Cromobordhoman Jonosonkhar Somyssa
ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সমস্যা (Problem of growing population) :
উন্নয়নশীল দেশগুলিতে জনসংখ্যার ক্রমবৃদ্ধির ফলে অর্থনৈতিক পরিকাঠামাে ভেঙে পড়ে এবং বিভিন্নপ্রকার সমস্যার সৃষ্টি হয় ।
i) প্রাকৃতিক সম্পদের অতিব্যবহার ও হ্রাস : পৃথিবীতে প্রাকৃতিক সম্পদের পরিমাণ অফুরন্ত নয় । মানব জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য বর্তমানে প্রাকৃতিক সম্পদের সংকট দেখা দিয়েছে । অতিব্যবহারের ফলে পৃথিবীতে ব্যক্তিপিছু প্রাকৃতিক সম্পদের মাত্রা হ্রাস পাচ্ছে । বিপুল জনসংখ্যা বৃদ্ধি , ভোগ্যপণ্যের উৎপাদন , সম্পদের মাত্রাতিরিক্ত অবৈজ্ঞানিক ব্যবহার প্রকৃতির সম্পদের ভান্ডার ধীরে ধীরে নিঃশেষ করে দিচ্ছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে আগামী কিছুদিনের মধ্যেই কয়লা ও খনিজতেলের ভাণ্ডার শেষ হয়ে যাবে। যথা- সময়ে অচিরাচরিত শক্তির ব্যবস্থা না করতে পারলে সভ্যতার সংকট অনিবার্য ।
ii ) কৃষিজমির হ্রাস : বিশাল জনসংখ্যার বসতি স্থাপন করার জন্য কৃষিজমির পরিমাণ দিন কমে আসছে । এর ফলে একদিকে যেমন কৃষিজ দ্রব্যের উৎপাদন কমছে তেমনি উর্বর কৃষিজমিতে বসতি ও শিল্প স্থাপনের ফলে উর্বর কৃষিজমি বিনষ্ট হচ্ছে ।
iii) অরণ্য ধ্বংস ও বাস্তুতন্ত্রের ক্ষয় : জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রথম চাপ এসে পড়ে অরণ্য বা বনভূমির ওপর। অসংখ্য মানুষের বাসস্থান তৈরি করতে , শিল্পস্থাপন করতে ও রাস্তাঘাট নির্মাণ করতে বনভূমি ধ্বংস করতে হয়। এর ফলে অরণ্যের বাস্তুতন্ত্র বিঘ্নিত হয় যার ফলে অনেক উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতি চিরতরে বিলুপ্ত হতে থাকে। প্রতি সেকেন্ডে প্রায় দেড় একর বর্ষা অরণ্য ( Rain forest ) কাটা হচ্ছে । এভাবেই ধ্বংস হতে থাকলে আগামী 100 বছরের মধ্যে পৃথিবীর সকল বর্ষা অরণ্য নিঃশেষিত হয়ে যাবে । এই বর্ষা অরণ্যেই গরিলা , শিম্পাঞ্জি , ওরাংওটাং , তাপির , বাঘ ও সুমাত্রার গন্ডারের মতো লুপ্তপ্রায় প্রাণীরা বেঁচে থাকে।
iv) বায়ু ও জলদূষণ : বিপুল জনসংখ্যার ব্যবহার্য বর্জ্য পদার্থগুলি বায়ু ও জলে মিশে দূষণ ঘটায় । ভোগ্যপণ্যের ( ফ্রিজ , এসি ) মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে বায়ুমণ্ডলে CFC ( ক্লোরোফ্লুরোকার্বন ) গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে যা ওজোনস্তরের পুরুত্ব কমিয়ে দিচ্ছে । এ ছাড়া মােটরগাড়ির ধোঁয়া থেকে নির্গত বেঞ্জোপাইরিন ফুসফুসে ক্যানসার রােগ সৃষ্টি করে।
v ) বায়ুমণ্ডলের পরিবর্তন ও বিশ্ব উষ্ণায়ন : জনসংখ্যার বৃদ্ধির কারণে একদিকে যেমন অরণ্য ধ্বংস করে কলকারখানা , বাসস্থান ও রাস্তাঘাট নির্মিত হয়েছে তেমনই দিন দিন পরিবেশের বায়ুতে গ্রিনহাউস গ্যাসের ( CO2 H2O, CH4 , N2O ) পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে যার অবশ্যম্ভাবী ফল হল বিশ্ব উষ্ণায়ন , আবহমণ্ডলের পরিবর্তন , কোথাও অতিবৃষ্টি , কোথাও অনাবৃষ্টি ।
vi ) মিষ্টি জলের অভাব : পৃথিবীর তিনভাগ জল থাকলেও মিষ্টি জলের যথেষ্ট অভাব রয়েছে । সমগ্র পৃথিবীতে মিষ্টিজলের পরিমাণ প্রায় 3 % । এই পরিমাণ জলের বেশির ভাগটাই ( 68.7 % ) হিমবাহ ও বরফের আস্তরণরূপে অবস্থান করছে। ভৌমজলের পরিমাণ 30 % এবং ভূপৃষ্ঠীয় ও অন্যান্য জলের পরিমাণ প্রায় 1.2 % । অগণিত জনসংখ্যার জলের চাহিদা মেটাতে গভীর নলকূপ বসানো হচ্ছে যার ফলে ভৌমজল থেকে মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে এবং পানীয় জলে আর্সেনিক ও ফ্লুরিন মিশে জলদূষণ ঘটাচ্ছে ।
vii) খাদ্যসংকট : কৃষিজমিতে বসতিস্থাপন ও শিল্পস্থাপনের ফলে দিন দিন কৃষিজমির পরিমাণ কমে আসছে ।ফলে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সঙ্গে সংগতি রেখে পরিমাণ মতন ফসল উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না এবং উন্নত সংরক্ষণ ব্যবস্থা না থাকায় ও ব্যাপক মনােকালচারের প্রসারের ফলে আগামী দিনে খাদ্যসংকট দেখা দেবে বলা যায় ।
viii) জলাভূমি ধ্বংস : বৃক্ক যেমন দেহের দূষিত পদার্থ অপসারিত করে দেহকে সুস্থ রাখে , জলাভূমি তেমনি প্রকৃতির দুষিত পদার্থগুলিকে অপসারিত করে পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখে। তাই জলাভূমিকে প্রকৃতির বৃক্ক বলা হয়। কিন্তু এই জলাভূমি বুজিয়ে সেখানে বসতিস্থাপনের কাজ দিন দিন বেড়েই চলেছে , যার মারাত্মক ফল হল – জলকষ্ট , জলদূষণ ও কিছু জলজ প্রজাতির চির অবলুপ্তি ।