ভৌমজলের কার্য ও সংশ্লিষ্ট ভূমিরূপ : তৃতীয় পর্ব

উচ্চমাধ্যমিক ভূগোল (HS Geography) :ভৌমজলের কার্য ও সংশ্লিষ্ট ভূমিরূপ

আলোচনার বিষয় :

  • সিঙ্কহােল
  • ডােলাইন
  • চুনাপাথরযুক্ত অঞ্চলে গুহা সৃষ্টির পদ্ধতি
  • শুষ্ক ও অন্ধ উপত্যকা
  • অ্যাকুইফারের সৃষ্টি


সিঙ্কহােল :
কার্স্ট অঞ্চলে জলের দ্রবণ কার্যের ফলে ফাদল আকৃতির যে অবনত ভূভাগ সৃষ্টি হয় তাকে সিঙ্কহােল বলে।

বৈশিষ্ট্য :
গঠন প্রকৃতি : চুনাপাথরযুক্ত অঞ্চলে কার্বন ডাইঅক্সাইড মিশ্রিত জলের দ্রবণ কার্যের ফলে সৃষ্টি হয়।
আকৃতি : এটি ফাঁদল বা ফানেলের আকৃতিবিশিষ্ট।
বিস্তৃতি : সিঙ্কহােলের ক্ষেত্রফল কয়েক বর্গমিটার থেকে কয়েকশাে বর্গমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।
গভীরতা : এর গভীরতা কয়েক সেমি থেকে 30 মিটার বা তার বেশি হতে পারে।
যৌগিক সিঙ্কহোেল গঠন : একাধিক সিঙ্কহােল প্রসারিত ও সংযুক্ত হয়ে যৌগিক সিঙ্কহােল গঠিত হয়।

ডােলাইন :
কার্স্ট অঞ্চলের বৃহদায়তন সিঙ্কহােলকে ডােলাইন বলে। এর বৈশিষ্ট্যগুলি আলােচনা করা হল-
আকৃতি : বৃহদাকৃতির সিঙ্কহােলকে ডােলাইন বলে। এর আকৃতিও সিঙ্কহােলের মতাে বৃত্তাকার হয়।
অবস্থান : এগুলি বিশুদ্ধ চুনাপাথরযুক্ত অঞ্চলে এবং শুষ্ক নদী-উপত্যকায় লক্ষ করা যায়।
গভীরতা : এদের গভীরতা 2-10 মিটারের মধ্যে হয়ে থাকে। কোনাে কোনাে ডােলাইনের গভীরতা 100 মিটার হয়।
বিস্তার : অধিকাংশ ডােলাইনের ব্যাস 50-100 মিটার পর্যন্ত হয়।
উৎপত্তিগত বৈশিষ্ট্য : উৎপত্তিগত ও প্রকৃতিগত পার্থক্যের জন্য ডােলাইনকে (১) দ্রবণ ডােলাইন, (২) ধস ডােলাইন, (৩) দ্রবণ পাইপ ডােলাইন, (৪) অবনমিত ডােলাইন ও (৫) ককপিট ডেডলাইন—এই পাঁচটি ভাগে ভাগ করা যায়।

চুনাপাথরযুক্ত অঞ্চলে গুহা সৃষ্টির পদ্ধতি :
ভূ-অভ্যন্তরের স্বাভাবিক শূন্যস্থান গুহা নামে পরিচিত। কাস্ট অঞ্চলে দ্রবীভূত শিলাস্তরের দারণ ও ফাটলের মধ্য দিয়ে কার্বন- ডাই- অক্সাইড মিশ্রিত জল ভূ-অভ্যন্তরে প্রবেশের ফলে দ্রবণ প্রক্রিয়ায় গুহার সৃষ্টি হয়। গুহা বিভিন্ন আয়তনের হতে পারে। বৃহদাকৃতির গুহাকে ভূগহ্রর (Cavern) বলে।

দ্রবণ পদ্ধতি : কাস্ট অঞ্চলে গুহা বা ভূগহুর সৃষ্টির ক্ষেত্রে বহু তত্ত্ব প্রচলিত আছে। দ্রবণ তত্ত্ব অনুযায়ী জলপীঠের ওপরে ভাদোস জলস্তরে কার্বন ডাইঅক্সাইড মিশ্রিত জলের দ্রবণ ক্রিয়ায় ক্ষয়ের ফলে গুহা বা ভূগহ্র সৃষ্টি হয়।

