আলোচ্য বিষয় :
বসু বিজ্ঞান মন্দিরের অবদান কীরূপ ?
উত্তর :
ভূমিকা : ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু ‘বসু বিজ্ঞান মন্দির’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। প্রধানত জীব ও জড় বস্তুগুলির বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করা ছিল এর অন্যতম উদ্দেশ্য। এটি Bose Institute নামেও পরিচিত ছিল
প্রতিষ্ঠাঃ ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে জগদীশ চন্দ্র বসু প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপকের পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে বসু বিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। বিজ্ঞানের নির্দিষ্ট শাখায় মৌলিক গবেষণা করার জন্য তিনি এটি প্রতিষ্ঠা করেন।
পাঠ্য বিষয় : এখানে পদার্থবিদ্যা,রসায়নবিদ্যা ছাড়াও Microbiology, Biochemistry, Biophysics, পরিবেশবিদ্যা, Animal Physiology, প্রভৃতি বিষয়গুলি নিয়ে গবেষণার সুযোগ আছে। এমনকি এখানে মহাকাশবিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা ও পড়াশোনা করা যায়।
অবদান : ‘বসু বিজ্ঞান মন্দির’ বিভিন্ন বিষয়ে তার অবদান রেখেছে যেমন-
(1) কলেরার টীকা আবিষ্কারে এদের অবদান অনস্বীকার্য (শম্ভুনাথ দে)।
(2) উদ্ভিদের যে প্রাণ আছে তার প্রমাণে প্রতিষ্ঠানটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। (জগদীশচন্দ্রের কেসক্রোগ্রাফ)
(3) আধুনিক মলিকিউলার বায়োলজির সূচনা এখানেই প্রথম হয়।
(4) আয়োনোসিটিয়াল ফসফেট চক্রের আবিষ্কার এখানে হয়েছে।
(5) জগদীশচন্দ্র বসুর বহু পাণ্ডুলিপি এখানকার মিউজিয়াম আছে যেখানে কৃতি গবেষকরা গবেষণার সুযোগ পেয়েছে যেমন—এখান থেকে এস. এস. ভাটনগর পুরস্কার, হোমি জাহাঙ্গির ভাবা ফেলোশিপ প্রভৃতি এখানকার গবেষকরাই পায়।
অর্থ সাহায্য : প্রাথমিক পর্বে জগদীশচন্দ্র বসু তার পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করে এই প্রতিষ্ঠানটি তৈরি করেন। কিন্তু নবম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় এই প্রতিষ্ঠানটিকে ৩০ কোটি টাকার তহবিল দান করা হয়।
উপসংহার : বিজ্ঞানের মৌলিক গবেষণা ও একটি স্বাস্থ্য সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বসু বিজ্ঞান মন্দির উল্লেখযোগ্য ছাপ রেখেছে বিজ্ঞানের গবেষণা ও প্রসারে তাই এর অবদানকে আমাদের ভুললে চলবে না।
চিকিৎসা ক্ষেত্রে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অবদান লেখো।
উত্তর :
ভূমিকা : ভারতবর্ষে চিকিৎসাবিদ্যার ইতিহাস কুষাণ যুগের দুই চিকিৎসক চরক ও সুশ্রুত ছিলেন উল্লেখযোগ্য চিকিৎসাবিদ্যার ইতিহাসে একটি মাইলস্টোন যা ১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দে তৈরি হয়, শুধু ভারতবর্ষের নয় আধুনিক চিকিৎসার
গুপ্ত যুগের ধন্বন্তরির নামও জানা। মধ্য ও প্রাচীন যুগে গাছগাছড়া থেকে ভেষজ ওষুধ তৈরি হত। তবে আধুনিক ইতিহাসে এটি এশিয়ার প্রাচীনতম চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান।
উদ্দেশ্য :
কোম্পানির শাসন যখন চলছিল তখন বহু সৈন্য গুরুতর আহত হত, তাদের জন্য ভালো চিকিৎসার প্রয়োজন ছিল। তা ছাড়া ব্রিটিশ কর্মচারীদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের প্রয়োজন ছিল। এই উদ্দেশ্যকেই সামনে রেখে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের চিন্তা করা হয়।
