Content Topic:
1. মৃত্তিকার উর্বরতা |
2. মৃত্তিকার উর্বরতার নিয়ন্ত্রকসমূহ |
3. মৃত্তিকাস্থিত পুষ্টিমৌল
4. মৃত্তিকাস্থিত প্রধান পুষ্টিমৌল
5. মৃত্তিকাস্থিত গৌণ পুষ্টিমৌল|
6. মাটির PH
মৃত্তিকা : উচ্চমাধ্যমিক ভূগোল (HS Geography)
মৃত্তিকার উর্বরতা বলতে কী বোঝায় ?
উত্তর : উর্বরতা হলো মাটির এমন গুণ বা বৈশিষ্ট্য যা মাটির মধ্যে বিভিন্ন পুষ্টি মৌলের পরিমিত যোগান ক্ষমতা এবং বিশেষ ধরনের গাছ উৎপাদন ক্ষমতাকে বোঝায়।
মৃত্তিকার উর্বরতার নিয়ন্ত্রকসমূহ আলোচনা করো |
উত্তর : [1] মৃত্তিকার গভীরতা : মৃত্তিকার অভ্যন্তরে উদ্ভিদের মূল যতদূর পর্যন্ত প্রবেশ করতে পারে, সেই স্তরগুলি পর্যন্ত অঞ্চলই মৃত্তিকার গভীরতার অন্তর্গত। সাধারণভাবে মৃত্তিকা অভ্যন্তরস্থ A ও B স্তর পর্যন্ত গভীরতায় উদ্ভিদের মূল বা শিকড় প্রবেশ করতে সমর্থ হয়। তাই মাটির গভীরতা মৃত্তিকার উর্বরতার ওপর প্রভাব বিস্তার করে।
[2] মৃত্তিকার গ্রথন ও গঠন : মৃত্তিকার গ্রথন ও গঠন উদ্ভিদের শিকড়ের উৎপত্তি ও বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। কারণ এই গ্রথন ও গঠনের ওপরই নির্ভর করে মৃত্তিকার জল, বাতাস, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, সচ্ছিদ্রতা ইত্যাদি।
[3] মৃত্তিকার সচ্ছিদ্রতা : মৃত্তিকা কণার মধ্যবর্তী স্থানকে বলে মৃত্তিকার রন্ধ্র। মৃত্তিকার এই রন্ধ্রে উদ্ভিদের জল ও পুষ্টি উপাদান থাকে যা উদ্ভিদ তার প্রয়ােজন মতাে গ্রহণ করে।
[4] মৃত্তিকার তাপমাত্রা : মৃত্তিকার বিভিন্ন জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়া সংঘটিত হতে তাপমাত্রার প্রয়ােজন হয়। এই তাপমাত্রার প্রধান উৎস হল সূর্য। সূর্য ব্যতীত জৈব পদার্থের জারণ, বিশ্লেষণ সম্ভব নয়।
[5] মৃত্তিকার আর্দ্রতা : মৃত্তিকার আদ্রতা উদ্ভিদের পুষ্টিজোগানে বিশেষভাবে সহায়তা করে থাকে। মৃত্তিকার আদ্রর্তার পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে উদ্ভিদের নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়ামের পরিমাণের যেমন বৃদ্ধি ঘটে তেমনি আবার কম আর্দ্রতায় উদ্ভিদ তার প্রয়ােজন মতাে ক্যালশিয়াম গ্রহণ করতে পারে।
[6] মৃত্তিকার বায়ু : মৃত্তিকার রন্ধ্রের অভ্যন্তরস্থ Co২ উদ্ভিদের মূল ও শিকড়কে এক বিশেষ পরিমাণে খাদ্য গ্রহণে সহযােগিতা করে। সম্পৃক্ত অক্সিজেন উদ্ভিদের মূল ও শিকড়ের কোষগুলির বৃদ্ধি ঘটাতে সহায়তা করে। তাই মৃত্তিকার বায়ু মৃত্তিকার উর্বরতা ও উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে খুবই প্রয়ােজনীয়।
