ইতিহাসের উপাদান হিসেবে সত্তর বৎসরের গুরুত্ব

Madhyamik History Model Questions| মাধ্যমিক ইতিহাস মডেল প্রশ্ন

প্রশ্ন:- ইতিহাসের উপাদান হিসেবে সত্তর বৎসরের গুরুত্ব কী ?

ভূমিকা : রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও সমাজসংস্কারক বিপিনচন্দ্র পালের লেখা আত্মজীবনী ‘সত্তর বৎসর’ আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয়। জীবনের সত্তর বছরে পদার্পণ করে এই আত্মজীবনী লিখেছিলেন বলে এর নামকরণ করেন ‘সত্তর বৎসর’ |

প্রকাশ কাল : এটি প্রথমে প্রবাসী পত্রিকায় ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে এটি গ্ৰন্থাকারে প্রকাশিত হয়।

ঐতিহাসিক গুরুত্ব : বিপিনচন্দ্র পাল -এর আত্মজীবনীকে উনিশ শতকের ইতিহাস রচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে গ্ৰহণ করা হয়ে থাকে।

(i) বাংলার ইতিহাস : আলোচ্য গ্রন্থটি বাংলার সামাজিক জীবন ও সমাজ তথা রাষ্ট্রের যুগ পরিবর্তনের সাক্ষী। কারণ, বিপিনচন্দ্র উনবিংশ ও বিংশ দুটি শতাব্দীর পট পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন।

(ii) সংস্কৃতি : এই গ্ৰন্থ থেকে গ্রামীণ সংস্কৃতি অর্থাৎ দোল-দুর্গোৎসব, যাত্রাগান ও পুরাণপাঠ, বিবাহ প্রথার পাশাপাশি কলকাতার তৎকালীন সংস্কৃতি, খাদ্যাভ্যাস ও বিধিনিষেধ, মদ্যপান ও মদ্যপান নিবারণী সমিতির কথাও জানা যায়।

(iii) ব্রাহ্মসমাজের রাজনৈতিক আদর্শ : বিপিনচন্দ্র দেখিয়েছেন ইংরেজি শিক্ষিত বাঙালিরা নতুন সামাজিক আদর্শের সন্ধান পেয়েছিল। তৎকালীন ব্রাহ্মসমাজও এই শিক্ষিত বাঙালিদের মধ্যে স্বাধীনতার আদর্শের সার করেছিল।

(iv) ভারতসভা ও হিন্দুমেলা : ‘সত্তর বৎসর’ থেকে আনন্দমােহন বসু ও সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় -এর নেতৃত্বে ছাত্রসভা বা স্টুডেন্টস অ্যাসােসিয়েশন’ ও ‘ভারতসভা’ গঠনের কথা এবং নবগােপাল মিত্র ও তার প্রতিষ্ঠিত ‘হিন্দুমেলা’ নামক জাতীয়তাবাদী প্রতিষ্ঠানের কথাও জানা যায়।

সীমাবদ্ধতা : বিপিনচন্দ্র পালের সত্তর বৎসর গ্ৰন্থের প্রধান সীমাবদ্ধতা হল এটি তাঁর পূর্ণাঙ্গ আত্মজীবনী নয়। তাছাড়া তাঁর মূল রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে এই গ্ৰন্থ থেকে তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায় না।

উপসংহার :- সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও ১৮৫৮-১৮৮০ সময়কালের যে পারিপার্শ্বিক কাহিনী বিপিনচন্দ্র তাঁর আত্মজীবনীতে তুলে এনেছিলেন সামাজিক ইতিহাস রচনায় তার ঐতিহাসিক মূল্য ছিল অপরিসীম।

Rlearn Education