ভাতার মাধ্যম :
প্রাচ্য বিদ্যা বিশারদ ড. টাইটলার চেয়েছিলেন এদেশীয় ভাষায় পশ্চিমি ধারার চিকিৎসা বিদ্যার শিক্ষা দেওয়া হোক। কিন্তু আলেকজান্ডার ডাফ চেয়েছিলেন পশ্চিমি শিক্ষা ইংরেজি ভাষার মাধ্যমে দেওয়া উচিত।
বেন্টিক কর্তৃক কমিটি গঠন :
লর্ড উইলিয়াম বেন্টিক ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে কমিটি গঠন করলেন যা ১৮৩৪ খ্রিস্টাব্দে চিকিৎসাবিদ্যা সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন পেশ করে। কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দের ২৪ শে জানুয়ারি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষিত হয়। আর সেই কলকাতায় পূর্বে তিনটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার কথা ঘোষণা করা হয়।
ভরতির যোগ্যতা :
প্রতিষ্ঠাবর্ষে ৫০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে মেডিক্যাল কলেজের যাত্রা শুরু হয়। ১৪-২০ বছর বয়সি ছাত্রকে ভরতির অনুমতি দেওয়া হত। প্রতি – মানে ছাত্ররা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বৃত্তি পেত। প্রথম বছরের তুলনায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষে বৃত্তি বৃদ্ধি করা হয়।
পাঠ্য বিষয় : প্রাথমিক পর্বে Anatomy, Surgery-ঔষধ প্রয়োগ ও ঔষধ তৈরি বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া হত। এ ছাড়া হাতেকলমে শেখার জন্য ছাত্রদের General Hospital ঘুরে ব্যাধি সম্পর্কে সচেতন করা হত।
অধ্যাপকবৃন্দ :
১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে ১ জুন কলকাতা মেডিক্যাল ক্লাস শুরু হয়। এর প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন জে. এম. ব্রামলি। এ ছাড়া টমাস স্পেনসন উক্ত কলেজের প্রথম দিবাকর শিক্ষক ছিলেন। ভারতীয় শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন নবকৃষ্ণ গুপ্ত ও মধুসূদন গুপ্ত। তবে মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠায় ডেভিড হেয়ারের নাম বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। তবে এটাও ঠিক মেডিক্যাল কলেজের উন্নতি কল্পে দ্বারাকানাথ ঠাকুর ২০০০ টাকা দান করেছিলেন। ইতিহাস থেকে জানা যায়, বর্ধমানের রাজাও বেশ কিছু সাহায্য দেন, ডেভিড হেয়ার এই কলেজেও সচিবও ছিলেন। তার মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তিনি এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বেন্টিকের শাসনকালে এই প্রতিষ্ঠান তৈরি হলেও যখন ক্লাস শুরু হয় তখন রাজা ও গভর্নর জেনারেল ছিলেন চার্লস মেটাকাফ।
উপসংহার :
১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দে চিকিৎসাবিদ্যার ইতিহাসে স্মরণীয় কারণ এই বছর মধুসূদন গুপ্ত কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ প্রথম শবচ্ছেদ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন যা তৎকালীন পরিবেশে অপরিকল্পনীয় ছিল। মধুসূদন গুপ্তের এই সাহসী পদক্ষেপকে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ থেকে তোপধ্বনি দ্বারা স্বাগত জানানো হয়। এভাবে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ আমাদের দেশের চিকিৎসা বিদ্যাকে এক নতুন মাত্রা এনে দেয়। তাই ভারতীয় চিকিৎসা বিদ্যার ইতিহাসে এই কলেজের অবদান অতুলনীয়।
[…] আরও দেখো : বসুবিজ্ঞান মন্দির ও কলকাতা মেডিক্যাল… […]