পরিবেশ, তার সম্পদ এবং তাদের সংরক্ষণ | মাধ্যমিক

পরিবেশ, তার সম্পদ এবং তাদের সংরক্ষণ : প্রথম পর্ব

আজকের পোষ্টে, মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের পঞ্চম অধ্যায় থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন আলোচনা করা হয়েছে | এই প্রশ্নগুলি ভালোভাবে করে রাখলে তোমাদের যথেষ্ট উপকার হবে |

প্রশ্ন : ভারতীয় একশৃঙ্গ গন্ডারের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য দুটি সংরক্ষণ সংক্রান্ত পদক্ষেপ প্রস্তাব করো | (মাধ্যমিক 2017)

উত্তর : ভারতীয় একশৃঙ্গ গন্ডারের সংখ্যা বাড়ানোর উপায় হল—

i) খাদ্য, জল ও প্রজননের সঠিক ব্যবস্থা নিতে হবে |

ii) চোরা শিকারীদের হাত থেকে তাদের রক্ষা করার জন্য গন্ডার প্রকল্প গড়ে তুলতে হবে |

iii) বিভিন্ন রোগের হাত থেকে গন্ডারদের বাঁচাতে হবে |

প্রশ্ন : মিষ্টি জলের উৎসগুলি কী কী ভাবে দূষিত হয় —- তোমার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে মতামত জানাও | মাধ্যমিক 2017

উত্তর : i) জমিতে ব্যবহৃত DDT, অ্যালড্রিন ইত্যাদি কীটনাশক ও রাসায়নিক সার বৃষ্টির জলের সাথে মিশে নদীতে বা পুকুরের জলের সঙ্গে মিশে মিষ্টি জল দূষণ ঘটায় ।

২। গৃহস্থলীর নোংরা আবর্জনা,পুকুরের জলে মিশে জল দূষণ ঘটায় ।

৩। কলকারখানার গরম জল নদীতে মিশে জল দূষণ ঘটায়।

৪। নোংরা জলে ক্ষতিকর জীবাণু থাকে, যা
জলদূষণ ঘটায় ।

প্রশ্ন : জীবজ নাইট্রোজেন আবদ্ধকরণে অংশগ্রহণকারী দুটি জীবাণুর নাম লেখো | মাধ্যমিক 2017

উত্তর : রাইজোবিয়াম এবং ক্লসট্রিডিয়াম |

প্রশ্ন : অ্যাসিড বৃষ্টির দুটি ক্ষতি লেখো | মাধ্যমিক 2017

উত্তর : i) মানবদেহে অ্যাজমা, ব্রংকাইটিস জাতীয় রোগের সৃষ্টি |

ii) স্মৃতিসৌধের ক্ষয় হয়, যা স্টোন ক্যানসার নামে পরিচিত |

প্রশ্ন : জীববিবর্ধনের জন্য দায়ী একটি কীটনাশকের নাম লেখো |

উত্তর : DDT

প্রশ্ন : সিউডোমোনাস জীবাণুটি নাইট্রোজেন চক্রের কোন ধাপের সঙ্গে যুক্ত | (মাধ্যমিক 17 )

উত্তর : ডিনাইট্রিফিকেশন |

প্রশ্ন : রেড পান্ডা বিপন্নতার দুটি কারণ লেখো |

উত্তর : (i) বাসস্থান বিনাশ ও খাদ্যাভাস: বনজ কাঠ, বাঁশ সংগ্রহ ও কৃষিজমি প্রসারণের ফলে রেড পান্ডার বাসস্থান হ্রাস পাচ্ছে। এছাড়া এদের প্রধান খাদ্য বাঁশ গাছের পাতা। বাসস্থান ও বাঁশগাছের পরিমাণ হ্রাস পাওয়ায় রেড পান্ডা বিপন্ন হচ্ছে।

(ii) চোরাশিকার : রেড পান্ডার রোমযুক্ত চামড়া থেকে সুন্দর শৌখিন টুপি, ব্যাগ, পোশাক প্রভৃতি তৈরি হয়। তাই চামড়া
সংগ্রহের উদ্দেশ্যে চোরাশিকারের কারণে রেড পান্ডার সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে।


প্রশ্ন : মানব জীবনে জলদূষণের ক্ষতিকর প্রভাব লেখো |
উত্তর : (i) জলদূষণের ফলে জলবাহিত রোগ যেমন কলেরা, টাইফয়েড, আমাশয়, জন্ডিস ইত্যাদি রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। এছাড়াও নানাপ্রকার চর্মরোগ দেখা যায়।
(ii) জলাশয়ে ফসফেট, ডিটারজেন্ট মিশে যাওয়ায় ইউট্রফিকেশন দেখা যায়। বিভিন্ন কীটনাশক ও আগাছানাশকে উপস্থিত আর্সেনেট যেটা জলে মিশে, আর্সেনিক দূষণ ঘটায় যা মানব স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক।

প্রশ্ন : হটস্পট নির্ধারণের শর্তসমূহ লেখো |

উত্তর :
(i) 1500টির বেশি এন্ডেমিক প্রজাতির উদ্ভিদ উপস্থিত থাকতে হবে।
(ii) প্রাথমিক উদ্ভিদ গোষ্ঠীর 70% বিনষ্ট হয়ে মাত্র 30% অবশিষ্ট থাকতে হবে।
(iii) প্রাণীবৈচিত্র্য অধিক পরিমাণে থাকতে হবে এবং অধিকাংশ প্রাণী যেন এন্ডেমিক প্রজাতির হয়।

