চিকিৎসাবিদ্যার ক্ষেত্রে কলকাতা মেডিকেল কলেজের ভূমিকা

চিকিৎসাবিদ্যার ক্ষেত্রে কলকাতা মেডিকেল কলেজের ভূমিকা : মাধ্যমিক ইতিহাস

প্রশ্ন:- দেশের চিকিৎসাবিদ্যার ক্ষেত্রে কলকাতা মেডিকেল কলেজের কীরূপ ভূমিকা ছিল? (মাধ্যমিক 2018)

ভূমিকা : উনিশ শতকের সূচনালগ্নেও ভারতে প্রাচীন দেশীয় চিকিৎসাব্যবস্থার প্রচলন ছিল। পরবর্তীকালে ভারত -এর বড়োলাট লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করলে ভারতে আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যার পথচলা শুরু হয়।

উদ্দেশ্য: কলকাতা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল ভারতীয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইংরেজি ভাষায় ইউরোপীয় চিকিৎসাশাস্ত্রে শিক্ষাদান ও রোগ নিরাময় করা।

সরকারি উদ্যোগ: ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেশীয় চিকিৎসাশাস্ত্রে শিক্ষাদানের জন্য সরকার অর্থব্যয় বন্ধ করে দেয়। ফলে প্রাচীন দেশীয় চিকিৎসাশাস্ত্রের পরিবর্তে পাশ্চাত্যের আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যা এদেশে দ্রুত প্রসার লাভ করে।

ইউরোপীয় চিকিৎসাবিদ্যা: কলকাতা মেডিকেল কলেজে দেশীয় চিকিৎসাবিদ্যার পরিবর্তে ইউরোপের উন্নত চিকিৎসাবিদ্যার শিক্ষাদান শুরু হয়। পণ্ডিচেরীর পর কলকাতা মেডিকেল কলেজ হল এশিয়া মহাদেশের দ্বিতীয় কলেজ যেখানে আধুনিক ইউরোপীয় চিকিৎসাবিদ্যা শেখানো হত।

ছাত্রদের অবদান: কলকাতা মেডিকেল কলেজ থেকে প্রথম ব্যাচে পাস করে উমাচরণ শেঠ, রাজকৃষ্ণ দে, দ্বারকানাথ গুপ্ত প্রমুখ ঢাকা, চট্টগ্রাম, মুরশিদাবাদ, পাটনা প্রভৃতি বিভিন্ন স্থানের হাসপাতালে ডাক্তার হিসেবে নিযুক্ত হন এবং আধুনিক পাশ্চাত্য চিকিৎসার প্রসার ঘটান। ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে রহিম খান প্রথম মুসলিম ছাত্র হিসেবে এখান থেকে ডাক্তারি পাস করেন।

কুসংস্কারবিরোধী ভূমিকা: এই কলেজের ছাত্র মধুসুদন গুপ্ত প্রথম শব ব্যবচ্ছেদ করে যুগান্তকারী ঘটনা ঘটিয়ে নবযুগের সূচনা করেন।

নতুন চিকিৎসকের উদ্ভব: কলকাতা মেডিকেল কলেজ থকে চিকিৎসাবিদ্যায় ডিগ্রি লাভ করে প্রতিবছর বহু যুবক দেশের বিভিন্ন প্রান্তের চিকিৎসাকেন্দ্র গুলিতে চিকিৎসক হিসেবে নিযুক্ত হন।

মহিলা ডাক্তার: কাদম্বিনী গাঙ্গুলী, বিধুমুখী বসু প্রমুখ বাঙালি মেয়েরাও চিকিৎসা ক্ষেত্রে শিক্ষার জন্য এগিয়ে আসেন।

উপসংহার : আধুনিক উন্নত চিকিৎসাবিদ্যার প্রসারে কলকাতা মেডিকেল কলেজ নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এই কলেজের উন্নত চিকিৎসা বিদ্যার ফলে বাংলা তথা ভারতের চিকিৎসা বিদ্যার অগ্রগতির ক্ষেত্রে এক নবযুগের সূচনা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *