মতি নন্দীর কোনি উপন্যাস : মাধ্যমিক বাংলা

মাধ্যমিক বাংলা সাজেশান : কোনি

কোনি উপন্যাস অবলম্বনে কোনির চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো ।

উত্তর: বাংলা কথা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় লেখক মতি নন্দী প্রণীত ‘কোনি’ উপন্যাসের প্রধান চরিত্র হলো কোনি। ক্ষিতীশের অভিভাবকত্বে সকল বাধা জয় করে জীবনের জয়স্তম্ভে পদার্পণই ‘কোনি’ উপন্যাসের মূল উপজীব্য। কোনির চরিত্র বিশ্লেষণ করলে যে বৈশিষ্ট্যগুলি পাওয়া যায় তা নিম্নরূপ-

কঠোর জীবন সংগ্রাম: কোনি ওরফে কনকচাঁপা পাল অতি দারিদ্র্যপীড়িত সংসারের মেয়ে। চেহারা ছেলেদের মতো,মেয়েমদ্দানি। কোনো কিছুতেই ভয়ে পিছুপা হয়না । কঠোর সংগ্রামের ফলেই সে শেষ পর্যন্ত জয় লাভ করে।

চারিত্রিক দৃঢ়তা : কোনি দৃঢ় চরিত্রের অধিকারী । গঙ্গায় আম কুড়ানো নিয়ে ঝগড়াই হোক বা হিয়া মিত্রের হাতে আঘাত করে জল ফেলে দেওয়া সব কিছুর মধ্যেই তাঁর চারিত্রিক দৃঢ়তা প্রকাশিত।

পরিবারের প্রতি দায়বদ্ধতা :পরিবারের অন্নসংস্থানের জন্য কোনি ট্রেনিং- এর পরই ছুটে যায় প্রজাপতিতে কাজ করার জন্য। ক্ষিতীশ তার জন্য পুষ্টিকর খাদ্যের ব্যবস্থা করলে সে খাদ্যের বদলে একটা টাকা চেয়ে নেই চাল কেনার জন্য ।

প্রখর আত্মসম্মানবোধ : কোনির আত্ম- সম্মানবোধ ছিল প্রখর। মাদ্রাজে জাতীয় স্তরে খেলতে গিয়ে হিয়ার জন্য যখন চোর বদনাম পেয়ে চড় খায় তখন হিয়াকেও সে চড় না ফিরিয়ে দিয়ে ছাড়ে না। চিড়িয়াখানার ঘটনাতেও তার আত্মসম্মানবোধ প্রকাশ পেয়েছে।

পরিশ্রমী ও কষ্টসহিষ্ণু : কোনি ছিল অসম্ভব পরিশ্রমী । পারিবারিক দারিদ্র্য, নিজের ক্ষুধাকে হারিয়েও সে নিজেকে পরিশ্রমে যুক্ত রাখে। কঠোর পরিশ্রমের ফলেই কোনি জয়মাল্য ছিনিয়ে নেয়।

প্রতিবাদী : অপমান অবহেলা সমস্ত কিছুর প্রতিবাদ সে করেছে তার সাঁতারের মাধ্যমে।

কোনির নিষ্ঠা ,একাগ্রতা ,লড়াকু পরিশ্রমী মানসিকতা চরিত্রটিকে আমার চোখে বিজয়িনী নায়িকাতে পরিণত করেছে।

“এটা বুকের মধ্যে পুষে রাখুক ।” — কী পুষে রাখার কথা বলা হয়েছে ? কী কারণে এই পুষে রাখা ? (মাধ্যমিক-২০১৯)

অথবা, “এরপর ক্ষিতীশ লক্ষ করল কোনি জল থেকে উঠতে দেরি করছে।” – কোন ঘটনার পর কোনির এই পরিবর্তন ঘটে ?

