কোনি উপন্যাস : রচনাধর্মী প্রশ্ন

মতি নন্দীর কোনি উপন্যাস :

পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদের দশম শ্রেণির বাংলা পাঠ্যসূচি অনুযায়ী কোনি উপন্যাস থেকে দুটি ৫ নম্বরের রচনাধর্মী প্রশ্নের উত্তর করতে হয়। এই উপন্যাস থেকে কোনো ছোটো প্রশ্ন আসবে না, তাই মূল পুস্তকটি পড়ার সময় গুরুত্বপূর্ন ঘটনাক্রমগুলি মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে। এখানে ‘কোনি’ উপন্যাস থেকে গুরুত্বপূর্ণ রচনাধর্মী প্রশ্নগুলি তুলে ধরা হল।

‘কোনি’ উপন্যাসের কাহিনি অবলম্বনে স্বামীর যােগ্য সহধর্মিণী রূপে লীলাবতীর পরিচয় দাও। [মাধ্যমিক ২০১৯]

উত্তরঃ সাংবাদিক-সাহিত্যিক মতি নন্দীর ‘কোনি’ উপন্যাসের অন্যতম প্রধান চরিত্র ক্ষিতীশ সিংহ ছিলেন জুপিটার ক্লাবের একজন সাঁতার প্রশিক্ষক। নিঃসন্তান ক্ষিতীশের পরিবারে তার স্ত্রী লীলাবতীই ছিল প্রকৃত কর্ত্রী। কোনির সাঁতারু হওয়ার পিছনে যেমন ক্ষিতীশের অবদান সবথেকে বেশি ছিল, তেমনি ক্ষিতীশের জীবনে লীলাবতীর প্রভাব ছিল অপিরিসীম। লীলাবতীর যেসব গুণাবলী সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সেগুলি হল-

উপার্জনকারী : লীলাবতী স্ত্রী হয়েও সংসারের ভরণপোষণের ভার নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিল। ক্ষিতীশ যখন ব্যবসা দেখাশোনা করত, তাদের পারিবারিক দর্জির দোকান ‘সিনহা টেলারিং’ প্রায় ডুবতে বসেছিল এবং ঠিক তখনই লীলাবতী এসে শক্ত হাতে তার হাল ধরেছিল। এখন দোকানের নাম বদলে রাখা হয়েছে ‘প্রজাপতি’ এবং সেই প্রজাপতি রীতিমতো ডানা মেলে উড়তে শুরু করেছে। লীলাবতীর তীক্ষ্ণ ব্যবসায়িক বুদ্ধির ফলেই তাদের অবস্থার উন্নতি হয়েছে।

সংসারের কর্ত্রী: দোকান সামলানোর পাশাপাশি লীলাবতী সংসারের কর্ত্রী। ক্ষিতীশ যেরকম সারাক্ষণ ক্লাব নিয়ে ব্যস্ত থাকে, লীলাবতী যদি সংসারের দিকে বিশেষ নজর না দেয় তবে কোনো কাজই ঠিকমতো হবে না।

স্বামীর অনুগত: লীলাবতী একটু ভোজনরসিক কিন্তু ক্ষিতীশ তার বিপরীত স্বভাবের। লীলাবতী তেলমশলা দিয়ে খাবার খেতেই পছন্দ করে। আবার, ক্ষিতীশের তেলমশলা একেবারেই পছন্দ নয়। প্রথম প্রথম লীলাবতী এসবের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। শেষপর্যন্ত লীলাবতী স্বামীর কথামতোই তেলমশলা বিহীন খাবারেই অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। শুধু তাই নয়, ক্ষিতীশের আপত্তি সত্বেও সে স্বামীর এঁটো থালায় নিজে খাবার খায়।

স্বামীর সমর্থক : ক্ষিতীশের ক্লাবে যাওয়া নিয়ে তার স্ত্রী লীলাবতীর একটু আপত্তি ছিলই। যখন সে ব্যবসা দেখাশোনা করত, তখন দুপুর ছাড়া বাকি সময়টা ক্লাবেই কাটাতো। এইজন্য তাদের ব্যবসাও ভরাডুবি হয়েছিল। ভালো সাঁতারু তৈরি করার নেশায় ক্ষিতীশ নিজের পরিবারের দিকেও মনোযোগ দিতে পারেনি। কিন্তু এসব সত্বেও এই অপনভোলা, আদ্যোপান্ত ক্রীড়াপ্রেমী মানুষটিকে লীলাবতী সমর্থনই করত, তার পাগলামিটা যেন মনে মনে উপভোগ করত। তাই কমলদীঘিতে কোনির সাঁতার দেখতেও হাজির হয়েছিল লীলাবতী।

সহমর্মী : কমলের মৃত্যুর পর কোনির পরিবার যখন পায়ের তলায় মাটি হারিয়েছিল, তখন ক্ষিতীশ তাদেরকে বুক দিয়ে আগলেছিল। কোনিকে নিজের ঘরে রেখে সাঁতার শেখার ব্যবস্থা করার পাশাপাশি তাদের পরিবারের অন্নসংস্থানের বন্দোবস্ত করেছিল ক্ষিতীশ। আর, এই কাজে ক্ষিতীশের পাশে ছিল তার স্ত্রী লীলাবতী।
সর্বোপরি, স্বামীর যোগ্য সহধর্মিণী হিসেবে লীলাবতী ক্ষিতীশকে সেই অবসরটুকু দিয়েছে যাতে ক্ষিতীশ ভালো মানের সাঁতারু তৈরি করতে পারে।

কোনির পারিবারিক জীবনের পরিচয় দাও। [মাধ্যমিক ২০১৭]


উত্তরঃ সাহিত্যিক মতি নন্দী রচিত ‘কোনি’ উপন্যাসের প্রধান চরিত্র কনকচাঁপা পাল বা কোনি একজন দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তাদের পরিবারকে দরিদ্র বললে কম বলা হবে, বরং বলা যেতে পারে, ‘খেয়ে-পরে বেঁচে থাকাটা যাদের কাছে বিলাসিতা’, তেমনই একটি পরিবারের সন্তান কোনি।
কোনিদের বাসস্থান শ্যামপুকুর বস্তিতে। সাত ভাই-বোনের মধ্যে কোনি চতুর্থ। বড় ভাই কমল রাজাবাজারে একটা মোটর গ্যারেজে কাজ করে মাসে শ’ দেড়েক টাকা উপার্জন করে, তাতেই তাদের পরিবারের অন্নসংস্থান হয়; মেজো ভাই ট্রেনের ইলেকট্রিক তারে প্রাণ হারিয়েছে আর সেজো থাকে পিসির বাড়িতে কাঁচরাপাড়ায়। কোনির পরেও রয়েছে দুই বোন এবং এক ভাই। টি. বি রোগে আক্রান্ত হয়ে কোনির বাবা আগেই গত হয়েছেন। মা আর বাকি ভাইবোনদের সঙ্গে কোনি থাকে বস্তির স্যাঁতসেঁতে ঝুপড়িতে।

একসময় কমলেরও শখ ছিল নামকরা সাঁতারু হওয়ার, অ্যাপেলোতে প্রশিক্ষণ নিত সে। কিন্তু তার বাবার অকাল মৃত্যুতে সাঁতার শেখা আর হয়ে ওঠে না, এমনকি তাকে স্কুলও ছাড়তে হয়। ইচ্ছে থাকলেও কোনিকে সাঁতার শেখানোর মতো সামর্থ্য তার ছিল না।
বাবার পথ অনুসরণ করে বড় ভাই কমলও টি.বি রোগে মারা যায়। কোনিদের পরিবার চরম দুর্দিনের মুখোমুখি হয়। এইসময় ক্ষিতীশ দেবদূতের মতো তাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল এবং কোনির প্রশিক্ষণ সহ তাদের পরিবারের অন্নসংস্থানের বন্দোবস্ত করে দিয়েছিল।

Rlearn Education