অসুখী একজন : মাধ্যমিক বাংলা সাজেশান
Osukhi Ekjon : Madhyamik bangla suggestion
■ অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর দাও :[ প্রশ্নের মান –১]
প্রশ্ন ১। পাবলো নেরুদার জন্মস্থান কোথায়?
উত্তর : দক্ষিণ আমেরিকায় চিলির সীমান্ত শহর পারলেতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
প্রশ্ন ২। পাবলো নেরুদার প্রকৃত নাম কী?
উত্তর : নেকতালি রিকার্দো রেয়েন্স বাসোয়ালতো।
প্রশ্ন ৩। পাবলো নেরুদার নামের উৎসে কোন্ দুইজন লেখকের কথা ভাবা হয়?
উত্তর : জাঁ নেরুদা ও পাবলো পিকাসো।
প্রশ্ন ৪। পাবলো নেরুদার দুটি কাব্যগ্রন্থের নাম লেখো।
উত্তর : ‘এ পৃথিবীর আবাসভূমি’ ও ‘চিলির পাথর’।
প্রশ্ন ৫। পাবলো নেরুদা প্রথম কখন কবিতা লিখতে শুরু করেন?
উত্তর : তাঁর কবিতা প্রথম ছাপানো হয় ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে।
প্রশ্ন ৬। পাবলো নেরুদা কবে সাহিত্য নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন?
উত্তর : ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে।
প্রশ্ন ৭। পাবলো নেরুদা বাণিজ্যিক দূত বা রাষ্ট্রদূত হিসেবে কোন্ কোন্ দেশে গিয়েছিলেন?
উত্তর : রেঙ্গুন, চিন, জাপান, কলম্বো, ইন্দোনেশিয়া, স্পেন, অস্ট্রেলিয়া ইত্যাদি দেশে গিয়েছিলেন।
প্রশ্ন ৮। পাবলো নেরুদাকে কোন সময় সরকারের সঙ্গে সংঘাতের কারণে আত্মগোপন করে থাকতে হয়?
উত্তর : ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে।
প্রশ্ন ৯। ‘অসুখী একজন’ কবিতাটির উৎস গ্রন্থ কী?
উত্তর : নবারুণ ভট্টাচার্য অনূদিত ও সংকলিত ‘বিদেশি ফুলে রক্তের ছিটে’ গ্রন্থ।
প্রশ্ন ১১। ‘আমি তাকে ছেড়ে দিলাম’ —‘আমি’ কে?
উত্তর : ‘অসুখী একজন’ কবিতার কথক হলেন ‘আমি’।
প্রশ্ন ১২। “অপেক্ষায় দাঁড় করিয়ে রেখে দরজায়”—কে অপেক্ষায় ছিলেন?
উত্তর : কবিতার কথকের বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার সময় তাঁর কোনো প্রিয়জন তাঁরই ফিরে আসার অপেক্ষায় দরজায় দাঁড়িয়েছিলেন।
প্রশ্ন ১৩। “সে জানত না”—এখানে ‘সে’ কী জানত না?
উত্তর : দরজায় দাঁড়িয়ে কবিতার কথকের জন্য অপেক্ষা করতে থাকা প্রিয় ব্যক্তিটি জানত না যে, কথক আর কখনই ফিরে আসবে না।
প্রশ্ন ১৪। ‘অসুখী একজন’ কবিতায় ‘কুকুরের চলে যাওয়া’ অথবা ‘সন্ন্যাসীর হেঁটে যাওয়া’—এর প্রতীকী অর্থ কী?
উত্তর : কুকুরের চলে যাওয়া ও গির্জার এক নানের হেঁটে যাওয়ার মাধ্যমে দৈনন্দিন কর্মধারায় পরিচয় ফুটে উঠেছে।
প্রশ্ন ১৫। “বৃষ্টিতে ধুয়ে দিন আমার পায়ের দাগ”—কথাটির নিহিতার্থ কী?
উত্তর : সময়ের ব্যবধানে কবিতার কথকের অস্তিত্বের বাহ্যিক চিহ্ন লোপ হয়ে যাওয়াই হল সংশ্লিষ্ট অংশটির নিহিতার্থ।
প্রশ্ন ১৬। বছরগুলোকে কীসের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে?
উত্তর : পাথরের সঙ্গে।
প্রশ্ন ১৭। ‘বাতিরা খুন হল’—কথাটির প্রতীকী অর্থ কী?
উত্তর : মানুষ যুদ্ধের কারণে আশ্রয়হীন হল।
প্রশ্ন ১৮। ‘হলুদ দেবতারা’—‘হলুদ’ শব্দটির প্রয়োগগত অর্থ কী?
উত্তর : অস্তিত্বের বয়সজনিত জীর্ণতা।
প্রশ্ন ১৯। কথক তাঁর ‘মিষ্টি বাড়িটি’ সম্বন্ধে কী কী তথ্য উল্লেখ করেছেন?
উত্তর : বারান্দা, বারান্দায় থাকা ঝুলন্ত বিছানা, ‘গোলাপি গাছ’, করতলের মতো ছড়ানো পাতা, চিমনি ও প্রাচীন জলতরঙ্গ।
প্রশ্ন ২০। “রক্তের একটা কালো দাগ”—কথাটির অর্থ কী?
উত্তর : যুদ্ধের কারণে রক্তাক্ত পরিবেশে মানুষের মৃত্যুর প্রতীক হল সংশ্লিষ্ট অংশটি।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর : (শব্দসংখ্যা-৬০)[ প্রশ্নের মান – ৩]
প্রশ্ন ১। “একটা কুকুর চলে গেল, হেঁটে গেল গির্জার এক নান”—কথাটির মধ্য দিয়ে কবি কী বলতে চেয়েছেন ?
উত্তর : পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতার এক অতি তাৎপর্যপূর্ণ অংশ হল প্রশ্নের উদ্ধৃতিটি। সেই কবিতার কথক বাড়ি থেকে অনেক দূরে চলে গেছে। আর, তাঁরই অপেক্ষায় দরজায় দাঁড়িয়ে থেকেছে তাঁরই প্রিয় এক নারী। এদিকে, সমাজ- পরিবেশে প্রতিদিনের কর্ম তাতে স্তব্ধ হয়নি। সেই দৈনন্দিন জীবনের কর্মময় ছবিরই দুই উল্লেখযোগ্য দিক হল কুকুরের চলে যাওয়া এবং গির্জার এক নানের হেঁটে যাওয়া।
প্রশ্ন ২। “পাথরের মতো/পরপর পাথরের মতো, বছরগুলো/নেমে এল তার মাথার ওপর”—অংশটির নিহিতার্থ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতার এক উল্লেখযোগ্য অংশ হল প্রশ্নের উদ্ধৃতিটি। অংশটিতে মানুষের মনে দুঃসময়ের দুঃসহ ভারের কথা উল্লিখিত হয়েছে। কবিতার কথক বাড়ি থেকে দূরে চলে গেলে বাড়িতে তাঁর প্রিয় নারীর মনে প্রচণ্ড ব্যথা-বেদনা দেখা দিয়েছে। তাতে বছরগুলো একের পর এক জগদ্দল পাথরের মতো তার মাথার ওপর নেমে এসেছে।
প্রশ্ন ৩। “রক্তের এক আগ্নেয় পাহাড়ের মতো”—অংশটির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতা থেকে প্রশ্নের উদ্ধৃতিটি গৃহীত হয়েছে। সেই কবিতায় যুদ্ধের প্রসঙ্গ এসেছে। যুদ্ধের পরিবেশে মানুষের ওপর আগ্নেয় অস্ত্র প্রযুক্ত হয়েছে। তাতে, রক্তাক্ত অবস্থা দেখা দিয়েছে। আগ্নেয়গিরি যেমনভাবে চারদিকে আগুন ছড়িয়ে দেয়, যুদ্ধও তো সেরকমভাবে রক্ত তথা খুন মৃত্যু ধ্বংসের আগুন ছড়িয়ে দেয়। তাই, যুদ্ধ এসেছে রক্তের এক আগ্নেয় পাহাড়ের মতো।
প্রশ্ন ৪। “তারা তার স্বপ্ন দেখতে পারল না”—কারা, কেন আর স্বপ্ন দেখতে পারল না?
উত্তর : পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতায় উল্লিখিত ‘শান্ত হলুদ দেবতারা’ যুদ্ধের পরিবেশে শাস্তভাবে স্ব-স্থানে অবস্থানের আর স্বপ্ন দেখতে পারল না। কবির মতে, দেবতারা দীর্ঘদিনের অস্তিত্বে যেন জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। তাই, মানুষের যুদ্ধের পরিবেশে তাঁরা মানুষকে পথ দেখানো তো দূরের কথা, নিজেরাই নিজেদেরকে টিকিয়ে রাখতে পারেনি; টুকরো টুকরো হয়ে মন্দির থেকে উল্টে পড়েছে। কবির ভাবনায়, মানুষের অহেতুক দৈবনির্ভরতার উপর প্রচ্ছন্ন ব্যঙ্গ এসেছে।
প্রশ্ন ৫। “সব চূর্ণ হয়ে গেল”—কী কী চূর্ণ হয়ে গিয়েছিল?
উত্তর : পাবলো নেরুদার “অসুখী একজন” কবিতায় যুদ্ধ লেগে যাওয়ার কথা উল্লিখিত আছে। তাতে, মানুষের মৃত্যুর পাশাপাশি দেবতার মূর্তি নষ্ট হয়েছে এবং ‘বাড়িরা’ খুন হয়েছে। কথকের ‘মিষ্টি বাড়ি’, ঝুলন্ত বিছানায় ঘুমানোর বারান্দা, ‘গোলাপী গাছ’, চিমনি ও প্রাচীন জলতরঙ্গ বিনষ্ট হয়েছে। আসলে, যুদ্ধের কারণে কথকের শৈশব স্মৃতি বিজড়িত গৃহ পরিবেশটি নিশ্চিহ্ন হয়েছে।
প্রশ্ন ৬। “সেখানে ছড়িয়ে রইল”—সেখানে কী ছড়িয়ে রইল?
উত্তর : পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতায় দেশে যুদ্ধ লেগে যাওয়ার কথা উল্লিখিত আছে। সেই যুদ্ধে শহরের ক্ষয়ক্ষতির প্রসঙ্গই প্রশ্নের উদ্ধৃতিটিতে উল্লিখিত হয়েছে। মানুষ, দেবতা ও মানুষের আশ্রয় বিনষ্ট হওয়াতে শহরে ছড়িয়ে রইছে পোড়ানো কালো পরিবেশে তথা কাঠ কয়লা। সেই সঙ্গে দোমড়ানো লোহা, পাথরের মূর্তির বীভৎস মাথা এবং রক্তের কালো দাগ দেখা গেছে। আসলে, যুদ্ধের আগ্নেয় অস্ত্রের ক্ষতিকারক প্রভাবে পরিবেশ যেমন হয়, তেমনটিই লক্ষ্য করা গেছে সংশ্লিষ্ট শহরে।
■ রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর : (শব্দসংখ্যা ২০০)
[ প্রশ্নের মান 5 ]
প্রশ্ন ১। ‘অসুখী একজন’ কবিতার নামকরণের সার্থকতা বিচার কর।
উত্তর : পাবলো নেরুদা রচিত, নবারুণ ভট্টাচার্য অনূদিত ও সংকলিত ‘বিদেশি ফুলে রক্তের ছিটে’ গ্রন্থের অন্তর্ভূক্ত ‘অসুখী একজন’ কবিতাটি নামকরণের বিচারে যথেষ্ট তাৎপর্য পূর্ণ সফল এক কবিতা।