প্রশ্ন : জীববিবর্ধন কাকে বলে ? জীববিবর্ধন কীভাবে ঘটে তা একটি উদাহরণের সাহায্যে দেখাও |

উত্তর : অভঙ্গুর রাসায়নিক পদার্থ খাদ্য- শৃঙ্খলের মাধ্যমে জীবদেহে পরিমাণ বৃদ্ধির ঘটনাকে জীববিবর্ধন বলে।

যেমন : অভঙ্গুর DDT খাদ্যশৃঙ্খলে প্রবেশের ফলে খাদ্যশৃঙ্খলের পুষ্টিস্তরে DDT এর জীববিবর্ধনের রেখাচিত্র নীচে দেখানো হল—

জলে দ্রবীভূত DDT (0.01 ppm)→
ফাইটোপ্ল্যাংকটন DDT (0.024 ppm) → জুপ্ল্যাংকটন DDT (0.123 ppm) → মাছের দেহে DDT (0.01-12 ppm) → মৎস্যভূক পাখির দেহে DDT (100 ppm) |

প্রশ্ন : নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে অম্লবৃষ্টির প্রভাব লেখো : a) মৃত্তিকার ওপর প্রভাব b) উদ্ভিদের ওপর প্রভাব c) মানব স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব |

উত্তর : 1. মৃত্তিকার ওপর প্রভাব : অ্যাসিড বৃষ্টি মৃত্তিকার প্রভূত ক্ষতিসাধন করে। কিছু অণুজীব মৃত্তিকার pH এর পরিবর্তন সহ্য করতে না পেরে মারা যায়। অ্যাসিডের প্রভাবে অণুজীবদের উৎসেচক নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে।

2. গাছপালার ওপর প্রভাব : অ্যাসিড বৃষ্টি মৃত্তিকার পাশাপাশি অরণ্য ও গাছপালারও ক্ষতিসাধন করে। গাছের পাতা ঝরে পড়ে এবং গাছ শুকিয়ে যায়। খাদ্য শস্যগুলির ওপর জীবসার এবং চুন প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের অ্যাসিড বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব। শস্যখেতে লাইমস্টোন প্রয়োগ করে মৃত্তিকার উর্বরতা বৃদ্ধি করা হয় এবং pH এর মাত্রাও স্থায়ী করা হয়।

3. মানব স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব : মানব স্বাস্থ্যের ওপর অ্যাসিড বৃষ্টি সরাসরি প্রভাব বিস্তার করে না। বৃষ্টির জলে অ্যাসিড অত্যন্ত লঘুমাত্রায় থাকে। সালফার- ডাই- অক্সাইড ও নাইট্রোজেন অক্সাইডের উপাদানগুলি অ্যাসিড বৃষ্টির মধ্যে থাকে। সেই সকল উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে মানবদেহে হৃৎপিণ্ড বা ফুসফুসজনিত রোগ লক্ষণ দেখা যায়। তা ছাড়া অ্যাজমা বা ব্রংকাইটিস রোগের লক্ষণও দেখা যায়।

প্রশ্ন : মানুষের ক্রিয়াকলাপের ফলে নাইট্রোজেন চক্র ব্যাহত হচ্ছে— দুটি ঘটনা উল্লেখ করে এর যথার্থতা প্রমাণ করো | মাধ্যমিক 2018

উত্তর : মানুষের নানা ক্রিয়াকলাপের জন্য বিশেষ করে নাইট্রোজেন ঘটিত সার অধিক পরিমাণে ব্যবহার করার ফলে জীবজগৎ,
মাটি, জল ও বায়ুমণ্ডলের মধ্যে আবর্তিত নাইট্রোজেনের পরিমাণ বহুগুণ বেড়ে চলেছে। এর ফলে যেসব ঘটনাগুলি ঘটে চলেছে তা হল-

(i) নাইট্রাস অক্সাইড (N2O) : একটি শক্তিশালী গ্রিনহাউসগ্যাস ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। এ ছাড়া নাইট্রোজেনের অন্যান্য অক্সাইডগুলির স্থানভিত্তিক ঘনত্ব বেড়ে গেছে।
ফলে বায়ুদূষণের সম্ভাবনা এবং পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া অবশ্যম্ভাবী।

(ii) বিভিন্ন অঞ্চলের মাটি এবং বিভিন্ন নদী আর হ্রদের জলের প্রভূত অম্লীকরণ : অ্যাসিড বৃদ্ধি কলকারখানার অ্যাসিড মিশ্রিত জল, রাসায়নিক সার ইত্যাদি মেশার ফলে মাটি এবং নদী ও হ্রদের জলের অম্লতা বৃদ্ধি পায়। অধিক আম্লিক মাটি ফসল চাষের ক্ষতিকারক। জল অধিক অম্ল হয়ে পড়লে জলদূষণ ঘটবে এবং জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর
মৃত্যু ঘটবে।

Rlearn Education