মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চা : বাংলা রচনা

রচনা সংকেত :

  • ভূমিকা
  • মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চার গুরুত্ব
  • প্রাচীন ভারতে মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চা
  • বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চার সূত্রপাত
  • বিজ্ঞানের পরিভাষায় নির্মাণ
  • প্রতিবন্ধকতা
  • উপসংহার |

মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চা : বাংলা রচনা

ভূমিকা : শিক্ষার সঙ্গে মাতৃভাষা ওতপ্রোত- ভাবে জড়িত। সব শিক্ষাবিদই মনে করেন, মাতৃভাষা শিক্ষার অন্যতম বাহন। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ। J.R.Firth মন্তব্য করেছেন, ‘As a first principle, fix your faith to the mother tongue’। রবীন্দ্রনাথ তাঁর স্বকীয় ভঙ্গিতে বলে গেছেন, “শিক্ষায় মাতৃভাষাই মাতৃদুগ্ধ’। UNESCO সিদ্ধান্ত প্রকাশ করেছে, “The best medium for teaching is the mother tongue of the pupil’.

মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চার গুরত্ব :
মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চার প্রয়োজনীয়তা খুব গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ বিজ্ঞানের দ্বারা অনেক কিছু জানতে পেরেছে শিখতে পেরেছে। কেবল আমাদের জীবনের ক্ষেত্রে নয় বিজ্ঞানচেতনা আমাদের শিক্ষার ক্ষেত্রে নিয়ে এসেছে বিপুল পরিবর্তন।

আমাদের দেশ যে কুসংস্কারে আচ্ছন্ন ছিল তা এই বিজ্ঞানের দ্বারা মানুষ ঐ সমস্ত কুসংস্কারগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছে এবং ঐ সমস্ত কুসংস্কারগুলো কে ভালোভাবে বুঝতে শিখেছে। বিজ্ঞান চিন্তা ও বিজ্ঞান চেতনার প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মনের কুসংস্কার কেটে যায়। বিজ্ঞানচেতনা কেবলমাত্র শুধু আমাদের শারীরিক অসুখ থেকে নিজেদেরকে বাচ্চাই না নানা রকম মানসিক রোগের বিজ্ঞান চর্চার মাধ্যমে নিরাময় ঘটে থাকে।

প্রাচীন ভারতে মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চা:
প্রাচীন ভারতে মানুষের মাতৃভাষা ছিল সংস্কৃত। তাই সে কালে এই সংস্কৃত ভাষায় বিজ্ঞান চর্চা চলত। প্রাচীন ভারতে চড়ক, নাগার্জুন সংস্কৃত ভাষাতেই তাদের গ্রন্থসমূহ গুলি লিখেছিলেন। সে যুগে সভ্যতার ধারাবাহিক উন্নতির পেছনে ছিল মাতৃভাষায় জ্ঞানচর্চা।

কিন্তু প্রাচীন যুগের শেষের দিকে সংস্কৃত ভাষার প্রতি মানুষের অবহেলা বাড়তে থাকল ফলে মাতৃভাষায় জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার পথ রুদ্ধ হয়ে গেল।

বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চার সূত্রপাত : বিজ্ঞান চর্চার ধারা একটা সময় স্তব্ধ হয়ে গেলেও ইংরেজদের সংস্পর্শে এসে তার প্রসার ঘটলো। শ্রীরামপুর মিশনে ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে বিজ্ঞানচিন্তার মুক্তি ঘটলো। একেবারে প্রথম পর্বে বিজ্ঞানের পরিভাষা নির্মাণে যিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন তিনি হলেন – অক্ষয় কুমার দত্ত। আজ যারা তাকে অনুসরণ করেছিলেন তারা হলেন কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজেন্দ্রলাল মিত্র, ভূদেব মুখোপাধ্যায়, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রমূখ।

পরবর্তীকালে যে সকল ব্যক্তিরা বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিলেন তাদের গ্রন্থ লেখার মাধ্যমে তারা হলেন এবং তাদের গ্রন্থ গুলি হল – জগদীশচন্দ্র বসুর ” অবক্ত ” , রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর ” জিজ্ঞাসা “, জগনানন্দ রায়ের ” বৈজ্ঞানিকী “,রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ” বিশ্বপরিচয় “, চারুচন্দ্র ভট্টাচার্যের ” নব্য বিজ্ঞান ” ইত্যাদি। এছাড়াও যারা মাছ বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে উল্লেখ- যোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন তাঁরা হলেন প্রফুল্ল চন্দ্র রায় ও সত্যেন্দ্রনাথ বসু।

বিজ্ঞানের পরিভাষায় নির্মাণ : মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চা করতে গেলে প্রথমে পরিভাষা সংক্রান্ত বিষয় সম্পর্কে জানতে হবে। যেসব শব্দের পরিভাষা কঠিন সে ক্ষেত্রে ইংরেজী শব্দ কে বাংলায় লিখতে হবে। যেমন অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন এর জায়গায় অম্লজান ও উদজ্যান লেখা ঠিক হবে না কারণ এই দুটি শব্দ ইংরেজি নামে পরিচিত।
তাছাড়া বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু ও প্রফুল্ল চন্দ্র রায় দেখিয়েছেন কত সহজে মাতৃভাষার মাধ্যমে বিজ্ঞান চর্চা করা যায় ও একে আকর্ষণীয় করে তোলা যায়।

প্রতিবন্ধকতা : একথা ঠিক আমাদের দেশে বিজ্ঞান চর্চার প্রচার যতটা হওয়া উচিত ছিল তা কিন্তু হয়নি। তার কারণ দেশ-বিদেশে বিজ্ঞান চর্চা ও তার প্রকাশ ইংরেজিতে হয়। তার কিছু সুবিধাও আছে সংগত কারনেই বাংলায় বিজ্ঞান চর্চা সে ভাবে এগোতে পারিনি বিজ্ঞান চর্চা করতে গেলে যে প্রতিভার প্রয়োজন হয় তা ধারাবাহিকভাবে বাংলায় ঠিকভাবে আসেনি।

উপসংহার : জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে গেলে, মানুষকে জ্ঞানবুদ্ধির আলােকে উদ্দীপিত করতে হলে, জাতির উন্নতিকে ত্বরান্বিত করতে হলে মাতৃভাষায় বিজ্ঞান-চর্চার গুরুত্ব অপরিসীম। প্রতিবন্ধকতাকে সরিয়ে রেখে সে কাজ আমাদের করতেই হবে।

মাধ্যমিক বাংলা রচনা সাজেশান | বাংলা রচনা | Madhyamik bangla Rochona Suggestion| WBBSE Bengali Rochona Suggestion| Class Ten Bangla Suggestion| Dosom srenir Bangla Rochona | Class Ten Bengali Rochona| Bigganer Obodan Rochona| Matri bhasai Biggan Chorcha Rochona Suggestion|Madhyamik Bengali Rochona| Class Ten Bengali Rochona

Rlearn Education