কালীপ্রসন্ন সিংহের হুঁতোম প্যাঁচার নক্সা গ্রন্থে সমাজ বাংলার প্রতিচ্ছবি

কালীপ্রসন্ন সিংহের হুঁতোম প্যাঁচার নক্সা গ্রন্থে সমাজ বাংলার প্রতিচ্ছবি: মাধ্যমিক ইতিহাস |

ভূমিকা : সাহিত্যিক কালীপ্রসন্ন সিংহের লেখা ‘হুতোমপ্যাঁচার নক্সা’ (১৮৬১ খ্রি.) উনিশ শতকের বাংলার একটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। উনিশ শতকে যেসব বাংলা সাহিত্যগ্রন্থে সেকালের বাংলার সমাজের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে, সেগুলির মধ্যে অন্যতম হল এই গ্রন্থ।

[1] মধ্যবিত্তদের মানসিকতা: কালীপ্রসন্ন সিংহ তাঁর ‘হুতোমপ্যাঁচার নক্সা’ গ্রন্থে ‘হুতোমপ্যাচা’ ছদ্মনামে ঊনবিংশ শতকের বাংলার মধ্যবিত্ত সমাজের মানসিকতা ও ক্রিয়াকলাপের তীব্র সমালোচনা করেন।

[2] বাবুসমাজের জীবনযাত্রা: উনিশ শতকে পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত কলকাতায় হঠাৎ ফুলেফেঁপে ওঠা অত্যন্ত ধনী বাবুদের মধ্যে যে সামাজিক অবক্ষয় শুরু হয়, তার স্বরূপটি ‘হুতোমপ্যাঁচার নক্সা’ গ্রন্থে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। বাবু সংস্কৃতির তীব্র সমালোচনা করে গ্রন্থটি সমকালীন শিক্ষিত বাঙালিকে সচেতন করে তার সামাজিক দায়িত্ব পালন করেছে।

[3] কলকাতাবাসীর শ্রেণিবিভাগ:কালীপ্রসন্ন সিংহ তাঁর গ্রন্থে তৎকালীন কলকাতাবাসীদের তিনভাগে বিভক্ত করেছেন।

যথা—
[i] ইংরেজি শিক্ষাপ্রাপ্ত এবং সাহেবি চালচলনের অন্ধ অনুকরণকারী,
[ii] ইংরেজি শিক্ষায় নব্যপন্থী, যারা সাহেবি
চালচলনের অন্ধ অনুকরণকারী নয় এবং [iii] ইংরেজি না-জানা গোঁড়া হিন্দুসমাজ।

কালীপ্রসন্ন সিংহের কথায়, এরা সবাই কমবেশি জাল-জুয়াচুরি বা ফন্দি-ফিকির করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করত।

[4] কলকাতার সামাজিক জীবন: কালীপ্রসন্ন সিংহর ‘হুতোমপ্যাচার নক্সা’য় তৎকালীন কলকাতার সাধারণ সামাজিক জীবনের ছবি ফুটে উঠেছে। গ্রন্থটির প্রথমভাগে আলোচিত হয়েছে চড়ক পার্ববণ, কলিকাতার বারোইয়ারি পূজা, ছেলেধরা, কৃশ্চানি হুজুক, সাতপেয়ে গরু, দরিয়াই ঘোড়া, লক্ষ্ণৌয়ের বাসা এবং দ্বিতীয় ভাগে আলোচিত রথ, দুর্গোৎসব, রামলীলা প্রভৃতি তৎকালীন কলকাতার প্রতিচ্ছবি।

উপসংহার: কালীপ্রসন্ন সিংহের ‘হুতোম প্যাঁচার নকশা’ রচনাটি ছিল উনিশ শতকের কলকাতার কথ্য ভাষায় এবং হাস্যরসাত্মক ভঙ্গিতে রচিত একটি ব্যঙ্গাত্মমূলক সাহিত্য। এর মধ্য দিয়ে তৎকালীন ঔপনিবেশিক সমাজের এক বাস্তব চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

Rlearn Education