কিছু পরিচিত ইনফেকশান সম্পর্কে আলোচনা

আলোচ্য বিষয় :

  • ম্যালেরিয়া (Malaria)
  • ডেঙ্গু (Dengue)
  • টাইফয়েড (Typhoid)
  • হেপাটাইটিস (Hepatitis)
  • মাম্পস (mumps)
  • টিবি বা যক্ষ্মা(Tuberculosis)
  • স্ক্রাব টাইফাস (Scrub Typhus)
  • এনসেফালাইটিস(Encephalitis)|

কিছু পরিচিত ইনফেকশান :

অসুখ হাজার রকমের। তাঁর উপসর্গও
সেরকম রকমারি। চারদিকে নানান বিশেষজ্ঞের উপদেশ শুনে শুনে আপনি ক্লান্ত। এর ফলে হয়তো সামান্য কিছু হলেই আপনি ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ছেন; আবার অন্যদিকে হয়তো সাংঘাতিক অসুখের উপসর্গ শুরু হয়েছে, কিন্তু বুঝতে না পেরে নিশ্চিন্তে বসে আছেন। তাই পরিচিত কিছু অসুখের উপসর্গ এক ঝলক দেখে নিলে জীবনের পুরোটাই লাভ। এখানে সেইরকম কিছু অসুখের উপসর্গ নিয়েই আলোচনা করা হল।

আমাদের মতো ট্রপিক্যাল দেশে ইনফেক- শানের সংখ্যাই বেশি। ফলে এখানে নানা ইনফেকশানের প্রাথমিক উপসর্গ সবার একটু একটু জানা দরকার। ডেঙ্গুর মতো অনেক ইনফেকশান রয়েছে যেখানে রোগী হঠাৎ করেই খারাপ হয়ে যেতে পারে। ফলে চিকিৎসকের কাছে যেতে দেরি করলে প্রাণ- হানির আশঙ্কাও রয়েছে।

• ম্যালেরিয়া (Malaria) : এককালে ম্যালেরিয়া ছিল বাংলাদেশের আতঙ্ক। প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হতেন এবং গ্রামের পর গ্রাম খালি হয়ে যেত। এখন এর দাপট কমলেও মাঝে মাঝেই অতর্কিতে হানা দেয় এই মশাবাহিত রোগ। খুব বেশি জ্বর এবং কাঁপুনি, এই হল ম্যালেরিয়ার লক্ষণ। তবে কাঁপুনি সবসময়ে থাকে না। এর সঙ্গে, কিছু ক্ষেত্রে মাথাব্যথাবা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো উপসর্গ নিয়েও রোগী আসতে পারে। অনেকদিন ম্যালেরিয়া থাকলে প্লীহা বড় হয়ে যায়; তখন পেটের মধ্যে ব্যথা বা ভারী ভাব হতে পারে। ম্যালেরিয়ার ওষুধের মধ্যে একটি চোদ্দো দিন খেতে হয়। অনেকেই প্রথম তিনদিনের ওষুধ খেয়ে এই চোদ্দো দিনের ওষুধ মাঝপথে বন্ধ করে দেন। এদের শরীরে ম্যালেরিয়ার জীবাণু থেকে যায় এবং মাঝে মাঝেই জ্বর হিসাবে ফিরে আসে।

• ডেঙ্গু (Dengue) : বর্তমানে চলছে ডেঙ্গুর মহামারী। হাজার হাজার লোক আক্রান্ত হচ্ছেন এবং অনেকে মারা যাচ্ছেন। ডেঙ্গুতে জ্বর ছাড়া থাকে গায়ে হাত পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা। মাথায় এমন ব্যথা হতে পারে যে রোগী মাথা তুলতে পারেন না। এর সঙ্গে চামড়ায় র‍্যাশ, বমি, পেট ব্যথা ইত্যাদি হতে পারে। ডেঙ্গুতে প্লেটলেট কমে গিয়ে নানা স্থান থেকে রক্তপাত শুরু হতে পারে। হঠাৎ রক্তচাপ কমে রোগীর মাথা ঘুরে যেতে পারে বা শ্বাসকষ্ট শুরু হতে পারে। এবারের ডেঙ্গুতে দেখা যাচ্ছে যে অনেক রোগীর সারা গায়ে প্রচণ্ড চুলকানির উপসর্গ হচ্ছে।

• টাইফয়েড (Typhoid) : যেখানেই জল বা খাবারের পরিচ্ছন্নতা কম, সেখানেই টাইফয়েড। এই অসুখ সেই আদিকাল থেকে মানুষের নেমেসিস হয়ে দেখা দিয়েছে। টাইফয়েডের জ্বর দিন দিন বাড়তে থাকে। এর সঙ্গেই পেটে ব্যথা, বমি ইত্যাদি থাকে। যদি ঠিক সময়ে অ্যান্টি- বায়োটিক না দেওয়া হয়, রোগী অজ্ঞান হয়েও যেতে পারে।

আমাদের দেশে যেহেতু চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশান ছাড়াই যা খুশি অ্যান্টিবায়োটিক কেনা যায়, ফলে অনেকেই জ্বর হলে নিজে নিজে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে খেয়ে নেন। যদি আপনার টাইফয়েড ইনফেকশান থাকে, এর ফলে কিছুদিন জ্বর কমবে, কিন্তু তার পরেই জ্বর ফিরে ফিরে আসবে। এবং আস্তে আস্তে শরীর দুর্বল হয়ে যাবে, খিদে চলে যাবে। তাই টাইফয়েডের সঠিক পরীক্ষা তাড়াতাড়ি করা দরকার। টাইফয়েড হলে অনেকদিন খিদে একদম থাকে না।

হেপাটাইটিস (Hepatitis) : হেপাটাইটিস মানে হল লিভারের ইনফেকশান। নানা রকম ভাইরাল হেপাটাইটিস রয়েছে। কেউ আসে জল বা খাবার থেকে, আবার কেউ আসে রক্ত থেকে। যাই হোক, হেপাটাইটিস মানে হল লিভারের প্রদাহ। জন্ডিস হয়, পেটে ব্যথা হয়। এর সঙ্গে অল্প জ্বর থাকে, বমিভাব থাকে, কিছু ক্ষেত্রে পেট খারাপ থাকে। রোগীকেই লক্ষ্য করতে হবে যে প্রস্রাব হলুদ হচ্ছে কি না। সেই মতো চিকিৎসককে বলতে হবে। তবে ঠিক রক্ত পরীক্ষা করে অসুখ ধরা পড়বে। এই প্রস্রাব বা চোখ হলুদ ভাব কিন্তু অনেকদিন থাকতে পারে। খুব বেশি বাড়াবাড়ি হলে হেপাটাইটিস রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে, চামড়ার মধ্যে রক্তপাত হতে পারে। গর্ভবতী মহিলারা হেপাটাইটিস ইনফেকশানে আক্রান্ত হলে সমূহ বিপদ। নিয়ম হল, শিশু এবং গর্ভবতী মহিলাদের জন্ডিস কখওনই ফেলে রাখবেন না। অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

মাম্পস (mumps): বর্তমান সময়ে মাম্পসের টীকা দেওয়া হয়। তাও মাঝে মাঝে এই অসুখ দেখা যায়। এই অসুখে গালের একদিক বা দু’দিক ফুলে যায় এবং প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হয়। তার সঙ্গে অবশ্যই থাকে জ্বর। রোগী মুখ খুলতেই পারেন না। খাওয়া দাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। গলার ভেতরেও ব্যথা থাকে। সেই ব্যথা এবং ফোলা কমতে অন্তত সাত-দশ দিন সময় লাগে।

