এল নিনো ( El-Nino ) | উচ্চমাধ্যমিক ভূগোল

আলোচ্য বিষয় :

  • এল- নিনোর অর্থ, নামকরণ |
  • এল -নিনোর সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য |
  • এল -নিনো প্রভাবিত অঞ্চল |
  • এল -নিনোর প্রভাব |

উচ্চমাধ্যমিক ভূগোল (HS Geography )

এল- নিলো (El Nino) :

অর্থ : ‘El-Nino’ একটি স্পেনীয় শব্দ, যার অর্থ হলো শিশুখ্রিস্ট (Child Christ) বা দূরন্ত বালক।
নামকরণ : প্রায় 10000 বছর আগে এল্-নিনোর প্রমাণ পাওয়া গেলেও 1892 সালে ক্যাপ্টেন ক্যামিলো ক্যারিল্লো পেরুর লিমায় অনুষ্ঠিত জিওগ্রাফিক্যাল সোসাইটি কংগ্রেসে প্রথম El-nino শব্দটি ব্যবহার করেন।

সংজ্ঞা : ‘এল্ নিনো’ একপ্রকার সাময়িক উয় সমুদ্রস্রোত। কোনো কোনো বছর ডিসেম্বর মাসের দিকে দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিমে পেরু ও ইকুয়েডর উপকূলের অদূরে 10°-35° দক্ষিণ অক্ষাংশে এবং 90°- 120° পশ্চিম দ্রাঘিমাংশ উত্তরমুখী শীতল হামবোল্ড স্রোতের পরিবর্তে দক্ষিণ-মুখী উয়স্রোত প্রবাহিত হয়। এই উষ্ণ স্রোতকেই এল্- নিনো বলে।

বৈশিষ্ট্য :
[1] প্রকৃতি: এল্ নিনো একটি সাময়িক ও উষ্ণ দক্ষিণমুখী সমুদ্রিক স্রোত।
[2] আবির্ভাবের সময়কাল : প্রায় 2-7 বছর অন্তর ডিসেম্বর মাসে এল নিনোর আবির্ভাব ঘটে।
[3] স্থায়িত্ব প্রায় 14-22 মাস স্থায়ী হয়।
[4] উষ্ণতা : পেরু ও ইকুয়েডর উপকূলের সমুদ্র জলের উয়তা স্বাভাবিকের থেকে 1°-5° সেলসিয়াস বেশি থাকে।

প্রভাবিত অঞ্চল : দক্ষিণ আমেরিকার পেরু, চিলি, ইকুয়েডর, আর্জেন্টিনা, উত্তর ও মধ্য আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে পানামা, কোস্টারিকা, নিকারাগুয়া, মেক্সিকো, অস্ট্রেলিয়ার পূর্বাংশ, এশিয়ার দক্ষিণ- পূর্বে ভারত বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, ও আফ্রিকার কিছু অংশ।

এল – নিনোর প্রভাব :

  • এল নিনাের প্রভাবে নিরক্ষরেখার যেখানে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয় সেখানকার আকাশে বজ্র মেঘের সঞ্চার ঘটে। এল নিনাের প্রভাবে পেরু ও ইকুয়েডরে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। ফলে বন্যার সৃষ্টি হয়।
  • উত্তর আমেরিকার মধ্য-পশ্চিম ও উত্তর-পূর্ব অংশ এবং কানাডায় শীতের প্রকোপ কমে।
  • আমাজন নদী অববাহিকা, কলম্বিয়া, মধ্যে আমেরিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ায় শুষ্ক আবহাওয়া বিরাজ করে। ফলে দাবানলের সৃষ্টি হয়।


  • পূর্ব আফ্রিকায় বৃষ্টিপাতের সময় বেড়ে যায়। মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত আর্দ্র ঋতু বিরাজ করে।


  • দক্ষিণ-মধ্য আফ্রিকায় এল নিনাের আবির্ভাবের বছরে ডিসেম্বর মাস থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত শুষ্কতর আবহাওয়া লক্ষ করা যায়।


  • এল নিনাের আবির্ভাবের পর উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার গ্রীষ্মকালের অর্ধেকের বেশি সময় বাতাসের তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেশি থাকে।


  • দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আবির্ভাবের সাথে সাথে ভারতীয় মৌসুমি বায়ুর এক গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এল নিনাের বছরগুলিতে অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ভারতে খরা এবং পেরু-চিলির শুষ্ক মরুভূমিতে অতি বৃষ্টির ফলে বন্যা হয়। 1997 খ্রিষ্টাব্দের শেষ ভাগ থেকে আজ পর্যন্ত এল নিনাের প্রভাবে প্রায় 16, 000 লােক প্রাণ হারিয়েছে।


  • স্বাভাবিক বছরগুলিতে ইকুয়েডর ও পেরুর শুষ্ক জলবায়ু অঞ্চলে যেখানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ থাকে 10-13 সেমি, সেখানে এল নিনাের সময় এই অঞলে 300 থেকে 400 সেমি বৃষ্টিপাত ঘটে থাকে। ফসলের উৎপাদন বহুগুণ বেড়ে যায় এবং অর্ধ শুষ্ক অঞ্চলগুলি সবুজ ঘাসে ভরে ওঠে।
  • এল নিনাের ফলে দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে উয় স্রোত প্রবাহিত হওয়ায় মাছের খাদ্য নষ্ট হয়। ফলে মৎস্য আহরণ কমে যায় এবং মৎস্যজীবীরা ক্ষতিগ্রস্থ হয় |
  • এল নিনাের প্রভাবে অধিকাংশ প্রবাল কীটের মৃত্যু ঘটে।
Rlearn Education