ছাত্রজীবন এবং খেলাধুলা | ছাত্রজীবনে খেলাধুলার গুরুত্ব | ছাত্রজীবনে খেলাধুলার ভূমিকা | ছাত্রজীবনে খেলাধুলার উপযোগিতা | মাধ্যমিক বাংলা রচনা

রচনা সংকেত :
- ভূমিকা
- খেলাধুলায় শরীরচর্চার উপযোগিতা
- খেলাধুলা ও বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধ
- শৃঙ্খলাবোধের জাগরণ
- চরিত্রগঠনে সহায়ক
- খেলাধুলা ও শিক্ষা
- উপসংহার |
ভূমিকা: শরীর ও মনের যৌথ প্রচেষ্টাই আগামীর সুখসমৃদ্ধির মূল চাবিকাঠি। সুঠাম-সবল দেহই হয়ে ওঠে সমৃদ্ধিশালী—তাই ‘চাই বল, চাই স্বাস্থ্য, আনন্দ উজ্জ্বল পরমায়ু, সাহস বিস্তৃত বক্ষপট।’ খেলাধূলার মাধ্যমে জীবনের বিকাশ ঘটে, মানসিক উন্নতি ঘটে।
মানবসভ্যতার ক্রমবিবর্তনের অপরিহার্য দলিল এই খেলাধুলা।
খেলাধুলায় শরীরচর্চার উপযোগিতা :
খেলাধুলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতার মূলে থাকে ক্রীড়া- বিদের অদম্য ক্ষমতা, দুর্বার মনোবল—যা গড়ে তুলতে প্রয়োজন নিয়মিত শরীরচর্চা, ব্যায়াম, অঙ্গসঞ্চালন। আর বাল্য বা কৈশোরই শরীর গঠনের প্রকৃষ্ট সময়। সুস্থ শরীরে বিরাজ করে সুস্থ মন, অফুরন্ত প্রাণশক্তি। যা মানুষকে জীবনে কর্মঠ ও দৃঢ় করে তোলে।
খেলাধুলা ও বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধ :
প্রতিযোগিতা, প্রতিদ্বন্দ্বিতার সূত্রে হলেও খেলার মাধ্যমে সমগ্র বিশ্ব একসূত্রে বাঁধা পড়ে। বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধ জাগরণের প্রধান উৎস খেলাধুলা। জয়পরাজয়ের অঙ্ক-হিসাব নয়, প্রতিযোগিতার আন্তরিকতায়, উন্নতমানের ক্রীড়াকৌশলে, হাজার হাজার মানুষের মন জয় করে নেয় খেলোয়াড়রা। দেশের মাটিতে বিদেশের খেলোয়াড়রা খেলতে এলে সমগ্র বিশ্বের মধ্যে ঐক্য গড়ে ওঠে। এর ফলে একাধিক দেশের সংস্কৃতি ও কৃষ্টির মিলন ঘটে। এই ঐক্য সঞ্চারিত হয় ছাত্র জীবনে।
কোনো একক ব্যক্তি মাত্র নয়, দেশ ও জাতির উন্নতির মুখ্য শর্তই হল শৃঙ্খলাবোধ। ক্রীড়া- ক্ষেত্রই হল সেই শৃঙ্খলাবোধের কেন্দ্র, যা ব্যক্তিচরিত্র গঠনে সহায়ক হয়ে ওঠে। উন্নত ব্যক্তিচরিত্র উন্নত সমাজ উন্নত দেশ গঠন করে।
খেলা মানুষকে শিষ্টাচার ও সংযমের শিক্ষা দেয়। তাকে চারিত্রিকভাবে সুদৃঢ় ও বলিষ্ঠ করে গড়ে তোলে। তাকে একাগ্র, সহিষ্নু মহানুভব করে তোলে। খেলার হার -জিত মানুষকে ব্যক্তিগত জীবনের ওঠা পড়া মেনে নিতে শেখায়। তাই বলা যায়, ক্রীড়াক্ষেত্র মানুষের চরিত্রগঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
শিক্ষা জীবিকা অর্জনের নিছক শর্ত মাত্র নয়। শিক্ষা সমগ্র জাতির অগ্রগতির ভিত্তি, মানুষের প্রতিভা বিকাশের ক্ষেত্র।দেহ-মনের সুশৃঙ্খল সামঞ্জস্যবিধানেই যথার্থ শিক্ষা অর্জিত হয়। খেলাধুলার আনন্দস্পর্শে দেহ- মন হয়ে ওঠে সজীব, প্রাণময়। তাই বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে খেলাধুলার নিবিড় যোগ। দৈনন্দিন জীবনের একঘেয়েমিকে ক্রীড়াক্ষেত্র সতেজ করে তোলে। শিক্ষার প্রতি একাগ্র, একনিষ্ঠ করে তুলতে শিক্ষা – ক্ষেত্রে খেলাধুলার ভূমিকা অনস্বীকার্য।
খেলাধুলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতার মনোভাব মানুষকে যুদ্ধজয়ের কৌশল শেখায়। মনের সংকীর্ণতা – কে দূর করে সহিষ্নু করে তোলে। সফলতা- ব্যর্থতায় গড়ে তোলে সুশৃঙ্খল জীবনবোধ। একজন সফল ক্রীড়াবিদ একজন দেশ নায়কের সম্মানে ভূষিত হন। খেলার ময়দান সাধনার ক্ষেত্রস্বরূপ। খেলাধুলাই শেখায় জীবনপথের সকল বাধা জয় করে আগামী দিনে জয়ী হতে। বর্তমানে যে রাজনীতি ক্রীড়াক্ষেত্রকে প্রতিমুহূর্তে কলুষিত করে চলেছে, সেই সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে প্রকৃত খেলাধুলার আদর্শ স্থাপন করতে হবে। তবেই দেশ তার হারানো মর্যাদা ফিরে পাবে।