তাপমাত্রার তারতম্য অনুসারে বায়ুমন্ডলের শ্রেণিবিভাগ | মাধ্যমিক ভূগোল

Classification of atmosphere according to temperature variation|Madhyamik Geography|বায়ুমন্ডলের শ্রেণিবিভাগ

প্রশ্ন : উষ্ণতার তারতম্য অনুসারে বায়ুমন্ডলের শ্রেণিবিভাগ করে যেকোনো দুটির আলোচনা করো |

উত্তর : তাপমাত্রার তারতম্য অনুসারে বায়ুমণ্ডলকে ৬ টি স্তরে ভাগ করা যায় |

  • ট্রপোস্ফিয়ার
  • স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার
  • মেসোস্ফিয়ার
  • আয়নোস্ফিয়ার
  • এক্সোস্ফিয়ার এবং
  • ম্যাগনেটোস্ফিয়ার |

ক্ষুব্ধমন্ডল বা ট্রপোস্ফিয়ার :

সংজ্ঞাঃ
ভূপৃষ্ঠ থেকে মেরু অঞ্চলে প্রায় ৮ কিমি ও নিরক্ষীয় অঞ্চলে প্রায় ১৮ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত অবস্থিত বায়ুস্তরকে ট্রপোস্ফিয়ার (Troposphere) বলে । বায়ুমণ্ডলের এই স্তরে আমরা বাস করি । বায়ুমণ্ডলের এই স্তরের বায়ুতে প্রায় ৯০ শতাংশ ধূলিকণা, জলীয় বাষ্প, কুয়াশা, মেঘ প্রভৃতি থাকায় এই স্তরে ঝড়, বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি, বজ্রপাত, তুষারপাত প্রভৃতি ঘটনাগুলি ঘটতে দেখা যায়, এজন্য ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুমণ্ডলীয় এই স্তরকে ক্ষুব্ধমন্ডল বলে । গ্রীক শব্দ “Tropos” এর অর্থ ‘পরিবর্তন’ ও “Sphere” এর অর্থ ‘মন্ডল’ ।

বিস্তারঃ
ট্রপোস্ফিয়ারের বিস্তার মেরু অঞ্চলে (Poles) প্রায় ৯ কিমি পর্যন্ত এবং নিরক্ষীয় (Equator) অঞ্চলে প্রায় ১৮ কিমি পর্যন্ত ।

বৈশিষ্ট্যঃ
ট্রপোস্ফিয়ারের – এর বৈশিষ্ট্যগুলি হলো নিম্নরূপ

  • এই স্তরে প্রতি ১০০০ মিটার উচ্চতায় বায়ুর উষ্ণতা ৬.৫ ° সেন্টিগ্রেড হারে কমতে থাকে । একে ’উষ্ণতা হ্রাসের গড়’ (Average Laps Rate of Temperature) বলে । এই কারণে ট্রপােস্ফিয়ারের উর্দ্ধ বা শেষ সীমায় বায়ুর উষ্ণতা কমে হয় প্রায় -৫৫ ° সেন্টিগ্রেড থেকে -৬৬ ° সেন্টিগ্রেড।
  • এটি বায়ুমণ্ডলের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ স্তর । এই স্তরে বায়ুমণ্ডলের মােট ভরের তিন – চতুর্থাংশ পাওয়া যায় ।
  • বায়ুমণ্ডলের এই স্তরে বিভিন্ন গ্যাসীয় উপাদান , জলীয়বাষ্প , ধূলিকণা ও লবণের কণা যথেষ্ট পরিমাণে থাকে । মেঘের সৃষ্টি ও বায়ুপ্রবাহ প্রধানত এই স্তরেই দেখা যায় । ঘূর্ণবাত , টর্নেডাে , ঝড়বৃষ্টি , বিদ্যুৎবজ্রপাত , উয় ও শীতল বায়ুপ্রাচীর বা সীমান্তের উৎপত্তি নিম্নচাপ ও উচ্চচাপের সৃষ্টি প্রভৃতি ঘটনা ট্রপােস্ফিয়ারেই কেবল ঘটে ।
  • ট্রপােস্ফিয়ারের উধ্বসীমাকে বলে ট্রপােপজ । এখানে উয়তা কমেও না, বাড়েও না অর্থাৎ, প্রায় ধ্রুবক থাকে ।
  • বায়ুমণ্ডলস্থিত প্রায় ৭৫% গ্যাসীয় পদার্থ এই স্তরে থাকায় এখানে বায়ুর চাপ সবচেয়ে বেশি ।
  • এই অংশে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বায়ুর চাপ কমতে থাকে । এই স্তরে বায়ুর ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি প্রায় শতকরা ৯০ ভাগ ।

স্ট্রাটোস্ফিয়ার (Stratosphere) :

সংজ্ঞা : ট্রপোস্ফিয়ারের উপর থেকে 50 কিমি বিস্তৃত বায়ুমণ্ডলকে স্ট্রাটোস্ফিয়ার বলে।

এই স্তরে ঝড়-বৃষ্টি, বজ্রপাত প্রভৃতি প্রাকৃতিক ঘটনাগুলো হয় না বলে একে শান্তমন্ডল বলা হয়ে থাকে।

বিস্তৃতি:
ট্রপোপজের উপর থেকে 50 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত।

বৈশিষ্ট্য :

  • ১) এই স্তরে বায়ু হালকা ও বায়ুতে অক্সিজেনের পরিমাণ কম থাকে। এখানে জলীয় বাষ্প বা মেঘ থাকে না।
  • ২) ঝড়, বৃষ্টি, বজ্রপাত প্রভৃতি প্রাকৃতিক ঘটনাগুলি এই স্তরে ঘটনা ঘটে না।
  • ৩) এই স্তরে উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে উষ্ণতা বৃদ্ধি পেতে থাকে।
  • ৪) স্ট্রাটোস্ফিয়ারের উর্ধাংশে 20 থেকে 35 কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত অংশে ওজোন গ্যাসের প্রায় 90% অংশ উপস্থিত থাকে। তাই এই অংশটিকে ওজনমন্ডল বলে থাকে।
  • ৫) সূর্য থেকে নিঃসারিত তাপ ও অতিবেগুনি এই ওজোন স্তর শোষণ করে। এর ফলে আমাদের জীবজগত ভয়ংকর বিপদ থেকে রক্ষা পায়।
  • ৬) তাপ, অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে বলে এই স্তরের উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়।
Rlearn Education