লেখায় ও রেখায় ভারতে জাতীয়তাবাদের বিকাশ আলোচনা

Madhyamik History Suggestion

ভূমিকা :

ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর অসন্তোষের ফলশ্রুতিতে ভারতের জাতীয়তাবোধ তথা জাতীয় চেতনার উন্মেষ ঘটতে থাকে। আর এই জাতীয়তাবাদের বিকাশে সাহিত্য সংস্কৃতি এক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল। বিভিন্ন সাহিত্যিক ও শিল্পী তাদের লেখনি ও চিত্রকলার দ্বারা ভারতীয়দের মনে জাতীয় চেতনার উন্মেষ ঘটিয়েছিল।

লেখায় ও রেখায় জাতীয়তাবাদের বিকাশ :

১. আনন্দমঠ (১৮৮২ খ্রি:)-

সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ছিয়াত্তরের মন্বন্তর ও সন্ন্যাসী বিদ্রোহের পটভূমিকায় আনন্দমঠ উপন্যাসটি রচনা করেন। বঙ্কিমচন্দ্র তার এই বিখ্যাত উপন্যাসের দেশমাতৃকার যে বর্ণনা প্রদান করেন এবং যেভাবে দেশপ্রেমকে মুক্তিকামী জনগণের মধ্যে পরিস্ফুট করেছেন তা অকল্পনীয়। তার এই উপন্যাসে বিদেশিদের হাত থেকে দেশমাতাকে মুক্ত করার উদ্দেশ্যে সন্তান দলের আদর্শ কাজ করেছিল। বঙ্কিমচন্দ্র তার এই উপন্যাসে ‘বন্দেমাতরম’ সঙ্গীতের দ্বারা দেশাত্মবোধের মন্ত্র প্রদান করেছেন।

২. বর্তমান ভারত (১৯০৫ খ্রি:)-

বিশ্ববরেণ্য ভারত সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দ রচিত ‘বর্তমান ভারত’ গ্রন্থটি আকারে ক্ষুদ্র, স্বামী বিবেকানন্দের জীবনের মতই সংক্ষিপ্ত এবং তার জীবনের মতই শক্তি ও সম্ভাবনাই স্পন্দিত। এই গ্রন্থের স্বামীজি ভারত ও বিশ্বের ইতিহাস মন্থন করে ইতিহাসের গতি প্রকৃতি সম্পর্কে তার ধারণাকে সঙ্গত আকারে প্রকাশ করেছেন। তিনি ভারতীয় যুব সমাজকে তার লেখার মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করেছেন। এছাড়া তিনি পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর শূদ্রদের মধ্যে সমাজ সাম্রাজ্য পরিচালনা সুদৃস্ট রূপে তুলে ধরতে সচেষ্ট হয়েছেন।


৩. গোরা (১৯১০ খ্রি:)-

ভারতীয় সাহিত্যের সর্বোজ্বল নক্ষত্র নোবেল জয়ী বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা উজ্জ্বলতম দৃষ্টান্ত হলো ‘গোরা’। রবীন্দ্রনাথ তার বিভিন্ন রচনার মাধ্যমে ভারতীয়দের মধ্যে দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদ জাগরণ এক মঞ্চ প্রস্তুত করেছিলেন। তিনি সাধারণ মানুষের মধ্যে ভারতবর্ষে প্রকৃত সত্যের পরিচয় ও দেশপ্রেমের আদর্শ তুলে ধরার মাধ্যমে ভারতবর্ষ তথা বাংলাকে বিশ্বের জনমানুষের কাছে জ্যোতির্ময়ী করে তুলেছিলেন।

৪. ভারতমাতা-

শুধুমাত্র লেখার মাধ্যমে নয় রেখার দারাও জনমানুষের মধ্যে জাতীয়তাবাদের বিকাশ তা বাস্তব ক্ষেত্রে তুলে ধরেছিলেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তার সর্বশ্রেষ্ঠ চিত্র হিসেবে পরিগণিত ‘ভারতমাতা’ যেখানে তার তুলির টানে তিনি দেশমাতৃকার বন্দনা তুলে ধরেছেন। এই চিত্রে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর এক সন্তানের প্রতি মায়ের দায়িত্ববোধ ও কর্তব্য যথাযোগ্যভাবে দৃশ্যতা করেছেন।

৫. গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যঙ্গচিত্র-

বাংলা তথা ভারতবর্ষের চিত্রশিল্পের ইতিহাসে সর্বকালীন শ্রেষ্ঠ ব্যঙ্গচিত্র শিল্পীদের মধ্যে গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর এক উজ্জ্বল নাম। তৎকালীন সময়ে ইংরেজদের অত্যাচার, জমিদারদের আচরণ, সাধারণ মানুষদের অবস্থা তার শিল্পী সত্তার মাধ্যমে তিনি ব্যঙ্গাত্মক রূপে তুলে ধরেছিলেন। তার এরূপ কিছু উল্লেখযোগ্য ব্যঙ্গচিত্র হলো- বিরূপ বজ্র, নবহুল্লোড়, ভোঁদড় বাহাদুর প্রভৃতি। তৎকালীন বিভিন্ন গ্রন্থে এবং সংবাদপত্রে তার ব্যঙ্গচিত্র জনগণের যথেষ্ট আলোড়ন জাগাতে সচেষ্ট হয়েছিল।


মূল্যায়ন-

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দার্শনিক সমাজ নানাভাবে বিপ্লব গড়ে তুলতে সাধারণ মানুষদের উদ্বুদ্ধ করে গেছেন। ভারতবর্ষও এর ব্যতিক্রম নয়। ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের বিকাশের প্রাক্কালে ভারতীয় বুদ্ধিজীবী সমাজ ও লেখক সাধারণজন মানুষের মধ্যে তাদের দায়িত্ববোধ কর্তব্য সুনির্দিষ্টভাবে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছিলেন। যার ফলস্বরূপ একের পর এক বৈপ্লবিক আন্দোলনের মাধ্যমে আজকে আমরা স্বাধীন ভারতবর্ষে বসবাসের সুযোগ লাভ করেছি।

Rlearn Education