অথবা, “এটাই ওকে উত্তেজিত করে বোমার মত ফাটিয়ে দেবে আসল সময়ে।”- এই ভাবনাটি কার ছিল ? কোন্ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই ভাবনা তা আলোচনা করো।

উত্তর: ‘কোনি’ উপন্যাসে ক্ষিতীশ সিংহ কোনিকে নিয়ে চিড়িয়াখানায় বেড়াতে গিয়েছিলেন । সেখানে তিন ঘন্টা ঘোরার পর দুজনে বাড়ি থেকে নিয়ে আসা খাবার খেতে বসেছিল । কিন্তু তাদের সঙ্গে খাবার জল ছিল না । এমত অবস্থায় কোনি তাদের পাশে খেতে বসা ছাত্রীদলের কাছে জল চাইতে যায়, কিন্তু একজন দিদিমণি তাকে ফিরিয়ে দেয় । পরে ওই দলের হিয়া মিত্র নামের একটি মেয়ে কোনিকে জল দিতে আসলে কোনি আগের অপমানের জবাব হিসেবে ওই জলের গ্লাস ফেলে দেয় । হিয়ার প্রতি কোনির যে আক্রোশ প্রকাশ পেল জলের গ্লাস ফেলে দেওয়ার মধ্য দিয়ে রাগটাই মনের মধ্যে পুষে রাখার কথা বলা হয়েছে ।


কোনি হিয়া মিত্রকে চিনত না, কিন্তু ক্ষিতীশ সিংহ এই হিয়া মিত্রকে চিনত । শুধু চিনতই না, সে জানত কোনির থেকে হিয়া মিত্র সাঁতারে অনেক ভালো অবস্থানে আছে । রবীন্দ্র সরোবরের সাঁতার প্রতিযোগিতায় হিয়ার সাঁতার ক্ষিতীশ সিংহ দেখেছে । বালিগঞ্জ সুইমিং ক্লাবে গিয়েও সে হিয়ার ট্রেনিং দেখে এসেছে । তাই ক্ষিতীশ সিংহ মনে করেছিল হিয়াই কোনির ভবিষ্যৎ প্রতিদ্বন্দ্বি । এই অপমানের যন্ত্রণাই কোনিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে । তাই হিয়া মিত্রকে হারিয়ে অপমানের প্রতিশোধ নেবার বাসনা জাগিয়ে রাখবার জন্যই ক্ষিতীশ সিংহ এই অপমানটাকে পুষে রাখতে বলেছিল ।

“তোর আসল লজ্জা জলে আসল গর্বও জলে।”- কোন প্রসঙ্গে এই উক্তি? উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

উত্তর: বিশিষ্ট ক্রীড়া সাংবাদিক ও উপন্যাসিক মতি নন্দী রচিত ‘কোনি’ উপন্যাসের দশম পরিচ্ছেদ থেকে আলোচ্য অংশটি নেওয়া হয়েছে । কোনি ৪০ টাকার বিনিময়ে লীলাবতীর টেলারিং শপ ‘প্রজাপতি’তে ঝাঁট দেয় ও ফাইফরমাশ খাটে। একদিন অমিয়া ওই দোকানে ব্লাউজ তৈরি করাতে এসেছিল।কোনিকে সেখানে দেখে অমিয়া বলেছিল- “তুই এখানে ঝিয়ের কাজ করিস।” এই কথায় কোনি খুব লজ্জা পেয়েছিল । ক্ষিতীশ তাকে সান্তনা দিতে প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেছেন।

কোনি সম্ভাবনাময় সাঁতারু। তার সম্পর্ক জলের সঙ্গে। যার যেখানে অবস্থান তার লজ্জা এবং সম্মান সেখানেই। একজন ক্রিকেটার বা ফুটবলারের সম্মান, লজ্জা, গর্ব খেলার মাঠেই। দোকানে ঝিয়ের কাজ করে বলে কোনিকে তাচ্ছিল্য করেছিল অমিয়া ।কিন্তু সেটা তার প্রকৃত কর্মক্ষেত্র নয় । সেখানে তার সাফল্য , ব্যর্থতা বা গর্বের কোন স্থান নেই। কেননা কোনি প্রতিভাবান সাঁতারু। যেহেতু সাঁতারের সঙ্গে জলের সম্পর্ক নির্দিষ্ট তাই কোনির সাফল্য-ব্যর্থতা জলেই সীমাবদ্ধ। সাঁতারে ব্যর্থ হলে তার লজ্জিত হওয়া উচিত, আবার সাফল্য লাভ করলে গর্ব। কোনির মনে প্রেরণার সঞ্চার করতে কোনির মনে প্রাণ সঞ্চার করতে ক্ষিতীশ বলেছে অমিয়ার কথায় লজ্জিত না হয়ে সাঁতারটা মন দিয়ে করতে। জলের বাইরে কোনির কোনো লজ্জা বা গর্বের কোনো কিছু নেই।

Rlearn Education