বায়ুমন্ডলীয় গোলযোগ : তৃতীয় পর্ব

Content Topic:

  • ঘূর্ণবাতের চক্ষু |
  • ক্রান্তীয় ও নাতিশীতােষ্ণ ঘূর্ণবাতের পার্থক্য |
  • ঘূর্ণবাত ও প্রতীপ ঘূর্ণবাতের মধ্যে পার্থক্য |
  • উষ্ণ ও শীতল সীমান্তের পার্থক্য |
  • বিভিন্ন অঞ্চলের ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত |

বায়ুমন্ডলীয় গোলযোগ : উচ্চমাধ্যমিক ভূগোল |

ঘূর্ণবাতের চক্ষু :

ঘূর্ণবাতের কেন্দ্র কে ঘূর্ণবাতের চক্ষু বলে। ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রে বায়ুর চাপ কম থাকে বলে গভীর নিম্নচাপের সৃষ্টি হয় এবং তার পরবর্তীকালে ঝড়ের সৃষ্টি হয়, এটাকেই বলা হয় ঘূর্ণবাতের চক্ষু।

ঘূর্ণবাতের মাঝখানে একটি প্রায় গোলাকার কেন্দ্র থাকে, একে ঘূর্ণবাতের চক্ষু (Eye of the cyclone) বলে।

বৈশিষ্ট্য :

i) ঘূর্ণবাতের চক্ষু অংশে উষ্ণতা বেশি হয়।

ii) এই অংশে মেঘ প্রায় থাকে না বললেই চলে।

iii) এখানে বায়ুপ্রবাহেরগতিবেগও খুব কম হয়।

iv) ঘূর্ণবাতের চক্ষুর পরিধি সর্বাধিক
৪০ কিমি পর্যন্ত হতে পারে |

v) এই অঞ্চলটির চরিত্র শান্তবলয়ের
মতো হয়।

উদাহরণ: হারিকেন, টাইফুন প্রভৃতি ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষেত্রে ঘূর্ণবাতের চক্ষু দেখা যায়। এক্ষেত্রে ঝড়ের কেন্দ্রে 20-50 কিমি ব্যাসযুক্ত ঝড়ের চক্ষু সৃষ্টি হয়।

ক্রান্তীয় ও নাতিশীতােষ্ণ ঘূর্ণবাতের পার্থক্য :

ঘূর্ণবাত ও প্রতীপ ঘূর্ণবাতের মধ্যে পার্থক্য:

পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলীয় ঘটনা গুলির মধ্যে অন্যতম হল ঘূর্নবাত ও প্রতীপ ঘূর্নবাত । ঘূর্নবাত ও প্রতীপ ঘূর্নবাত একে অপরের বিপরীত অবস্থাকে সূচিত করে। দুটি অবস্থার কিছু ভিন্ন বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা একটি কে অপরটি থেকে পৃথক করে। ঘূর্নবাত ও প্রতীপ ঘূর্নবাতের মধ্যে পার্থক্য গুলি বিস্তারিত ভাবে নিচে আলোচনা করা হল –

১. সংজ্ঞা:
☞নিম্নচাপ বিশিষ্ট ঝরকে ঘূর্নবাত বা সাইক্লোন বলা হয়ে থাকে।
☞উচ্চচাপ বিশিষ্ট অঞ্চল থেকে বর্হিমুখী বায়ু প্রবাহকে প্রতীপ ঘূর্নবাত বলে।

২. বায়ুপ্রবাহ :
☞চারদিক থেকে বায়ু ঘূর্নবাত কেন্দ্রের দিকে ধেয়ে আসে অর্থাৎ বায়ু প্রবাহ কেন্দ্রমুখী হয়।
☞প্রতীপ ঘূর্নবাতে বায়ু কেন্দ্র থেকে বাইরের দিকে যায় অর্থাৎ বায়ু প্রবাহ বর্হিমুখী।

৩. বায়ুর প্রকৃতি:
☞ ঘূর্নবাতের কেন্দ্রের বায়ু উষ্ণ ও ঊর্ধবগামী হয়।
☞প্রতীপ ঘূর্নবাতের কেন্দ্রে বায়ু ঠাণ্ডা ও নিম্নগামী হয়।

৪. চাপের উপস্থিতি:
☞ ঘূর্নবাতের কেন্দ্রে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়।
☞ প্রতীপ ঘূর্নবাতের কেন্দ্রে উচ্চচাপের সৃষ্টি হয়।

৫. মেঘ ও ঝড়বৃষ্টি:
☞ঘূর্নবাতের সময় আকাশ মেঘলা থাকে ও প্রবল ঝড় বৃষ্টি হয়।
☞প্রতীপ ঘূর্নবাতের ক্ষেত্রে আকাশ নির্মল মেঘমুক্ত থাকে। ঝড়বৃষ্টি হয় না।