[7] মৃত্তিকার জল : মৃত্তিকার রন্ধ্রগুলি অর্ধেকটা বায়ু দ্বারা এবং অর্ধেক জল দ্বারা পূর্ণ থাকে। জল মৃত্তিকার অভ্যন্তরে প্রবেশ করে মৃত্তিকাস্থ বিভিন্ন খাদ্য মৌলকে তরল করতে সমর্থ হয় এবং উদ্ভিদ ওই সকল তরল খাদ্যমৌল শিকড় ও মূল দ্বারা সহজে গ্রহণ করতে পারে।
[8] মৃত্তিকার নিবিড়তা ও কর্ষণ ব্যবস্থা : মৃত্তিকার নিবিড়তা একদিকে যেমন জল ও বাতাসের চলাচলকে ব্যাহত করে, তেমনিভাবে উদ্ভিদের মূল ও শিকড়ের মৃত্তিকার অভ্যন্তরে প্রবেশের পথকেও সঙ্কুচিত করে। এরূপ ক্ষেত্রে উদ্ভিদের সহজ খাদ্য গ্রহণে বাধার সৃষ্টি হয় ফলে মৃত্তিকার উর্বরতা হ্রাস ঘটে। মৃত্তিকার নিবিড়তাকে তাই কর্ষণ ব্যবস্থার সাহায্যে জল ও বাতাসের অনুপ্রবেশে সহায়তা করলে মৃত্তিকার উর্বরতা বৃদ্ধি পায় এবং উদ্ভিদের সহজভাবে বৃদ্ধি ঘটে থাকে।
[9] মৃত্তিকার ক্ষারকীয়তা ও অম্লত্ত্ব : মৃত্তিকার ক্ষারকীয়তা ও অম্লত্ব pH দ্বারা প্রকাশ করা হয়। উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য pH-এর মান নিরপেক্ষ হলে তা উৎকৃষ্ট হয় কারণ এরূপ ক্ষেত্রে মৃত্তিকা অধিক ক্ষারীয় বা অধিক অম্লত্ত্ব থাকে না বলে উদ্ভিদ সহজেই তার খাদ্যমৌল সংগ্রহ করতে পারে। তবে কিছু কিছু উদ্ভিদ আবার অম্ন মৃত্তিকাতে ভালাে জন্মায়। তবে সাধারণভাবে দেখা গেছে যে pH 6.5-7.5 পর্যন্ত অবস্থায় অবস্থান করলে অধিক পরিমাণে উদ্ভিদ তাদের খাদ্যমৌল অতি সহজে সংগ্রহ করতে সমর্থ হয়।
মৃত্তিকাস্থিত পুষ্টিমৌল :
উদ্ভিদ তার নিজের বৃদ্ধির জন্য বায়ু থেকে CO২, মৃত্তিকা থেকে খনিজ লবণ ও জল এবং সূর্য থেকে আগত আলাে ব্যবহার করে সালােকসংশ্লেষের মাধ্যমে খাদ্য প্রস্তুত করে। এদের মধ্যে খনিজ ও জল প্রধানত মূত্তিকা থেকে সরবরাহ হয়ে থাকে। এই খনিজ ও জলকে মৃত্তিকাস্থিত পুষ্টিমৌল বলে।
মৃত্তিকাস্থিত প্রধান পুষ্টিমৌলের উপযােগিতা :
নাইট্রোজেন :
✶ উদ্ভিদের রং সবুজ করতে সাহায্য করে।
✶ উদ্ভিদের বৃদ্ধি, শাখাপ্রশাখার গঠনে সাহায্য করে।
ফসফরাস :
✶ কোষ বিভাজন ও বৃদ্ধিতে সাহায্য করে ও কান্ডকে শক্তিশালী করে।
✶ রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
পটাশিয়াম :
✶ সালােকসংশ্লেষের প্রয়ােজনীয় উপাদান।
✶ রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং উদ্ভিদের অভ্যন্তরস্থ লােহার চলাচল বৃদ্ধি করে থাকে।
ক্যালশিয়াম :
✶ উদ্ভিদ কোষকে শক্তি ও স্থিতিস্থাপকতা দান করে।
✶ উদ্ভিদের অভ্যন্তরে শর্করা ও অন্যান্য খাদ্যমৌল চলাচলকে সুগম করে।
✶ রােগ আক্রমণ প্রতিরােধ করে।
ম্যাগনেশিয়াম :
✶ সালােকসংশ্লেষে গুরুত্বপূর্ণ।
✶ উদ্ভিদদেহে ফসফেট পরিবহণে সহায়তা করে।
✶ এর অভাবে উদ্ভিদের পাতার রং বিবর্ণ হয় ও গাছের পাতার পচন দেখা যায়।
সালফার :