কবিতার কথক বাড়ি থেকে চলে গেলে তার অপেক্ষায় থাকে তারই এক প্রিয় ‘মেয়ে’। সেই মেয়েটির মানসিক ব্যথা-বেদনা- নির্ভর সুখহীনতা-ই হল কবিতাটির মূল ভাবনা। অবশ্য, কথকের অসুখী মনের ব্যঞ্জনাও যে আছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এই উভয় দৃষ্টিভঙ্গিতেই কবিতার নামকরণ হয়ে উঠেছে খুবই সার্থক ও সংগত। কথক তার প্রিয় ‘মেয়ে’ তথা নারীটিকে দরজায় দাঁড় করিয়ে রেখে বহুদূরে চলে গেছে। মেয়েটি জানতও না যে, সে আর ফিরবে না। একটা কুকুরের চলে যাওয়া অথবা গির্জার এক সন্ন্যাসিনীর হেঁটে যাওয়ার ঘটনা থেকে দৈনন্দিন জীবনের বাকি কাজ চলমান থেকেছে বলে জানা যায়।
সময়ের ব্যবধানে বৃষ্টিতে ধুয়ে দিয়েছে কথকের পায়ের দাগ এবং রাস্তায় জন্মেছে ঘাস। বছরগুলোও একের পর এক মেয়েটির মাথার ওপর ভার হয়ে নেমে এসেছে।তারপর যুদ্ধ শুরু হলে শিশু ও ‘বাড়িরা’ খুন হলেও মেয়েটি থেকে গেছে। ‘শান্ত হলুদ’ দেবতারা উল্টে পড়েছে, কথকের মিষ্টি বাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে এবং শহরও স্বাভাবিক অস্তিত্ব হারিয়েছে। মেয়েটি অবশ্য যুদ্ধের সেই ক্ষয়ক্ষতির পরিবেশেও একইভাবে কথকের অপেক্ষায় থেকেছে।
এইভাবে, পাঠ্য কবিতাটিতে কথকের বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার পর মেয়েটির তথা তার প্রিয় নারীটির ব্যথিত মনের অসুখ প্রাধান্য পেয়েছে। তারই অন্তরালে কথকেরও মনবেদনা উঁকি দিয়েছে। সেই মনবেদনা পীড়িত একজনের জীবন- বৃত্তান্ত কবিতায় প্রাধান্য পেয়েছে বলেই কবিতাটির নামকরণ হয়েছে খুবই ব্যঞ্জনাধর্মী ও সার্থক।
প্রশ্ন ২। “আর সেই মেয়েটি আমার অপেক্ষায়” —কোন্ মেয়েটির কথা বলা হয়েছে? অংশটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: পাবলো নেরুদার অসুখী একজন কবিতার কথক বাড়ি ছেড়ে অনেক দূরে চলে গেছে। তার প্রিয় নারীটি তার ফিরে আসার অপেক্ষায় দরজায় দাঁড়িয়ে থেকেছে। সেই নারীটিকেই বলা হয়েছে ‘মেয়েটি’।
‘অসুখী একজন’ কবিতার এক অতি তাৎপর্যপূর্ণ অংশ হল প্রশ্নের উদ্ধৃতিটি। উদ্ধৃতিটিতে কবি মানবমনের এক বিশেষ দিকের ওপর আলোকপাত করতে চেয়েছেন সেটি হল যুদ্ধের মতো ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিও মানুষের ভালোলাগা ও ভালোবাসার মতো অনুভূতিকে বিনষ্ট করতে পারে না। কবিতার বক্তব্য বিশ্লেষণ করে উদ্ধৃতিটির সেই তাৎপর্যকে তুলে ধরা যেতে পারে। কবিতার কথক বাড়ি ছেড়ে অনেক দূরে চলে গেছে। সেই মেয়েটি তারই অপেক্ষায় দরজায় দাঁড়িয়ে থেকেছে। সে জানেই না যে, কথক আর বাড়িতে ফিরবেই না। এদিকে সময়ের ব্যবধানে বৃষ্টিতে কথকের পায়ের দাগ মুছে গেছে এবং রাস্তার ঘাস জন্মেছে। বছরগুলো একের পর এক বেদনার ভার নিয়ে মেয়েটির মাথার ওপর নেমে এসেছে। তারপর যুদ্ধ বেধেছে এবং তাতে রক্তাক্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সেই যুদ্ধে শিশু ও ‘বাড়িরা’ খুন হয়েছে। তাতে মেয়েটির মৃত্যু ঘটেনি। ‘শান্ত হলুদ’ দেবতাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়েছে। কথকের মিষ্টি বাড়ির পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে এবং শহরও যুদ্ধের প্রভাবে পড়ে কালো রূপ ধারণ করেছে। তখনও কিন্তু সেই মেয়েটি কথকের অপেক্ষায় দাঁড়িয়েই থেকেছে। এতে পরিষ্কারভাবে বোঝা যায় যে, যুদ্ধের মতো ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি মানুষের অনেক কিছু কেড়ে নিলেও হৃদয়- পোষিত প্রেমধর্মকে কেড়ে নিতে পারে না। মেয়েটির অপেক্ষা করতে থাকার ঘটনাতে মানুষের সেই চিরন্তন ভালোবাসারই জয় আভাসিত হয়েছে।
প্রশ্ন ৩। “তারপর যুদ্ধ এল”—পাঠ্য কবিতা অবলম্বনে যুদ্ধের প্রভাব উল্লেখ করো। অথবা,
যুদ্ধের ঊর্ধ্বে মানুষের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম হৃদয়ধর্মের জয়গান ঘোষিত হয়েছে—আলোচনা করে বুঝিয়ে দাও।
উত্তর : পাবলো নেরুদা রচিত ‘অসুখী একজন” কবিতায় ভয়ঙ্কর যুদ্ধের কথা উল্লিখিত আছে। তাতে শুধু ঘরবাড়ি, শহর- নগর নয়—বহু মানুষের জীবনও গেছে। তবে, মানুষের শাশ্বত, সূক্ষ্ম, কোমল হৃদয়ানুভূতির উপর তার প্রভাবকে শূন্য করে দেখানো হয়েছে। বলাবাহুল্য, তাতে যুদ্ধের ঊর্ধ্বে মানুষের প্রেমধর্মের জয়গান ঘোষিত হয়েছে। রক্তের এক আগ্নেয় পাহাড়ের মতো যুদ্ধের আবির্ভাব ঘটেছে। কবির মতে তাতে ‘শিশু’ ও ‘বাড়িরা’ খুন হয়েছে। সমস্ত সমতলে আগুন ধরে গেছে। হাজার বছর ধরে ধ্যানে ডুবে থাকা শান্ত হলুদ দেবতারা টুকরো টুকরো হয়ে মন্দির থেকে উল্টে পড়েছে। কবিতার কথকের শৈশব স্মৃতিলালিত ‘মিষ্টি বাড়ি’-এর পরিবেশ বিনষ্ট হয়েছে। বারান্দায় থাকা ঝুলন্ত বিছানায় কথক একসময় ঘুমিয়েছিল; সেটি নষ্ট হয়ে গেছে। যুদ্ধের আগুনে মিষ্টি বাড়ির পরিবেশের ‘গোলাপী গাছ’, চিমনি ও প্রাচীন জলতরঙ্গ চূর্ণ হয়ে গেছে। শহর তো কাঠ কয়লা, দোমড়ানো লোহা ও ‘মৃত পাথর’-এর মূর্তির বীভৎস মাথাতে পূর্ণ হয়ে উঠেছে। রক্তের কালো দাগও দেখা গেছে। বাড়িতে কথকের ফিরে আসার অপেক্ষায় থাকা মেয়েটি অবশ্য আগের মতোই থেকেছে।
এইভাবে, পাঠ্য কবিতায় দেখা গেছে যে, যুদ্ধ, ঘরবাড়ি, শহর, মানুষজন এবং দেবতার ওপরে নানানভাবে ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলেছে। তবে, প্রেম-ভালোবাসার চিরন্তন হৃদয়ধর্মে উজ্জ্বল মেয়েটির ওপর যুদ্ধের প্রভাব পড়েনি