অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে কৃষক আন্দোলন | মাধ্যমিক ইতিহাস

অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে কৃষক আন্দোলনের পরিচয় |Ohingso Osohojog Andolon Porbe Krisok Andoloner Porichoy

প্রশ্ন:- অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে কৃষক আন্দোলনের পরিচয় দাও।

ভূমিকা :- ১৯২০-১৯২২ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকারের অপশাসনের বিরুদ্ধে গান্ধিজির নেতৃত্বে অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পরিচালিত হয়।এই সময় ভারতের বিভিন্ন স্থানে কৃষক আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে, যা অসহযোগ আন্দোলনে শক্তি জোগায়।

বাংলায় আন্দোলন : অসহযোগ আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্র ছিল বাংলার মেদিনীপুর জেলা।এখানকার বিশিষ্ট কংগ্রেস নেতা বীরেন্দ্রনাথ শাসমলকৃষকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এবং খাজনা বন্ধের ডাক দেন। তার ডাকে সাড়া দিয়ে অগণিত কৃষক ব্রিটিশ দমননীতি উপেক্ষা করে অসহযোগ আন্দোলনে শামিল হয়। তাছাড়া বাংলার পাবনা, রংপুর, কুমিল্লা, দক্ষিণ দিনাজপুর, বীরভূম প্রভৃতি স্থানেও কৃষক আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।

বিহারে আন্দোলন : বিহারের কৃষকদের মধ্যেও অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের প্রভাব পড়ে। সেখানকার জমিদার শ্রেণি কৃষকদের ওপর খাজনা বৃদ্ধি করে এবং খাজনা প্রদানে অক্ষম ব্যক্তির ওপর চরম অত্যাচার চালায়। এর প্রতিবাদে বিহারের কৃষক শ্রেণি ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন শুরু করে। এই আন্দোলন বিহারের মুঙ্গের, পূর্ণিয়া, ভাগলপুর প্রভৃতি স্থানে ছড়িয়ে পড়ে।

রাজস্থানে আন্দোলন : অসহযোগ আন্দোলনের সময় পশ্চিম ভারতের রাজস্থানে কৃষক বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে। এই অঞ্চলে বিজয় সিং পথিক ও মানিক লাল ভার্মার নেতৃত্বে সংঘটিত সামন্ততন্ত্র বিরোধী কৃষক বিদ্রোহ বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এই আন্দোলনে কৃষকদের প্রধান দাবি ছিল জমির ওপর কৃষকদের পূর্ণ অধিকার প্রদান করা।

যুক্তপ্রদেশ : অসহযোগ আন্দোলন পর্বে কৃষক বিদ্রোহের গুরুত্বপূর্ণকেন্দ্র ছিল যুক্তপ্রদেশ। ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে মদনমোহন মালব যুক্তপ্রদেশের এলাহাবাদে কিষান সভা গঠন করে। এই সভার প্রধান কর্মসূচি ছিল কৃষক ও জমিদারদের মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপন করা, শাসক ও শাসিতের মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপন করা, কৃষকদের স্বার্থ সম্পর্কিত আইন প্রণয়ন করা। যুক্তপ্রদেশের এলাহাবাদ, প্রতাপগড়, রায়বেরিলি, ফৈজাবাদ, অযোধ্যা প্রভৃতি স্থানে কৃষক বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। অযোধ্যা তালুকে মাদারি পাসির নেতৃত্বে সংঘটিত একা আন্দোলন (১৯২১-২২) ছিল বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

অন্ধ্রপ্রদেশে আন্দোলন : অসহযোগ আন্দোলনকালে দক্ষিণ ভারতেঅন্ধ্রপ্রদেশের গুন্টুর জেলায় ব্যাপক কৃষক বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের শেষ থেকে ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের শুরু পর্যন্ত এখানকার কৃষকরা সরকারকে খাজনা বন্ধের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হয়। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট থেকে ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে ১২ মে পর্যন্ত আধা-উপজাতি রম্পা কৃষকরা আন্দোলন করে। এই বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেয় আল্লুরি সীতারাম রাজু।

গুজরাটে আন্দোলন : অসহযোগ আন্দোলনের পরবর্তীতে গুজরাটের সুরাট জেলার বারদৌলি তালুকে বিশিষ্ট গান্ধিবাদী নেতা বল্লভভাই প্যাটেল খাজনা বন্ধের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন, যা বারদৌলি সত্যাগ্রহ (১৯২৮ খ্রি.) নামে পরিচিত। আন্দোলনে কৃষকরা তাৎক্ষণিক সাফল্য লাভ করে। সেখানকার আন্দোলনকারী মহিলারা প্যাটেলকে ‘সর্দার’ উপাধিতে ভূষিত করেন।

কেরলে আন্দোলন : এই সময় কেরলের মালাবার উপকূলের মুসলিম মোপলা কৃষকরা বিদ্রোহ শুরু করে। এই অঞ্চলে রাজস্বের হার খুবই বেশি ছিল। সেইসঙ্গে এখানকার জেনমি বা জমিদারেরা মুসলিম কৃষকদের ওপর ব্যাপক শোষণ-অত্যাচার চালাত। এর প্রতিবাদে মোপলা কৃষকরা স্থানীয় জমিদারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে, যা মোপলা বিদ্রোহ নামে পরিচিত।

উপসংহার :- অসহযোগ আন্দোলনের সময় ভারতের কৃষকরা গান্ধিজির আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে আন্দোলনে যোগ দেয়। ফলে ভারতের নানা প্রান্তেকৃষক বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণ কৃষকদের বিশ্বাস ছিল যে, গ্রামের অত্যাচারী জমিদার ও মহাজন শ্রেণির মানুষের হাত থেকে গান্ধিজি তাদের রক্ষা করবে।

Rlearn Education