৬. স্থায়িত্ব:
☞ঘূর্নবাত ক্ষণস্থায়ী হয়।
☞ প্রতীপ ঘূর্নবাত দীর্ঘকাল স্থায়ী হয়।

৭. ধ্বংসাত্মক শক্তি:
☞ঘূর্নবাত খুব শক্তিশালী হয়, এর ফলে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়।
☞প্রতীপ ঘূর্নবাতের শক্তি কম হয় বলে, ক্ষয়ক্ষতি হয় না।

৮. গতিবেগ:
☞ঘূর্নবাত তীব্র গতিবেগ সম্পন্ন হয়, কখনো কখনো গতিবেগ ঘণ্টায় ৩০০-৩৫০ কিমি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
☞ প্রতীপ ঘূর্নবাতে বায়ুপ্রবাহের গতিবেগ তীব্র হয় না।

৯. উৎপত্তি স্থল :
☞ ঘূর্নবাত প্রধানত ক্রান্তীয় ও নাতিশীতোষ্ণ মন্ডলের উষ্ণ সমুদ্রে সৃষ্ট হয়।
☞ প্রতীপ ঘূর্নবাত সাধারণত নাতিশীতোষ্ণ ও হিমমণ্ডলের শীতল স্থলভাগে সৃষ্টি হয়।

উষ্ণ ও শীতল সীমান্তের পার্থক্য :

উষ্ণ সীমান্ত :

উষ্ণ বায়ুপুঞ্জ শীতল বায়ুপুঞ্জকে যে সীমান্তপৃষ্ঠ বা তল বরাবর স্থানচ্যুত করে, তাকে উষ্ণ সীমান্ত বলে।
সীমান্ত তল বা পৃষ্ঠ তির্যক প্রকৃতির। এর ঢাল মৃদু।
উষ্ণ বায়ুপুঞ্জ উষ্ণ সীমান্ত বরাবর সক্রিয় ও গতিশীল। এই বায়ুপুঞ্জ শীতল বায়ুপুঞ্জকে ধীর গতিতে স্থানচ্যুত করে।
উষ্ণ সীমান্ত বরাবর শীতল বায়ুপুঞ্জের উষ্ণতা ধীরে ধীরে বাড়ে এবং বায়ুর চাপ হ্রাস পায়।
সীমান্ত সৃষ্টির প্রথম পর্ব থেকেই উষ্ণ সীমান্ত বরাবর সিরাস মেঘের সঞ্চার ঘটে। পরবর্তী পর্যায়ে অল্টোস্ট্যাটাস ও নিম্নে-স্ট্র্যাটাস মেঘের সমাবেশ ঘটে।
উষ্ণ সীমান্ত বরাবর বজ্র-বিদ্যুৎসহ ঝড় ঝঞ্ঝার পরিমাণ কম। বৃষ্টিপাতের তীব্রতাও কম।

শীতল সীমান্ত :

শীতল বায়ুপুঞ্জ উষ্ণ বায়ুপুঞ্জকে যে তল বা সীমান্তপৃষ্ঠ বরাবর স্থানচ্যুত করে, সেই সীমান্তপৃষ্ঠকে শীতল সীমান্ত বলে।

সীমান্ত তল বা পৃষ্ঠ উত্তল প্রকৃতির। এর ঢাল উষ্ণ সীমান্ত অপেক্ষা অনেক বেশি।
শীতল বায়ুপুঞ্জ শীতল সীমান্ত বরাবর সক্রিয় ও গতিশীল। এটি উষ্ণ বায়ু পুঞ্জকে অতি দ্রুত স্থানচ্যুত করতে পারে।
শীতল সীমান্ত বরাবর উষ্ণ বায়ুপুঞ্জের উষ্ণতা ধীরে ধীরে কমে। ফলে বায়ুর চাপ ধীরে ধীরে বাড়ে।
প্রথম থেকেই কিউমুলােনিম্বাস মেঘের সঞ্চার ঘটে |
শীতল সীমান্ত বরাবর বজ্র-বিদ্যুৎসহ ঝড়-ঝঞ্ঝা ও বৃষ্টিপাতের তীব্রতা বেশি।

বিভিন্ন অঞ্চলের ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের নাম :

1. পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ ও তৎসংলগ্ন এলাকা – হ্যারিকেন।

2. চিন – টাইফুন।

3. জাপান – তাইফু।

4. ফিলিপিন দ্বীপপুঞ্জ – ব্যাগুই।

5. অস্ট্রেলিয়া – উইলি-উইলি।

6. ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, মাদাগাস্কার, পাকিস্তান – সাইক্লোন।

7. মিসিসিপি নদীর মােহানা অঞ্চল ও মেক্সিকো উপকূল – টর্নেডাে।

Rlearn Education