মৃত্তিকা : উচ্চমাধ্যমিক ভূগোল | অষ্টম পর্ব

Content Topic :
১) পরিণত ও অপরিণত মাটির বৈশিষ্ট্য অথবা তুলনা |
২ ) পেডােক্যাল ও পেডালফার মাটির তুলনা|
৩) আন্তঃআঞ্চলিক মৃত্তিকা কি |
৪) আন্তঃআঞ্চলিক মৃত্তিকার উৎপত্তি |
৫) আঞ্চলিক ও অনাঞ্চলিক মাটির বৈশিষ্ট্য|
৬) মৃত্তিকার অবনমনের প্রক্রিয়াসমূহ |
৭) মৃত্তিকার ক্ষয় ও মৃত্তিকা অবনমনের মধ্যে পার্থক্য |

উচ্চমাধ্যমিক ভূগোল(HS Geography) : মৃত্তিকা|

পরিণত ও অপরিণত মাটির বৈশিষ্ট্য অথবা তুলনা :

পরিণত মাটি : (১) মাটি গঠনকারী প্রক্রিয়ার কাজ প্রায় শেষ হয়ে আসে। (২) আদি শিলার চিহ্ন থাকে না। (৩) মাটির ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মগুলি প্রায় স্থিতিশীল। (৪) মাটি দৃঢ় ও সুসংবদ্ধ হয়। (৫) মাটিতে সুস্পষ্ট স্তর সৃষ্টি হয়। (৬) দীর্ঘ সময়ের পর মাটি পরিণত অবস্থায় পৌঁছায়। এরপর মাটি ক্ষয়ের কবলে পড়ে।

অপরিণত মাটি : (১) মাটি গঠনকারী প্রক্রিয়ার কাজ অসম্পূর্ণ থাকে। (২) আদি শিলার চিহ্ন যথেষ্ট থাকে। (৩) এই মাটির ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম পরিবর্তনশীল। (৪) মাটি ভঙ্গুর ও আলগা হয়। (৫) কোনােপ্রকার সুস্পষ্ট স্তর গড়ে ওঠে না। (৬) দীর্ঘ সময়ের পর অপরিণত মাটি পরিণত মাটিতে পরিবর্তিত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।

পেডােক্যাল ও পেডালফার মাটির তুলনা বা বৈশিষ্ট্য :

পেডােক্যাল : (১) এটি শুষ্ক অঞ্চলের মাটি। (২) বাষ্পীভবন বেশি হয় বলে এটি সাধারণত কৈশিক প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট। (৩) ক্যালশিয়াম কার্বনেটের প্রাধান্য থাকে। (৪) এটি ক্ষারকীয় মৃত্তিকা। pH মান 7-এর বেশি হয়। (৫) লবণ, চুন ও জৈব পদার্থ বেশি থাকায় এই মাটি কালচে ও ধূসর রঙের হয়।

পেডালফার : (১) এটি আর্দ্র অঞ্চলের মাটি। (২) অধিক বৃষ্টিপাতের জন্য এটি অনুস্রাবণের ফলে সৃষ্ট। (৩) লােহা ও অ্যালুমিনিয়াম বেশি থাকে। (৪) এটি আম্লিক মৃত্তিকা। pH মান 7-এর কম হয়। (৫) লােহার অক্সাইড বেশি থাকায় এই মাটি লালচে রঙের হয়।

আন্তঃআঞ্চলিক মৃত্তিকা :

কোনাে অঞ্চলে স্থানীয়ভাবে মাটি সৃষ্টির উপাদানগুলির তারতম্য দেখা দিলে উপাদান গুলি পুনরায় মাটি গঠন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয় এবং নতুন ধরনের মাটি সৃষ্টি করে। অঞ্চলের মধ্যে স্থানীয়ভাবে এ ধরনের মাটি গড়ে ওঠায় একে আন্তঃআঞ্চলিক মাটি (Intrazonal Soil) বলা হয়।

আন্তঃআঞ্চলিক মৃত্তিকার উৎপত্তি :


জলাভূমির মৃত্তিকা : বিভিন্ন প্রকার জলাভূমিতে অবায়ুজীবী ব্যাকটেরিয়া দ্বারা জৈব পদার্থ বিয়ােজিত হয়ে যে কালচে রঙের মৃত্তিকা সৃষ্টি হয়, তাকে জলাভূমির মৃত্তিকা বলে। উদাহরণ পিট বা বগ মৃত্তিকা।

চুনময় মৃত্তিকা : শিলাতে চুন বা চুনজাতীয় পদার্থের প্রাধান্য থাকলে চুনময় মৃত্তিকা গড়ে ওঠে। যেমন— চুনাপাথর বা চক শিলা থেকে উৎপন্ন রেনজিনা (Rendzina) মৃত্তিকা। এই মৃত্তিকা সাদা, ধূসর ও বাদামি বর্ণের হয়।

লবণাক্ত মৃত্তিকা : মাটির উপরিভাগে লবণের সঞ্চয় ঘটলে লবণাক্ত মৃত্তিকা গড়ে উঠে। শুষ্ক ও শুষ্কপ্রায় অঞ্চলে কম বৃষ্টিপাতের জন্য ধৌত প্রক্রিয়া কম হয়। এর ফলে লবণের সঞয় ঘটে। আবার বাষ্পীভবন বেশি হওয়ায় কৈশিক প্রক্রিয়ায় দ্রবীভূত লবণ ওপরে উঠে আসে। এভাবে লবণাক্ত মৃত্তিকার সৃষ্টি হয়। এই প্রকার মাটি ক্ষারধর্মী হয়। সােলানচাক ও সােলনেতজ এই মাটির উদাহরণ।

