বিশ্ব উষ্ণায়নের উল্লেখযোগ্য প্রভাব : মাধ্যমিক ভূগোল

বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব :

মানবসৃষ্ট দূষণ এবং বনভূমি উজাড় করার ফলে বায়ুমন্ডলে গ্রিন হাউস গ্যাসের পরিমাণ আশঙ্খাজনিতভাবে বেড়ে গেছে। এর ফলে বিকিরিত তাপশক্তি পুনরায় বায়ুমন্ডলে ফিরে যাওয়ার পথে বাধাগ্রস্থ হয় এবং এভাবেই বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা বিশ্ব উষ্ণায়ন বা Global warming নামে পরিচিত।

বিশ্ব উষ্ণায়নের উল্লেখযোগ্য প্রভাবগুলি হল—
[1] জলবায়ু পরিবর্তন:

পৃথিবীর উষ্ণতা ক্রমশ বেড়ে যাওয়ার জন্য শীতের তুলনায় গ্রীষ্মের তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, প্রায় প্রতিটি ঋতুর আগমন অনিয়মিত ও বিলম্বিত হচ্ছে, ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা ও তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং খরার প্রাদুর্ভাব বাড়ছে।


[2] হিমবাহের মাত্রাতিরিক্ত গলন:

ভূমণ্ডলের উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ার জন্য অ্যান্টার্কটিকা ও গ্রিনল্যান্ডের অসংখ্য হিমবাহ ও বিশালাকৃতি বরফের চাদর (Ice Sheet) সহ পৃথিবীর বিভিন্ন পার্বত্য হিমবাহ গলে যাওয়ার জন্য ক্রমশই সংকুচিত হচ্ছে অর্থাৎ এদের আয়তন হ্রাস পাচ্ছে। যেমন—হিমালয়ের গঙ্গোত্রী, যমুনোত্রী প্রভৃতি হিমবাহ |
[3] নদনদীতে জলের পরিমাণ হ্রাস:

পার্বত্য হিমবাহগুলি ক্রমশ সংকুচিত হওয়ার ফলে হিমবাহসৃষ্ট নদনদীতে জলের পরিমাণ ক্রমশ কমে আসছে। এর ফলে গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, সিন্ধু প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ নদনদী ধীরে ধীরে ক্ষীণকায় হতে থাকবে এবং তার ফলে ভারত, চিন, পাকিস্তান, বাংলাদেশ সহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে জলাভাব জনিত নানা ধরনের সমস্যা ভয়ংকর রূপ নেবে।

[4] সমুদ্র জলতলের উচ্চতা বৃদ্ধি:

মেরু অঞ্চল এবং পার্বত্য অঞ্চলের হিমবাহ দ্রুত গলে যাওয়ার জন্য সমুদ্রের জলতলের উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে। বিগত শতাব্দীতে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা 0.9°সে বৃদ্ধির জন্য সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রায় 10-12 সেমি বেড়ে গেছে। এজন্য সমুদ্র উপকূলের নীচু অংশগুলি জলমগ্ন হওয়ার আশঙ্কা আছে।

[5] অধঃক্ষেপণের প্রকৃতি পরিবর্তন:

বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বাষ্পীভবনের হার ও বায়ুর জলীয় বাষ্প ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি, তুষারপাত ইত্যাদির তীব্রতা বেড়েছে। অধঃক্ষেপণের বণ্টনে যথেষ্ট অস্বাভাবিকতা সৃষ্টি হয়েছে, অর্থাৎ শুষ্ক অঞ্চলগুলিতে বন্যা এবং আর্দ্র অঞ্চলগুলিতে খরা দেখা দিচ্ছে।

Rlearn Education