Pitt’s Act of Government of India:
আলোচনার বিষয় :
- ভূমিকা
- পিটের ভারত শাসন আইনের পটভূমি
- পিটের ভারত শাসন আইন পাস
- পিটের ভারত শাসন আইনের শর্তাবলী
- পিটের ভারত শাসন আইনের ত্রুটি
- পিটের ভারত শাসন আইনের গুরুত্ব
- উপসংহার |
ভূমিকা : ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ড -এর নতুন প্রধানমন্ত্রী উইলিয়াম পিট ভারত এর জন্য এক নতুন আইন তৈরি করেন যা ভারতে ব্রিটিশ কোম্পানির সমস্ত কার্য- কলাপের উপর ব্রিটিশ পার্লামেন্ট নজরদারি করতে পারে। একে পিটের ভারত শাসন আইন বলা হয়।
পিটের ভারত শাসন আইনের পটভূমি :
পিটের ভারত শাসন আইন প্রবর্তনের বিভিন্ন কারণ ছিল।যেমন –
(১) রেগুলেটিং অ্যাক্টের ব্যর্থতা : ভারতে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কোম্পানির ক্ষমতা ‘রেগুলেট’ বা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ‘রেগুলেটিং অ্যাক্ট‘ প্রবর্তিত হলেও এই আইন তার উদ্দেশ্য সাধনে চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হয়।
(২) ক্ষমতা ও সম্পর্ক বিষয়ে জটিলতা :
এই আইন এগারো বছর কার্যকরী ছিল। এই সময় কোম্পানির ক্ষমতা প্রভূত পরিমাণে বৃদ্ধি পায়। এছাড়া, এই সময় ব্রিটিশ সরকার, ডাইরেক্টর সভা, গভর্নর জেনারেল, কাউন্সিল, বোম্বাই ও মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি, সুপ্রিম কোর্ট প্রভৃতির ক্ষমতা, দায়িত্ব ও পারস্পরিক সম্পর্কের প্রশ্নে নানা জটিলতার উদ্ভব হয়।
(৩) আর্থিক দুর্নীতি : এই সময় প্রশাসনের অরাজকতা ও আর্থিক দুর্নীতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে।
(৪) বাড়তি রাজস্ব আদায়ের পরামর্শ :
এই সময় আমেরিকার উপনিবেশগুলির সঙ্গে ইংল্যাণ্ডের যুদ্ধ শুরু হলে ইংল্যাণ্ডের অর্থনীতির ওপর বিপুল চাপ পড়ে। ইংরেজ রাজনীতিকদের অনেকেই তখন ভারত অর্থাৎ কোম্পানির কাছ থেকে বেশি রাজস্ব আদায়ের পরামর্শ দেন।
(৫) কোম্পানির কাজের সমালোচনা :
আসলে কোম্পানির রাজনৈতিকও আর্থিক অবস্থাও তখন ভালো ছিল না। ভারতে বিভিন্ন যুদ্ধ-বিগ্রহের ফলে কোম্পানির আর্থিক অবস্থা তখন শোচনীয় হয়ে পড়েছে এবং বিভিন্ন যুদ্ধ-বিগ্রহে যোগ দেওয়ার ফলে কোম্পানির কাজকর্ম নিয়েও তখন ইংল্যাণ্ডে বেশ সমালোচনা চলছে |
(৬) নিয়ন্ত্রণ আরোপের সুযোগ : এই অবস্থায় কোম্পানি সরকারের কাছে এক মিলিয়ন পাউন্ড ঋণ চাইলে পার্লামেন্টের সদস্যরা কোম্পানির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের সুযোগ পায়।
(৭) ডাণ্ডাস প্রস্তাব : ১৭৮২ খ্রিস্টাব্দে ডাণ্ডাস (Dundas) কোম্পানির শাসন ব্যবস্থাকে সুষ্ঠু ও সুসংহত করার জন্য পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাব পেশ করেন। এই প্রস্তাব গৃহীত হয় নি।
(৮) জেমস ফক্সের প্রস্তাব : এরপরের বছর বিশিষ্ট বাগ্মী জেমস ফক্স আরেকটি প্রস্তাব আনেন। বহু বিতর্কের পর ইংল্যাণ্ডের কমন্স সভা-য় তা গৃহীত হলেও রাজা তৃতীয় জর্জ এর বিরোধিতার ফলে লর্ডস্ সভা ( House of Lords) তা প্রত্যাখ্যান করে।
পিটের ভারত শাসন আইন পাস :১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে প্রধানমন্ত্রী উইলিয়ম পিট-এর উদ্যোগে এই সম্পর্কিত একটি আইন পাশ হয়। যদিও এই আইনের নাম ‘ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি অ্যাক্ট’ কিন্তু সাধারণে এই আইন পিটের ভারত শাসন আইন’ (Pitt’s India Act) নামে পরিচিত।
পিটের ভারত শাসন আইনের শর্তাবলী :
এই আইন মূলত কোম্পানির গঠনতন্ত্র সম্পর্কেই রচিত হয়।এই আইনের বিভিন্ন শর্তগুলি হল –
(১) এই আইন অনুসারে ব্রিটিশ অর্থ-সচিব, একজন রাষ্ট্র-সচিব (Secretary of State) এবং ইংল্যাণ্ড রাজ কর্তৃক শর্তাবলী মনোনীত প্রিভি কাউন্সিলের’ চারজন সদস্যকে নিয়ে গঠিত বোর্ড অব কন্ট্রোল’ (Board of Control)-এর ওপর কোম্পানির সকল সামরিক ও বে-সামরিক ক্ষমতা অর্পিত হয়। ব্রিটিশ মন্ত্রিসভার একজন মন্ত্রীকে এই বোর্ডের সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। বোর্ডের সদস্যদের নিযুক্তি বা পদচ্যুতি সবই ছিল রাজা বা রানির হাতে।
