বায়ুমণ্ডলীয় গােলযােগ : ঘূর্ণবাত (Atmospheric turbulence: Cyclone)
Content Topic:
- ঘূর্ণবাত কাকে বলে ,
- ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত কাকে বলে ? এর বৈশিষ্ট্য ,
- নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাত কাকে বলে ,
- নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাতের বৈশিষ্ট্য ,
ঘূর্ণবাত :
ইংরেজি শব্দ ‘Cyclone’এর অর্থ সর্পিল আকৃতির কুণ্ডলী। ক্রান্তীয় অঞ্চলে অথবা নাতিশীতোষ্ণ অঞ্লের স্বল্প পরিসর স্থানের বায়ু হঠাৎ খুব বেশি উত্তপ্ত হলে এক গভীর নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। তখন পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের অপেক্ষাকৃত শীতল ও ভারী বায়ু পাক খেতে খেতে কুণ্ডলীর আকারে এই নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে ধেয়ে আসে। নিম্নচাপ অঞ্চলে পৌঁছে বায়ু উষ্ণ ও উধ্বমুখী। হয়। এইরূপ কেন্দ্রমুখী ও উর্ধ্বগামী কুণ্ডলী আকারে আবর্তিত বায়ুপ্রবাহকে ঘূর্ণবাত বা সাইক্লোন বলে।
আঞ্চলিক অবস্থান ও প্রকৃতিগত পার্থক্য অনুযায়ী ঘূর্ণবাতকে [1] ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত ও (2) নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাত—এই দুই ভাগে ভাগ করা হয়।
ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত :
উভয় গােলার্ধের ক্রান্তীয় অঞ্চলে 5° থেকে 20° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষরেখার মধ্যবর্তী অঞ্চলে অধিকাংশ ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত সংঘটিত হয়।
এই অঞ্চলে অত্যাধিক উষ্ণতার জন্য সমুদ্রের উপরিভাগের বায়ু উষ্ণ ও হালকা হয়ে ওপরের দিকে উঠে যায়। ফলে, এই অঞ্চলে গভীর নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। তখন চারপাশের অপেক্ষাকৃত শীতল ও ভারী বায়ু প্রবল বেগে কুণ্ডলীর আকারে ঘুরতে ঘুরতে এইরূপ গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে ধেয়ে আসে। ক্রান্তীয় অঞ্চলে এইরূপ প্রবল গতিসম্পন্ন কেন্দ্রমুখী ঘূর্ণায়মান ঊর্ধ্বগামী বায়ুপ্রবাহকে ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত বলে।
ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের বৈশিষ্ট্য :
ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল –
1. অবস্থান : নিরক্ষরেখার উভয়পার্শ্বে 5° থেকে 30° অক্ষাংশের মধ্যে ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি হয়।
2. উষ্ণ সমুদ্রপৃষ্ঠ: 26° – 27° উষ্ণতা বিশিষ্ট সমুদ্রপৃষ্ঠে ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত সৃষ্টি হয়।
3. শক্তির উৎস: জলীয় বাষ্পের লীনতাপ থেকে ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত শক্তি লাভ করে তাই সমুদ্রের ওপর সৃষ্টি হয়ে স্থলভাগের দিকে প্রবাহিত হয়।
4. গভীর নিম্নচাপ ও সমচাপ রেখার আকৃতি: কেন্দ্রে অতি গভীর নিম্নচাপ থাকে, যা কখনো 880 মিলিবার হয়ে যায়। সমপ্রেষ লেখাগুলি সম্পূর্ণ বৃত্তাকার ও খুব ঘন সন্নিবিষ্ট হয়।
5. প্রবল বায়ুপ্রবাহ: ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রমুখী বায়ু প্রবল গতিতে প্রবাহিত হয়। এই বায়ু ঘন্টায় গড়ে 100-150 কিমি এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে 200-400 কিমি পর্যন্ত প্রবাহিত হয়।
6. বিস্তার: ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের আয়তন ছোট হলেও ব্যাস সর্বাধিক প্রায় 700 কিমি পর্যন্ত হয়।
7. বায়ু প্রবাহের দিক: উত্তর গোলার্ধে ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে অর্থাৎ বামবর্তে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে ঘড়ির কাটার দিকে অর্থাৎ দক্ষিণাবর্তে প্রবাহিত হয়।
8. গতিপথ: আয়ন বায়ু প্রবাহের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়।
9. শান্ত চক্ষু: ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রে গভীর নিম্নচাপযুক্ত ও মেঘমুক্ত শান্ত আবহাওয়া বিশিষ্ট শান্ত ঘূর্ণবাতের চক্ষু অবস্থান করে।
