অহিংস অসহযোগ আন্দোলন এবং কৃষক শ্রেণী :
ভূমিকা :
দেশে মূল্য বৃদ্ধি, বেকারত্ব, দমনমূলক রাওলাট আইন, জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড প্রভৃতির প্রতিবাদে গান্ধিজির নেতৃত্বে জাতীয় কংগ্রেস ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে অহিংস অসহযোগ আন্দোলন শুরু করে। বহু কৃষক এই আন্দোলনে শামিল হয়।
বাংলার মেদিনীপুর, পাবনা, কুমিল্লা, রাজশাহি, বগুড়া, রংপুর, বীরভূম, দিনাজপুর ও বাঁকুড়া জেলার কৃষকরা কংগ্রেসের অসহযোগ ও বয়কট আন্দোলনকে
সক্রিয়ভাবে সমর্থন করে। মেদিনীপুরে বীরেন্দ্রনাথ শাসমল, রাজশাহিতে সোমেশ্বর চৌধুরী, বীরভূমে জিতেন্দ্রলাল বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন।
বিহারের ভাগলপুর, মুজফ্ফরপুর, পূর্ণিয়া, মুঙ্গের, দ্বারভাঙ্গা, মধুবনী, সীতামারি জেলার কৃষকরা আন্দোলনে যোগ দিয়ে জমিদারদের খাজনা দেওয়া বন্ধ করে এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
যুক্তপ্রদেশে (উত্তরপ্রদেশ) বাবা রামচন্দ্রের নেতৃত্বে কিষান সভা (১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে) রায়বেরিলি, প্রতাপগড়, সুলতানপুর প্রভৃতি অঞ্চলে কৃষক আন্দোলনকে চরম রূপ দেয়।
১৯২১-২২ খ্রিস্টাব্দে উত্তর- প্রদেশের হরদৈ, বারাবাঁকি, সীতাপুর, বারাইচ প্রভৃতি জেলায় কৃষকরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনে শামিল হয় যা একা আন্দোলন নামে পরিচিত।
১৯২২ খ্রিস্টাব্দে (৫ ফেব্রুয়ারি) উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর জেলার চৌরিচৌরা গ্রামে উত্তেজিত কৃষকরা থানায় আগুন লাগিয়ে ২২ জন পুলিশকে পুড়িয়ে মারে।
অন্ধ্রপ্রদেশের গুন্টুর জেলার কৃষকরা, পাঞ্জাবের অকালী শিখ ও জাঠ কৃষকরা, উড়িষ্যার কৃষকরা অসহযোগ আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে।
গান্ধিজি অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিলেও বিভিন্ন স্থানে কৃষক আন্দোলন চলতে থাকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল বারদৌলি সত্যাগ্রহ | কংগ্রেস নেতা বল্লভভাই প্যাটেল
গুজরাটের দুর্দশাগ্রস্ত কৃষকদের ঐক্যবদ্ধ করে ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে এই আন্দোলন সংগঠিত করেন।
অসহযোগ আন্দোলন পর্বে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের কৃষকরা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে শামিল হলে অসহযোগ
আন্দোলন প্রকৃত অর্থে সর্বভারতীয় চরিত্র লাভ করে। তবে যেসব স্থানে কৃষকদের আন্দোলন হিংসাত্মক রূপ নেয় সেগুলিকে মহাত্মা গান্ধি সমর্থন করেননি।