(২) কোম্পানির তিনজন ডাইরেক্টরকে নিয়ে গঠিত হয় ‘সিক্রেট কমিটি’, (Secret Committee)। স্থির হয় যে, এই কমিটি মারফৎ ‘বোর্ড অব কন্ট্রোলের’ সকল নির্দেশ, আদেশ ও মতামত ভারতে কোম্পানির প্রতিনিধিদের কাছে পাঠানো হবে।
(৩) ‘বোর্ড অব কন্ট্রোল’ ও ‘সিক্রেট কমিটি’-র যুগ্ম সিদ্ধান্ত বা মতামত পরিবর্তন বা সংশোধন করার কোনোও ক্ষমতা ‘অংশীদার সভা’-র (Court of Proprietors) ছিল না।
(৪) ভারতে গভর্নর জেনারেল–প্রধান সেনাপতি ও অন্য আরও দু’জন, অর্থাৎ মোট তিনজনের একটি ‘কাউন্সিলের’সাহায্য নিয়ে শাসনকার্য পরিচালনা করবেন।
(৫) যুদ্ধ, শান্তি, রাজস্ব ও দেশীয় রাজ্যগুলির সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের ব্যাপারে বোম্বাই ও মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির ওপর গভর্নর জেনারেলের কর্তৃত্ব সুনির্দিষ্ট করা হয়।
(৬) কোম্পানির কর্মচারীদের দুর্নীতি দমনের উদ্দেশ্যে এই আইনে বলা হয় যে, ভারতে চাকরি শেষে দেশে ফেরার সময় অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী ভারত থেকে কি পরিমাণ অর্থ নিয়ে দেশে ফিরল তার হিসেব দেওয়া বাধ্যতামূলক হয়। বলা বাহুল্য, আইনের এই অংশটি কোনওদিনই কার্যকর হয় নি।
(৭) আইনে বলা হয় যে, “রাজ্যজয় ও সাম্রাজ্যবিস্তার ইংল্যাণ্ডের জাতীয় মর্যাদা ও নীতি বহির্ভূত।” বলা বাহুল্য, এটি একটি বিরাট ধাপ্পা ছাড়া অন্য কিছু নয়।
পিটের ভারত শাসন আইনের ত্রুটি:
এই আইনের বেশ কিছু ত্রুটি ছিল।যেমন –
(১) পূর্বে ডাইরেক্টর সভা কোম্পানির শাসনকার্য পরিচালনা করত, কিন্তু এই আইন অনুসারে ‘বোর্ড অব কন্ট্রোল’ প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় ভারত শাসন ব্যাপারে ‘দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা‘ স্থাপিত হয়। এর ফলে শাসনব্যবস্থা জটিলহয়ে পড়ে।
(২) ‘বোর্ড অব কন্ট্রোল’-এর কোনও প্রত্যক্ষ প্রশাসনিক ক্ষমতা ছিল না। বোর্ড তার সিদ্ধান্ত সিক্রেট কমিটি-কে জানাত। এরপর সেই নির্দেশ ভারতে আসতে বহু সময় লেগে যেত। এর ফলে গভর্নর জেনারেল অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিজে সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হতেন।
(৩) ‘বোর্ড অব কন্ট্রোল’-এর সভাপতির হাতে সকল ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হওয়ায় কোম্পানির পরিচালক সভা তাঁকে সন্তুষ্ট করে সব কাজ হাসিল করে নিত।
পিটের ভারত শাসন আইনের গুরুত্ব :
বিভিন্ন ত্রুটি সত্ত্বেও এই আইনের গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না। যেমন –
(১) এই আইন দ্বারা ‘রেগুলেটিং আইন’-এর ত্রুটিগুলি দূর করার চেষ্টা করা হয় এবং অল্প-বিস্তর সংশোধন-সহ আইনটি ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বলবৎ ছিল।
(২) এই আইন দ্বারা গভর্নর জেনারেলের ক্ষমতা ও মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয় এবং তিনি বোম্বাই ও মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির ওপরেও কর্তৃত্ব পান।
(৩) কোম্পানিকে সামরিক ও বেসামরিক সকল ব্যাপারে ব্রিটিশ সরকারের অধীনস্থ করা হয় এবং ভারতীয় সাম্রাজ্যে সরকারের সার্বভৌমত্ব স্বীকৃত হয়। বিশিষ্ট রাজনীতিক এডমন্ড বার্ক এই আইনটির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
উপসংহার : এই আইন বাস্তবায়নের জন্য পার্লামেন্ট লর্ড কর্নওয়ালিসকে সরাসরি নিয়োগদান করে। ১৭৮৬ সালে গভর্নর জেনারেল হিসেবে যোগদানের অব্যবহিত পরেই কর্নওয়ালিস পার্লামেন্ট কর্তৃক অর্পিত সংস্কারমূলক দায়িত্ব পালনে তৎপর হন। ১৭৯৩ সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে করেন এবং তাঁর দায়িত্ব সম্পন্ন করেন।
The post পিটের ভারত শাসন আইন appeared first on Rlearn Education.