10. বৃষ্টিপাত: ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রে বৃষ্টি না হলেও কেন্দ্রের চারিদিকে প্রবল বেগে ঝড়ের সঙ্গে বজ্রবিদ্যুৎসহ একটানা বৃষ্টিপাত হয়।
11. সময়কাল ও স্থায়িত্ব: প্রধানত গ্রীষ্মকাল ও শরৎকালের ক্ষণস্থায়ী ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত সৃষ্টি হয়।
12. সীমান্তের অনুপস্থিতি: ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতে সমচাপ রেখাগুলি বৃত্তাকার হওয়ায় কোন সীমান্ত সৃষ্টি হয় না।
13. ব্যারোট্রপিক আবহাওয়া: একই উষ্ণতা বিশিষ্ট বায়ুপুঞ্জের মিলনে গড়ে ওঠে বলে আবহমন্ডলের এই ধরনের সমধর্মিতাকে ব্যারোট্রপিক আবহাওয়া বলে।
14. ধ্বংসক্ষমতা: বিধ্বংসী ক্ষমতা যুক্ত ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতে জীবন ও সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাত :
নিরক্ষরেখার উভয় দিকে, 35° থেকে 65° অক্ষরেখার মধ্যে দুটি ভিন্নধর্মী বায়ু – মেরু অঞ্চলে থেকে আগত শুষ্ক ও শীতল ভারী বায়ুপুঞ্জের সঙ্গে ক্রান্তীয় অণল থেকে আগত উষ্ণ-আর্দ্র বায়ুপুঞ্জের সংঘর্ষ হয়। এদের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে শীতল ও ভারী বায়ু উষ্ণ বায়ুর স্থান দখল করে। ফলে, উষ্ণ বায়ু সীমান্ত বরাবর শীতল বায়ুর ওপর প্রবল বেগে ঘুরতে ঘুরতে ওপরে উঠে যায়, এর ফলে যে ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি হয় তাকে নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাত বলে।
নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাতের বৈশিষ্ট্য :
1. অবস্থান: উপক্রান্তীয় অঞ্চলে 30°-65° অক্ষাংশের মধ্যবর্তী স্থানে সাধারণত স্থলভাগের ওপর নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাত সৃষ্টি হয়।
2. উৎপত্তির সময়: নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাত বছরের যে কোন সময় জন্ম লাভ করলেও সাধারনত শীতকালে সৃষ্টি হয়।
3. সীমান্ত সৃষ্টি: দুটি বিপরীতধর্মী বায়ুপুঞ্জের মিলন স্থলে এই ঘূর্ণবাতে সীমান্ত সৃষ্টি হয়।
4. শক্তির উৎস: দুটি ভিন্ন ধর্মী বায়ুর মিলন স্থলে উষ্ণতার পার্থক্য থেকে নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাত শক্তি সংগ্রহ করে।
5. আয়তন: নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাতের আয়তন বিশাল হয়। এই ঘূর্ণবাতের গড় ব্যাস 150 কিমি থেকে 3000 কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে।
6. বায়ুর চাপ: এই ঘূর্ণবাত বায়ুর চাপ 1000 মিলিবারের কাছাকাছি থাকে এবং প্রান্তভাগের সঙ্গে চাপের পার্থক্য থাকে 10 থেকে 30 মিলিবার।
7. সমচাপরেখার আকৃতি: এই ঘূর্ণবাতের সমচাপ রেখা গুলি সাধারণত ‘V’ আকৃতির হয়।
8. গতিবেগ: নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাতের গড় গতিবেগ গ্রীষ্মকালে অপেক্ষাকৃত 30 কিমি এবং শীতকালে বেশি হয়( 50 কিমি)।
9. প্রবাহের দিক: পশ্চিমা বায়ু প্রবাহের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বলে এই ঘূর্ণবাত পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়।
10. বায়ু প্রবাহের দিক: এই ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রে উষ্ণ বায়ু ঊর্ধ্বগামী ও শীতল বায়ু নিম্নগামী হয়।
11. প্রতীপ ঘূর্ণবাতের সহাবস্থান: নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাত ঘটার পরে প্রতীপ ঘূর্ণবাত সৃষ্টির অবস্থা তৈরি হয়।
12. বৃষ্টিপাত: অসম ভাবে বহুদিন ধরে হালকা অবিরাম বৃষ্টি ও তুষারপাত হয়। সীমান্তে সর্বাধিক এবং অন্যত্র হ্রাস পায়।
13. ব্যারোক্লিনিক আবহাওয়া: দুই ভিন্নধর্মী বায়ুপুঞ্জের মিলনে সৃষ্টি হয় বলে আবহমন্ডলের এই ধরনের বিষমধর্মিতাকে ব্যারোক্লিনিক আবহাওয়া বলে।
14. ধ্বংসক্ষমতা: নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাত অত্যন্ত দুর্বল ও ক্ষয়ক্ষতি খুবই কম হয়।
Thank you very much for sharing, I learned a lot from your article. Very cool. Thanks. nimabi