আঞ্চলিক ও অনাঞ্চলিক মাটির তুলনা বা বৈশিষ্ট্য :


আঞ্চলিক বা বলয়িত মাটি : (১) মাটি গঠনে জলবায়ু ও স্বাভাবিক উদ্ভিদের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। অন্যান্য উপাদানের প্রভাব প্রায় থাকে না। (২) একই প্রকার জলবায়ু অঞ্চলে মাত্র এক ধরনের মাটির উৎপত্তি ঘটে। (৩) এই শ্রেণির মাটি পরিণত ও একাধিক সুস্পষ্ট স্তরবিশিষ্ট। (৪) মাটি গঠন প্রক্রিয়াসমূহের কাজের শেষ পর্যায়ে এই মাটি সৃষ্টি হয়। (৫) মাটির নীচের দিকে আবহবিকারের বিস্তারলাভের ওপর। এই মাটির গভীরতা নির্ভর করে। তবে, সাধারণত এটি বেশ পুরু হয়। (৬) এই মাটি আদি শিলার ওপর স্বস্থানিক হলেও জনক শিলার কোনাে চিহ্নই মাটিতে থাকে না।

অনাঞ্চলিক বা অ-বলয়িত মাটি : (১) মাটি গঠনে নিষ্ক্রিয় ও সক্রিয় – কোনাে উপাদানের প্রভাব থাকে না। (২) উপাদানগুলির সঙ্গে কোনাে সম্পর্ক না থাকায় একই প্রকার মাটি সব জলবায়ুতে দেখা যেতে পারে। (৩) এই শ্রেণির মাটি অপরিণত ও স্তরবিহীন। (৪) মাটি গঠনের কাজ সবসময় চলতে থাকে। প্রক্রিয়াসমূহ সবসময় ক্রিয়াশীল থাকে। (৫) পরিবাহিত দ্রব্যের জোগান ও ভূমিঢালের প্রকৃতির ওপর মাটির গভীরতা নির্ভর করে। তাই এই মাটি কয়েক সেমি থেকে কয়েক মিটার পর্যন্ত পুরু হয়। (৬) আদি শিলা থেকে অনেক দূরে পরিবাহিত হয় এই মাটি। তাই এটি অস্বস্থানিক।

মৃত্তিকার অবনমনের প্রক্রিয়াসমূহ :


[1] উর্বরতা হ্রাস : রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে বা ভূমি দীর্ঘদিন অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকলে জমির উর্বরতা হ্রাস পায় |
[2] ক্ষারত্ব বৃদ্ধি : বিভিন্ন কারণ যেমন—খনি বা শিল্প কারখানার নিষ্কাশিত সােডিয়ামযুক্ত বর্জ্য পদার্থ মিশ্রিত হওয়ার ফলে মৃত্তিকায় অন্যান্য লবণের তুলনায় সােডিয়াম আয়নের পরিমাণ বেশি হয়ে গেলে মৃত্তিকার ক্ষারকীয়তা বৃদ্ধি পেয়ে মৃত্তিকার অবনমন ঘটে।
[3] অম্লত্ব বৃদ্ধি : অম্লবৃষ্টি ও অন্যান্য কারণে মৃত্তিকা অন্নধর্মী হয়ে পড়ে।
[4] লবণতা বৃদ্ধি : ভৌমজলের অতিরিক্ত উত্তোলন ও কৃষিক্ষেত্রে লবণাক্ত জলের অনুপ্রবেশ ঘটলে মৃত্তিকায় লবণতা বৃদ্ধি পেয়ে মৃত্তিকার অবনমন ঘটে।

মৃত্তিকার ক্ষয় ও মৃত্তিকা অবনমনের মধ্যে পার্থক্য :

মৃত্তিকার ক্ষয় :
1. প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট কারণে মৃত্তিকার কণাসমূহের স্থানান্তরণকে মৃত্তিকা ক্ষয় বলে।
মৃত্তিকা ক্ষয় মৃত্তিকার অবনমনের ওপর নির্ভর করে না।
2. অপেক্ষাকৃত দ্রুত ঘটে।
3. রিল, গালি, শিট ক্ষয় ইত্যাদি মৃত্তিকা ক্ষয়ের প্রক্রিয়া।
4. চোখে দেখে সহজে বােঝা যায়।
5. নিয়ন্ত্রণ করা অপেক্ষাকৃত সহজ।

মৃত্তিকার অবনমন : প্রাকৃতিক বা মনুষ্যসৃষ্ট কারণে মৃত্তিকার গুণগত মানের হ্রাস ঘটলে তাকে মৃত্তিকার অবনমন বলে।
1. মৃত্তিকার অবনমন মৃত্তিকা ক্ষয়ের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে।
2. অপেক্ষাকৃত ধীর গতিতে ঘটে।
3. অম্লত্ব, ক্ষরকীয়তা, লবণতা ও খনিজ পদার্থের হ্রাসবৃদ্ধি মৃত্তিকা অবনমনের প্রক্রিয়া।
4. কেবলমাত্র পরীক্ষানিরীক্ষার মাধ্যমে বােঝা যায়।
5. নিয়ন্ত্রণ করা অপেক্ষাকৃত কঠিন।

Rlearn Education