নীলবিদ্রোহে বাঙালি মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ভূমিকা | মাধ্যমিক ইতিহাস সাজেশান

মাধ্যমিক ইতিহাস ( Madhyamik History )


নীলবিদ্রোহে বাঙালি মধ্যবিত্ত বুদ্ধিজীবী শ্রেণীর ভূমিকা :

ভূমিকা : ১৮৫৯-৬০ খ্রিস্টাব্দের নীল বিদ্রোহে প্রত্যক্ষভাবে না হলেও পরোক্ষভাবে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বাঙালি বুদ্ধিজীবীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। বিভিন্ন পেশার শিক্ষিত বাঙালি বিদ্রোহীদের নানাভাবে সহায়তা করেন।

[1] পত্রিকার সম্পাদকদের ভূমিকা: নীলকরদের অত্যাচারের বিরোধিতা করে নীল বিদ্রোহকে সমর্থন জানিয়ে যেসব পত্রিকার সম্পাদক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন তাদের মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য হলেন ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকার সম্পাদক হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় |এ ছাড়া ঈশ্বরগুপ্তের ‘সম্বাদ প্রভাকর’, অক্ষয়কুমার দত্তের ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’, মার্শম্যানের ‘সমাচার দর্পণ’, ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘সমাচার চন্দ্রিকা’, দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণের ‘সোমপ্রকাশ’ প্রভৃতি পত্রিকায় সম্পাদকরা নিয়মিত নীলচাষিদের ওপর অত্যাচার ও নীল বিদ্রোহের সংবাদ পরিবেশন করতে থাকেন।


[2] লেখকদের ভূমিকা: নীল বিদ্রোহকে সমর্থন করে যেসব সাহিত্যিক সাহিত্য রচনা করেছেন তাঁদের মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য হলেন ‘নীলদর্পণ’ নাটকের রচয়িতা দীনবন্ধু মিত্র। মাইকেল মধুসূদন দত্ত ‘নীলদর্পণ’ নাটকের ইংরেজি অনুবাদ করে খ্রিস্টান মিশনারি জেমস লং-এর নামে প্রকাশ করেন। এই অপরাধে লং সাহেবের কারাদণ্ড ও ১ হাজার টাকা জরিমানা হলে সাহিত্যিক কালীপ্রসন্ন সিংহ আদালতে সেই জরিমানার টাকা পরিশোধ করে দেন। বঙ্কিমচন্দ্ৰ চট্টোপাধ্যায়ও বিদ্রোহে নীলচাষিদের উৎসাহ দিতেন।

[3] আইনজীবীদের ভূমিকা: খ্যাতনামা আইনজীবী শম্ভুনাথ পণ্ডিত ও প্রসন্নকুমার ঠাকুর অত্যাচারী নীলকর সাহেবদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার ডাক দেন। নীলকররা চাষিদের শায়েস্তা করার উদ্দেশ্যে তাঁদের নামে অসংখ্য মিথ্যা মামলা করে। এইসব মামলা চলানোর সামর্থ্য চাষিদের ছিল
না। এই পরিস্থিতিতে নীলকরদের ভয় উপেক্ষা করে আইনজীবীদের কেউ কেউ চাষিদের পাশে দাঁড়ান এবং বিনা পারিশ্রমিকে চাষিদের পক্ষে মামলায় সওয়াল করেন।

উপসংহারঃ নীল বিদ্রোহে বাঙালি মধ্যবিত্ত বুদ্ধিজীবী শ্রেণির ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। শুধুমাত্র কৃষকদের সহায়তাই নয়, এই বিদ্রোহকে তাঁরা পরোক্ষভাবে সর্বজনীন করে তোলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *