সমাজসংস্কার আন্দোলনে ব্রাহ্মসমাজের ভূমিকা : মাধ্যমিক ইতিহাস
প্রশ্ন:- উনিশ শতকের বাংলায় সমাজসংস্কার আন্দোলনে ব্রাহ্মসমাজ গুলির কীরূপ ভূমিকা ছিল ? (MP 2018)
ভূমিকা :- রাজা রামমোহন রায় -এর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ব্রাহ্রসমাজ ছিল উনিশ শতকে বাংলা তথা ভারত -এর ধর্ম ও সমাজসংস্কার আন্দোলনের পথিকৃৎ। ব্রাহ্রসমাজ একেশ্বর- বাদের কথা প্রচার করে। ব্রাহ্মসমাজ বোঝাতে আদি ব্রাহ্মসমাজ, ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ, সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ, নববিধান ব্রাহ্মসমাজ প্রভৃতিকে বোঝায়। রামমোহনের মৃত্যুর পরবর্তীকালে ব্রাহ্মসমাজের নেতৃত্ব দেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, কেশবচন্দ্র সেন প্রমুখ।
কুসংস্কারের বিরোধিতা ও যুক্তিবাদী চিন্তাধারার প্রসার: ব্রাহ্মসমাজ ভারতীয় সমাজে প্রচলিত নানা কুসংস্কারের যেমন বিরোধিতা করেছিল, তেমনি মানুষের মধ্যে যুক্তিবাদী চিন্তাধারার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
জাতিভেদপ্রথা ও ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরোধিতা: ব্রাহ্মসমাজ হিন্দুসমাজের জাতিভেদপ্রথা ও ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরোধিতা করে। হিন্দুধর্মের নামে নানা প্রচলিত কুপ্রথার প্রতিরোধে ব্রাহ্মসমাজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
আধুনিকতা: পশ্চাদপদ হিন্দু সমাজের অগ্রগতির জন্য ব্রাহ্মসমাজ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে। শিক্ষার প্রসার, নারী স্বাধীনতা, নারীর মর্যাদা, মদ্যপান নিবারণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে ব্রাহ্ম সমাজের আন্দোলন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
নারীকল্যাণে ভূমিকা: ব্রাহ্মসমাজ নারীকল্যাণের জন্য নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। যেমন – পর্দাপ্রথার বিলুপ্তিসাধন, বিধবাবিবাহের আইনসিদ্ধকরণ, বহুবিবাহ নিষিদ্ধকরণ, নারীসমাজে শিক্ষার প্রচলন প্রভৃতি।
তিন আইন: ব্রাহ্মসমাজের আন্দোলনের ফলে সরকার ‘তিন আইন’ নামে একটি আইন পাস করে। এই আইনের দ্বারা বাল্যবিবাহ ও বহু বিবাহ নিষিদ্ধ হয় এবং বিধবা বিবাহ ও অসবর্ণ বিবাহ আইন সিদ্ধ হয়।
সুমহান আদর্শ: ব্রাহ্মসমাজ ব্যক্তি স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, ঐক্য প্রভৃতি সুমহান আদর্শ সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচার করে জাতীয় জীবনে নতুন প্রাণের সঞ্চার করে। ডক্টর এ আর দেশাই বলেছেন যে, “ব্রাহ্মসমাজ ছিল জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের পথিকৃৎ।”
সমাজসেবা: ব্রাহ্মসমাজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টা ছিল সমাজসেবা ও জনহিতকর কাজের মাধ্যমে জাতীয়তাবাদী আদর্শ প্রতিষ্ঠা। যেমন – দুর্ভিক্ষের সময় কেশবচন্দ্র সেন একদল বাঙালি তরুণকে নিয়ে ত্রাণের এক দৃষ্টান্ত রেখেছিলেন।
উপসংহার :- বিংশ শতাব্দীতে যে প্রধান ঘটনাগুলি ভারতীয় ইতিহাসের ধারাকে প্রভাবিত করেছিল, তার সবগুলিরই বীজ ব্রাহ্মসমাজ বপন করে গিয়েছিল। তাই উনিশ শতকে ব্রাহ্মসমাজের আন্দোলনকে ভারতের ইতিহাসের একটি কেন্দ্রীয় ঘটনা হিসাবেই দেখা হয় ও বিশ্লেষন করা হয়ে থাকে।