• টিবি বা যক্ষ্মা(Tuberculosis) :টিবি, অর্থাৎ যক্ষ্মা। মাইকোব্যাক্টেরিয়াম নামক একটি জীবাণুর সংক্রমণে এই অসুখ হয়। এটা হয়তো আমাদের দেশে অনেকেই জানেন যে টিবির প্রাথমিক লক্ষ্মণ হল জ্বর, কাশি এবং কিছু ক্ষেত্রে মুখ দিয়ে রক্ত পড়া। তবে কাশির সঙ্গে রক্ত মানেই টিবি নয়। ফুসফুসে ক্যান্সার হলেও এই উপসর্গ থাকতে পারে। আর এটাও মনে রাখবেন যে টিবি কিন্তু শুধু ফুসফুসে নয়, অন্য সব জায়গায় হতে পারে। গ্ল্যান্ডে হতে পারে, মাথায় হতে পারে, হাড়ে হতে পারে। শিরদাঁড়ায় টিবি হলে পিঠে প্রচণ্ড ব্যথা হয়, অনেক সময়ে নার্ভে চাপ লেগে রোগীর পা অসাড় হয়ে যেতে পারে। গ্ল্যান্ডে টিবি হলে গলায় বা পেটের ভেতর লিম্ফ গ্ল্যান্ড ফুলে যায়। গলার গ্ল্যান্ড অনেক সময়ে ফেটে গিয়ে ঘা হয়ে যায় এবং বহুদিন ধরে পুঁজ-রক্ত ঝরতে থাকে। টিবি থেকেপেটে বা বুকে জল জমে যেতে পারে, বৃহদাস্ত্রের মধ্যে টিবি হলে খাদ্যনালী আটকে যেতে পারে। টিবির লক্ষণ বুঝতে অনেক সময়ে খুব অভিজ্ঞ চিকিৎসকেরও দেরি হয়। তবে নিয়ম হল যদি বার বার জ্বর আসে, ওজন কমে যায়, খিদে কমে যায় বা বারবার কাশি হতে থাকে, অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।

স্ক্রাব টাইফাস (Scrub Typhus):

এই একটি ইনফেকশান এখন ভারতের অনেক জায়গায় দেখা যাচ্ছে। বর্ষাকালে এবং তার পরেও কিছুদিন এই সংক্রমণের প্রাদুর্ভাব থাকে। এটি এক ধরনের মাকড়ের কামড়
থেকে হয়। বাঁশবন বা আগাছার জঙ্গলের মধ্যে এই মাকড় থাকে। এগুলি এত ছোট যে খালি চোখে দেখা যায় না। এই ইনফেকশানের উপসর্গ শুরু হয় জ্বর দিয়ে। তার সঙ্গেই জন্ডিস, কিডনির সমস্যা ইত্যাদি থাকতে পারে। তাছাড়া অনেক ক্ষেত্রে রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতেও পারে। স্ক্রাব টাইফাসে চামড়ায় একরকমের কালো ‘এশকার’ নামক র‍্যাশ দেখা যায়। তবে খুব অভিজ্ঞ চোখ ছাড়া সেই র‍্যাশ চেনা মুশকিল। কিছু ক্ষেত্রে স্ক্রাব টাইফাসে ফুসফুসের প্রদাহ হতে পারে।

এনসেফালাইটিস(Encephalitis) : এখন ভারতে এই অসুখের টীকা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তাও অনেক জায়গায় শিশুদের মধ্যে এই ইনফেকশান দেখা যায়। এর লক্ষণ হল জ্বর, মাথায় ব্যথা এবং খিঁচুনি। অনেক সময়ে খিঁচুনির পরেও রোগীর জ্ঞান ফেরে না। আবার অনেক সময়ে রোগী অজ্ঞান না হলেও জ্বরের সঙ্গে সঙ্গেই উল্টোপাল্টা কথা বলা শুরু করে। কিছু ক্ষেত্রে হাত বা পায়ের পক্ষাঘাত হয়ে
যেতে পারে।

Rlearn Education