✶ উদ্ভিদের গুটি, বীজ, মূল ও কাণ্ড গঠনের জন্য সালফারের প্রয়ােজন।
✶ উদ্ভিদের নাইট্রোজেন সমীকরণে যােগসূত্র রক্ষা করে।
✶ সালফারের অভাবে উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও কোষ বিভাজন ব্যাহত হয়।
উদ্ভিদের মৃত্তিকাস্থিত গৌণ পুষ্টিমৌল :
যেসব পুষ্টিমৌল বা উপাদান উদ্ভিদ অতি অল্প পরিমাণে গ্রহণ করে তাকে গৌণ পুষ্টিমৌল বলে। যেমন—
লােহা :
✶ উদ্ভিদের ক্লোরােফিল গঠনে প্রভাব বিস্তার করে।
✶ এর অভাবে উদ্ভিদের গঠন ও ফসলের ফলন ব্যাহত হয়।
ম্যাঙ্গানিজ :
✶ উদ্ভিদের জারণ, বিজারণ প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে ও ক্লোরােফিল গঠনে সাহায্য করে।
✶ এর অভাবে গাছে ফুল ও ফল আসতে দেরি হয়।
বােরন :
✶ উদ্ভিদের ফুল, ফল ধারণে ও লিগুসিনাস উদ্ভিদের গুটি গঠনে সাহায্য করে।
✶ বােরন ক্যালশিয়ামের কর্মদক্ষতাকে বৃদ্ধি করে।
তামা :
✶ উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও জারণ-বিজারণ প্রক্রিয়াতে সাহায্য করে।
✶ এর অভাবে পাতার সবুজ বর্ণ বিবর্ণ হয়।
মলিবডেনাম :
✶ মৃত্তিকা থেকে নাইট্রোজেন ও ফসফরাস শােষণে সাহায্য করে থাকে।
✶ এর অভাবে উদ্ভিদের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
ক্লোরিন :
✶ উদ্ভিদের অভিস্রাবণীয় চাপের নিয়ন্ত্রক হিসেবে কার্যকরী।
✶ উদ্ভিদের কোষগুলির শর্করা প্রস্তুত ও জল ধারণক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
জিঙ্ক :
✶ উদ্ভিদ বৃদ্ধির প্রয়ােজনীয় অক্সিন হরমােন তৈরিতে সাহায্য করে।
✶ উদ্ভিদের সালােকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে।
কোবাল্ট :
✶ উদ্ভিদের B12 ভিটামিন-এর গঠনে সহায়তা করে।
✶ এর অভাবে কিছু কিছু উদ্ভিদের নাইট্রোজেন বন্ধন ক্রিয়া ব্যাহত হয়।
মাটির pH :
মাটির pH মাটির এক অন্যতম রাসায়নিক ধর্ম। মাটির প্রধান উপাদানগুলাের মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় মাটি আম্লিক (Acidic) ও ক্ষারকীয় (Basic) হয়। মাটির অম্লতা ও ক্ষারকত্ব নির্ভর করে মাটিতে হাইড্রোজেন (H+) ও হাইড্রক্সিল (OH-) আয়নের উপস্থিতির ওপর যা মাটির pH মানের (pH Value) সাহায্যে জানা যায়। pH বলতে এক লিটার দ্রবণে সক্রিয় বা মুক্ত হাইড্রোজেন আয়নের পরিমাণকে বােঝায়। pH মান 7-এর কম হলে মাটিতে সক্রিয় হাইড্রোজেন আয়নের পরিমাণ বেড়ে যায় ও মাটি আম্লিক চরিত্রের হয়। pH-এর মান 7-এর বেশি হলে সক্রিয় হাইড্রোজেনের পরিবর্তে সক্রিয় হাইড্রক্সিল আয়নের পরিমাণ বেড়ে যায়। তখন মাটি ক্ষারকীয় প্রকৃতির হয়। pH এর মান 7 হলে মাটি প্রশমিত বা নিরপেক্ষ (Neutral ) হয় অর্থাৎ আম্লিক বা ক্ষারকীয় কোনােটাই হয় না।