ডেভিসের মত : W.M. Davis-এর মত অনুযায়ী চুনাপাথর অঞ্চলের গুহা বা ভূগহুর সৃষ্টির ক্ষেত্রে ক্ষয়ের দুটি পর্যায় বা চক্র বিশেষ প্রয়ােজন। প্রথম পর্যায়ে ভৌমজলপীঠের নীচে ফ্রিয়েটিক জলস্তরে চুনাপাথর দ্রবীভূত হয়ে গহুর সৃষ্টি হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে ভূপৃষ্ঠের উত্থানের ফলে ভূগহুর ভৌমজলপীঠের ওপরে অবস্থান করে। এই পর্যায়ে গুহা ভাদোস স্তরে অবস্থান করে। ফলে ভূগহ্রর শুষ্ক থাকে এবং গুহায় সঞ্চয়কার্য সম্পন্ন হয়।

শুষ্ক ও অন্ধ উপত্যকা :
নদী-উপত্যকার মধ্যে সিদ্ধহােল তৈরি হলে শুষ্ক উপত্যকা ও অন্ধ উপত্যকা সৃষ্টি হয়। নদীর প্রবাহপথের যেখানে সিঙ্কহােল থাকে সেখানে নদী ওই সিঙ্কহােলে প্রবেশ করে ভূ-অভ্যন্তর দিয়ে প্রবাহিত হয়। সিঙ্কহােলের পরের নদী-উপত্যকার অংশটি তখন জলশূন্য হয়ে পড়ে। নদী-উপত্যকার এই জলশূন্য অংশটি হল শুঙ্ক উপত্যকা। আর নদীপ্রবাহের যে অংশ সিঙ্কহােলে প্রবেশ করে সেই অংশটি কানাগলির মতাে ওখানে হঠাৎ শেষ হয়ে যায়। নদীর এই অংশটি হল অন্ধ উপত্যকা।

শুষ্ক উপত্যকা ও অন্ধ উপত্যকার বৈশিষ্ট্য :

➤ প্রচুর বৃষ্টিপাতের সময় শুষ্ক উপত্যকার মধ্য দিয়ে সামান্য পরিমাণ জল প্রবাহিত হলেও বর্ষার পর উপত্যকাটি পুনরায় শুকনাে হয়ে যায়।
➤ অন্ধ উপত্যকায় নদীর গতি অব্যাহত থাকে বলে নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে অন্ধ উপত্যকাটি পরিত্যক্ত উপত্যকা অপেক্ষা গভীর হয়। পরিত্যক্ত উপত্যকাটি অন্ধ উপত্যকা অপেক্ষা অনেক উঁচুতে অবস্থান করে।
➤ বর্ষাকালে নদীবাহিত জলের সমস্তটাই সিঙ্কহােলের মধ্যে দিয়ে প্রবেশ করতে পারে না বলে অন্ধ উপত্যকা সাময়িকভাবে হ্রদে পরিণত হয়।

অ্যাকুইফার :
অ্যাকুইফার শব্দের উৎপত্তি দুটি ল্যাটিন শব্দ Aqua এবং Ferre থেকে। Aqua শব্দের অর্থ জল এবং Ferre শব্দের অর্থ বহনকারী। অতএব, অ্যাকুইফার শব্দের অর্থ জলবহন – কারী বা জলবাহী স্তর। যে ভূতাত্ত্বিক স্তরের মধ্য দিয়ে জল প্রবাহিত হয়, পরিপূরিত হয়, ক্ষরিত হয় এবং জলের ভাণ্ডাররূপে অবস্থান করে তাকে অ্যাকুইফার বলে। অ্যাকুইফার ছাড়া ভৌমজল সৃষ্টি হতে পারে না। বৃষ্টির জল ও বরফগলা জল মৃত্তিকার মধ্য দিয়ে প্রবেশ্য শিলাস্তরে সঞ্ছিত হলে ভৌমজলের ভাণ্ডার গড়ে ওঠে।

অ্যাকুইফারের সৃষ্টি : অপ্রবেশ্য শিলাস্তরের ওপর প্রবেশ্য শিলাস্তর অবস্থান করলে, ওই প্রবেশ্য শিলাস্তরে জল সঞ্চিত হয়ে যে অ্যাকুইফার গঠিত হয় তাকে মুক্ত অ্যাকুইফার বলে। দুটি অপ্রবেশ্য শিলাস্তরের মধ্যে থাকা প্রবেশ্য শিলাস্তরে জল সঞ্চিত হয়ে যে অ্যাকুইফার গঠিত হয়, তাকে আবদ্ধ অ্যাকুইফার বলে। মুক্ত অ্যাকুইফারের ওপরে চামচের মতাে অথবা লেন্সের মতাে অল্প পরিসর স্থানে অপ্রবেশ্য শিলাস্তর অবস্থান করলে ওই অপ্রবেশ্য শিলাস্তরের ওপরে জলবাহী স্তরে সামান্য কিছু জল সঞ্চিত হয়। একে স্থানীয় বা পার্চড অ্যাকুইফার বলে। প্রবেশ্য শিলাস্তরে এইভাবে জলের সঞ্চয় ঘটিয়ে বিভিন্ন প্রকার অ্যাকুইফার সৃষ্টি হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *