ভৌমজলের কার্য ও সংশ্লিষ্ট ভূমিরূপ : চতুর্থ পর্ব

উচ্চমাধ্যমিক ভূগোল (HS Geography) :ভৌমজলের কার্য ও সংশ্লিষ্ট ভূমিরূপ

আলোচনার বিষয় :

  • মানবজীবনে কার্স্ট ভূমিরূপের প্রভাব |
  • নদীর দ্বারা সৃষ্ট কার্স্ট ভূমিরূপ|
  • স্ট্যালাকটাইট ও স্ট্যালাগমাইট-এর পার্থক্য বা বৈশিষ্ট্য |
  • প্রস্রবণ কাকে বলে |
  • প্রকৃতি অনুসারে প্রস্রবণের শ্রেণিবিভাগ |
  • গঠন অনুসারে প্রস্রবণের শ্রেণিবিভাগ |


মানবজীবনে কার্স্ট ভূমিরূপের প্রভাব :
[1] খনিজ সম্পদের জোগান : কাস্ট অঞ্চল চুনাপাথর, ডলােমাইট, ক্যালসাইট প্রভৃতি খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ। লােহা ইস্পাত ও বিভিন্ন রাসায়নিক শিল্পে এসব খনিজ দ্রব্যের চাহিদাকে কেন্দ্র করে কর্মসংস্থানের সুযােগ ঘটে।

[2] আশ্রয়স্থল : চুনাপাথর অঞ্চলের গুহা মানুষের আশ্রয়স্থল, পবিত্র স্থান ও উপাসনার স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

[3] জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে: গুহার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদী ও প্রস্রবণের জল বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত হয়।

[4] পর্যটন শিল্পে: চুনাপাথর অঞ্চলের গুহাকে ঘিরে পর্যটন শিল্প ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করেছে।

[5] পশুপালন : কাস্ট অঞ্চলের মাটি অগভীর ও পাথুরে হওয়ায় মৃত্তিকার ক্ষয় বেশি হয়। এই অঞ্চলের মাটি আলগা হওয়ায় জল সহজেই গভীরে চলে যায়। জলের সঙ্গে মাটির পুষ্টিমৌলও ধৌত প্রক্রিয়ায় মাটির নীচে চলে যায়। তাই মাটি অনুর্বর হয়ে পড়ে। এই কারণে স্বাভাবিক উদ্ভিদ তেমন জন্মাতে পারে না। তৃণই এই অঞ্চলের প্রধান উদ্ভিদ। ফলে তৃণের ওপর নির্ভর করে এই অঞ্চলের মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে।

[6] শিল্প: প্রস্রবণের জলের ওপর নির্ভর করে পিক ক্যাভার্ন (ডার্বিশায়ার), কেন্টাকিতে পাতন কারখানা (Distillery) গড়ে উঠেছে।

[7] যোগাযোগ ব্যবস্থা : বন্ধুর ভূপ্রকৃতি, দ্রবণজনিত ধস প্রভৃতি প্রতিকূল পরিবেশের জন্য যােগাযােগ ব্যবস্থা তেমন উন্নত নয়। ফলে, সামগ্রিকভাবে এই অঞ্যলের উন্নয়ন সম্ভব হয়নি।

নদীর দ্বারা সৃষ্ট কার্স্ট ভূমিরূপ:
[1] গিরিখাত : কার্স্ট অঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদী দ্রবণ প্রক্রিয়ায় দ্রুত ক্ষয় করে। এই অঞ্চলে নদীর পার্শ্বক্ষয় অপেক্ষা নিম্নক্ষয়ই বেশি। তাই নদী এই অঞ্চলে খাড়া পাড়বিশিষ্ট গিরিখাত সৃষ্টি করে। এই অঞ্চলে সুড়ঙ্গের ছাদ ধসেও গিরিখাত সৃষ্টি হয়। ফ্রান্সের লট, টার্ন ও জন্টিনদীর গিরিখাত 300 মিটার থেকে 500 মিটার গভীর।

