মৃত্তিকা ক্ষয়, মৃত্তিকা ক্ষয়ের কারণ | Soil erosion, causes of soil erosion

মৃত্তিকা ক্ষয়ের কারণ ও ফলাফল : মাধ্যমিক ভূগোল

মৃত্তিকা ক্ষয়ের ধারণা (Concept of Soil erosion):

প্রাকৃতিক অথবা মনুষ্যসৃষ্ট কারণে, যেমন- বৃক্ষছেদন, পশুচারণ, কৃষিকাজ প্রভৃতির ফলে মৃত্তিকার উপরের স্তর অপসারিত ও স্থানান্তরিত হলে,তাকে মৃত্তিকা ক্ষয় বলে। যেমন- প্রবাহমান জলধারা, বায়ুপ্রবাহ, প্রভৃতি মৃত্তিকা ক্ষয়ের প্রধান শক্তি।

A. মৃত্তিকা ক্ষয়ের প্রাকৃতিক কারণ :

(i) প্রবাহমান জলধারা- ভূপৃষ্ঠের উপরে নদী বা বৃষ্টির প্রবাহমান জলধারা মাটির উপরের স্তর অপসারিত করে।

(iii) বৃষ্টিপাতের প্রকৃতি— যেসব অঞ্চলে বৃষ্টিপাত এর প্রকোপ বেশি, এছাড়া বৃষ্টির ফোঁটার আকার বড় হলে সেখানে মুক্তিকা দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলে এরূপ মৃত্তিকা ক্ষয় অধিক দেখা যায়।

(ii) বায়ুপ্রবাহ জনিত ক্ষয়— বায়ু দ্রুত গতিতে প্রবাহিত হলে মৃত্তিকা বাহিত হয় এবং ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। যেমন- মরুভূমি অঞ্চল এবং সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে বায়ুপ্রবাহের ফলে মাটি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।

(iv) ভূ-প্রকৃতি— ভূমির ঢাল খাঁড়া হলে
প্রবল বৃষ্টিপাত হওয়ার পরে,দ্রুতগতিতে জল প্রবাহের ফলে মাটি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। যেমন- পার্বত্য অঞ্চল গুলোতে মাটির এরকম ক্ষয় দেখা যায়।

(v) ভূমিধস: ভূমিধসের ফলে পাহাড়ি অঞ্চলের মৃত্তিকা ক্ষয় হয়।

B. মৃত্তিকা ক্ষয়ের অ-প্রাকৃতিক কারণ:

(i) বৃক্ষচ্ছেদন—

নির্বিচারে গাছ কাটা এবং বনভূমি ধ্বংস মৃত্তিকা ক্ষয়ের অন্যতম কারণ। যেমন- অত্যাধিক বৃক্ষচ্ছেদন করে রাস্তাঘাট, বসতি,কল-কারখানা স্থাপনের ফলে দ্রুত মৃত্তিকা ক্ষয় বৃদ্ধি পায়।

(ii) অবৈজ্ঞানিক কৃষিকাজ— অনিয়মিতভাবে কৃষিভূমির ব্যবহার করলে বা সঠিক পদ্ধতিতে জলসেচ না করলে তা মৃত্তিকা ক্ষয়ের কারণ হয়। যেমন-পাহাড়ি অঞ্চলে ঝুম চাষের ফলে মৃত্তিকা ক্ষয় হয়।

(iii) অনিয়ন্ত্রিত পশুচারণ—

অত্যধিক পশুচারণ এর ফলে মৃত্তিকার উপরের স্তরে ছোট ছোট বৃক্ষ গুলি নষ্ট হয়ে যায়, ফলে মাটির উপরের স্তর আলগা হয়ে গিয়ে মৃত্তিকা ক্ষয় বৃদ্ধি পায়।

(iv) জনসংখ্যার চাপ—

বাসস্থান নির্মাণ, বৃক্ষছেদন প্রভৃতি মৃত্তিকা ক্ষয়ের কারণ।

(vi) ঝুম চাষ—

পাহাড়ি অঞ্চলের আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষরা বনভূমি কেটে পুড়িয়ে ঝুম চাষের কারণে মৃত্তিকা ক্ষয় হয়।

মৃত্তিকা ক্ষয়ের ফলাফল (Consequences of soil erosion) :

1) মাটির উর্বরতা হ্রাস: মাটির উপরের স্তর জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ। তাই মাটি ক্ষয়ের ফলে উসরের স্তর অপসারিত হয় বলে মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ কমে যায়। এই কারনে মাটির উর্বরতা হ্রাস পায়।

2) বন্যা ও খরার প্রবণতা বৃদ্ধি: ক্ষয়জাত মৃত্তিকা নদীখাতে জমা হয়ে নদী ভরাট ও গভীরতা কমে গিয়ে নদীর জলধারণ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়,ফলে বন্যা সৃষ্টি হয়।

3) মরু অঞ্চলের সম্প্রসারনে বৃদ্ধি
সম্প্রসারণ: মরু অঞ্চলে বায়ুপ্রবাহের ফলে মাটির উপরের স্তর উড়ে গিয়ে, মরু করে। এর ফলে মরুভূমির আয়তন ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে।

4) নদীতে পলি সঞ্চয় বৃদ্ধি : ক্ষয়জাত মৃত্তিকা নদী খাতে সঞ্চয় হয়ে, নদীতে পলি সঞ্চয় বৃদ্ধি করে।

5) ভূমিধস বৃদ্ধি: পাহাড়ি অঞ্চলের মৃত্তিকা ক্ষয় ভূমিধস সৃষ্টিতে সাহায্য করে।

Rlearn Education