্ষী না থেকে স্বনির্ভর হতে উৎসাহিত করেন। বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু এবং মেঘনাদ সাহা স্বাধীন ভারতে জাতীয় পরিকল্পনা কমিশনে যুক্ত থেকে দেশ গঠনের কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

উপসংহার :- ঔপনিবেশিক আমলে কলকাতা বিজ্ঞান কলেজদেশীয় চর্চার ক্ষেত্রে এক নবযুগের সূচনা করে। বিশিষ্ট অধ্যাপকদের উপস্থিতিতে এবং কৃতী ছাত্রদের সাফল্যে এই প্রতিষ্ঠানের খ্যাতি পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।

বিজ্ঞানচর্চায় বসু বিজ্ঞান মন্দিরের অবদান:

বাংলা তথা ভারতে আধুনিক বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে বসু বিজ্ঞান মন্দিরের অবদান ছিল নিম্নরূপ। –

ভূমিকা :- ভারতে আধুনিক বিজ্ঞানচর্চা ও বিজ্ঞান শিক্ষার বিকাশের উদ্দেশ্যে যেসকল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে সেগুলির মধ্যে অন্যতম হলআচার্য জগদীশচন্দ্র বসু প্রতিষ্ঠিত বসু বিজ্ঞান মন্দির বা বোস ইন্সটিটিউট।

বিভিন্ন শাখা: বসু বিজ্ঞান মন্দিরে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নবিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা, পরিবেশ বিজ্ঞান প্রভৃতি বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার চর্চা ও গবেষণার ব্যবস্থা করা হয়।

উন্নত গবেষণা: জগদীশচন্দ্র বসু তাঁর প্রতিষ্ঠিত বসু বিজ্ঞান মন্দিরে বিশ্বমানের উন্নত গবেষণার ব্যবস্থা করেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থের একটি বড়ো অংশ এখানে ব্যয় করেন। গবেষণার প্রয়োজনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও জগদীশচন্দ্র বসুকে অর্থ সাহায্য করেন।

ক্রেসকোগ্রাফ আবিষ্কার: বসু বিজ্ঞান মন্দিরে দীর্ঘ গবেষণার পর জগদীশচন্দ্র বসু ক্রেসকোগ্রাফ যন্ত্রটি আবিষ্কার করেন। এই যন্ত্রের সাহায্যে তিনি প্রমাণ করেন, প্রাণীদের মতো উদ্ভিদেরও প্রাণ এবং অনুভূতি শক্তি আছে। এখানকার গবেষণার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফল হল জগদীশচন্দ্র বসু কর্তৃক রেডিয়ো আবিষ্কার যা বর্তমানে বিশ্বের বিজ্ঞান গবেষণার ক্ষেত্রে বিশেষ স্বীকৃতিলাভ করেছে।

আন্তর্জাতিক খ্যাতি: বাংলা তথা ভারতের বিজ্ঞান বিষয়ক গবেষণা ও বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে বসু বিজ্ঞান মন্দিরের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বিজ্ঞানচর্চায় বসু বিজ্ঞান মন্দিরের অবদান আন্তর্জাতিক খ্যাতি পেয়েছে। এখানকার গবেষকগণ পরবর্তীকালে ভারত তথা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বিজ্ঞানচর্চায় খ্যাতি অর্জন করেছেন।

উপসংহার :- ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে ‘বসু বিজ্ঞান মন্দির’ প্রতিষ্ঠার মধ্যে দিয়ে ভারতে আধুনিক বিজ্ঞান গবেষণার দ্বার উন্মোচিত হয়। আধুনিক গবেষণাগারে জগদীশচন্দ্র বসুর ‘ক্রেসকোগ্রাফ’ যন্ত্র আবিষ্কার এই প্রতিষ্ঠানকে গৌরবান্বিত করেছে।

Rlearn Education