[2] অন্ধ উপত্যকা : কার্স্ট অঞ্চলের ওপর দিয়ে নদী প্রবাহিত হওয়ার সময় হঠাৎ সিঙ্কহােলে প্রবেশ করলে নদী ভূপৃষ্ঠে প্রবাহিত না হয়ে ভূ-অভ্যন্তর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। সিঙ্কহােলে প্রবেশ করা মাত্র মনে হয় যেন নদীর পৃষ্ঠ প্রবাহ বা নদী-উপত্যকা হঠাৎ সিঙ্কহােলে গিয়ে শেষ হয়েছে। কানাগলির মতাে নদী-উপত্যকা তখন অন্ধ উপত্যকায় পরিণত হয়।

[3] শুষ্ক উপত্যকা : কার্স্ট অঞ্চলে নদী-উপত্যকায় সিঙ্কহােল, সৃষ্টি হলে এবং এর মধ্য দিয়ে নদীর জল ভূ-অভ্যন্তরে প্রবেশ করলে সিঙ্কহােলের পরে নদী-উপত্যকার অংশটি জলশূন্য হয়ে পড়ে। নদী-উপত্যকার এইরূপ জলশূন্য অংশটিকে শুষ্ক নদী-উপত্যকা বলে।

[4] প্রাকৃতিক সুড়ঙ্গ ও প্রাকৃতিক সেতু : (১) কার্স্ট অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত নদী সিঙ্কহােলের মধ্য দিয়ে ভূগর্ভে প্রবেশ করে। দ্রবণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভূ-অভ্যন্তরে সুড়ঙ্গের সৃষ্টি হয়। এরূপ দ্রবণ প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট সুড়ঙ্গকে প্রাকৃতিক সুড়ঙ্গ বলে। ভার্জিনিয়ার প্রাকৃতিক সুড়ঙ্গটি 300 মিটার লম্বা, 40-42 মিটার প্রশস্ত এবং 25 মিটার উচ্চ। ভারতের মধ্যপ্রদেশের মারাদেও পর্বতের প্রাকৃতিক সুড়ঙ্গটিও বেশ দীর্ঘ ও প্রশস্ত। (২) প্রাকৃতিক সুড়ঙ্গের ছাদ ক্রমান্বয়ে ধসে পড়তে থাকলে সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য ক্রমশ কমতে থাকে। এভাবে সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য কমতে কমতে ছাদের কিছুটা অংশ সেতুর মতাে অবস্থান করে। একে প্রাকৃতিক সেতু বলে। ভার্জিনিয়ায় 35 মিটার লম্বা, 15 মিটার প্রশস্ত ও 50 মিটার উঁচু একটি প্রাকৃতিক সেতু আছে। অন্ধ্রপ্রদেশে কোটিগুড্ডার কাছে। পাহাড়ের একটি অভিক্ষিপ্তাংশে 120 মিটার প্রশস্ত একটি প্রাকৃতিক সেতু দেখা যায়।

স্ট্যালাকটাইট ও স্ট্যালাগমাইট-এর পার্থক্য বা বৈশিষ্ট্য :
চুনাপাথর অঞ্চলের ভূগরে ক্যালশিয়াম বাই কার্বনেটের সঞ্চয়ের ফলে স্ট্যালাকটাইট ও স্ট্যালাগমাইট সৃষ্টি হয় |
[1] স্ট্যালাকটাইট : (১) চুনাপাথর অঞ্চলে ভূ-অভ্যন্তরে গুহার ছাদ থেকে ঝুলন্ত চুনাপাথরের স্তম্ভকে স্ট্যালাকটাইট বলে। (২) গুহার ছাদ থেকে এগুলি ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে। (৩) স্তম্ভাকৃতির স্ট্যালাকটাইটগুলি স্ট্যালাগমাইট অপেক্ষা দৈর্ঘ্যে বড়াে হয়।
[2] স্ট্যালাগমাইট : (১) চুনাপাথর অঞ্চলে ভূ-অভ্যন্তরে গুহার তলদেশে দণ্ডায়মান চুনাপাথরের স্তম্ভকে স্ট্যালাগমাইট বলে। (২) গুহার মেঝেতে এগুলি সােজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। (৩) স্তম্ভাকৃতির স্ট্যালাগমাইট স্ট্যালাকটাইটের চেয়ে ছােটো হয়।

প্রস্রবণ :
ভূপৃষ্ঠের কোনাে অংশ দিয়ে ভূগর্ভস্থ জলের স্বাভাবিক নির্গমনকে প্রস্রবণ বলে। প্রস্রবণ প্রবহমান জলের স্রোতরূপে ভূপৃষ্ঠে আবির্ভূত হয়। ভূ-অভ্যন্তরে শিলার গঠন, সচ্ছিদ্রতা, প্রবেশ্যতা, পরিবাহিতা, জলের চাপ, ভূমির ঢাল, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ প্রভৃতি প্রস্রবণ সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পশ্চিমবঙ্গের বক্রেশ্বর ও হিমাচল প্রদেশের মণিকরণ উয় প্রস্রবণের এবং দেরাদুনের সহস্রধারা ও অমরকণ্টকের সােনামুড়া শীতল প্রস্রবণের উদহারণ।

প্রকৃতি অনুসারে প্রস্রবণের শ্রেণিবিভাগ :
জল নির্গমনের প্রকৃতি অনুযায়ী প্রশ্রবণকে প্রধানত 5টি ভাগে ভাগ করা যায়— [1] অবিরাম প্রস্রবণ, [2] সবিরাম প্রস্রবণ, [3] উয় প্রস্রবণ, [4] শীতল প্রস্রবণ ও [5] গিজার।

[1] অবিরাম প্রস্রবণ : যেসব প্রস্রবণ থেকে ভূগর্ভস্থ জল সারাবছর বিরামহীনভাবে নির্গত হয় সেইসব প্রস্রবণকে অবিরাম প্রস্রবণ বলে। অপ্রবেশ্য ও প্রবেশ্য শিলাস্তরের সংযােগস্থলে স্থায়ী সংপৃক্ত স্তর অবস্থান করলে এবং তা ভূপৃষ্ঠে উন্মুক্ত হলে অবিরাম প্রস্রবণ সৃষ্টি হয়। এই ধরনের প্রস্রবণের ক্ষেত্রে স্থায়ী সম্পৃক্ত স্তর বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত হয় এবং ক্রমাগত পরিপূরিত হয়। ছত্তিশগড় রাজ্যের অমরকন্টকে শােন নদীর উৎস সােনামুড়া প্রস্রবণটি অবিরাম প্রস্রবণের উদাহরণ।

[2] সবিরাম প্রস্রবণ : কোনাে কোনাে প্রস্রবণ থেকে ভূগর্ভস্থ জল সারাবছর নিরবচ্ছিন্নভাবে নির্গত হয় না। সাময়িক সম্পৃক্ত স্তরগুলি বর্ষার জলে পরিপূরিত হলে তখন ওই সময়ে প্রস্রবণগুলি থেকে পুনরায় ভূগর্ভস্থ জল নির্গত হতে শুরু করে। সাময়িকভাবে চলমান এধরনের প্রস্রবণকে সবিরাম প্রস্রবণ বলে। শুষ্ক ঋতুতে সাময়িক সম্পৃক্ত স্তরে জলের সরবরাহ বন্ধ হয়ে অথবা জলপীঠ সাময়িক সম্পৃক্ত স্তরের নীচে চলে গেলে প্রস্রবণগুলি শুকিয়ে যায়। বৃষ্টি হলে তা আবার সচল হয়ে ওঠে। ঝাড়খণ্ডের চাইবাসা জেলার লুপুগুটুর প্রস্রবণমালার কয়েকটি প্রস্রবণ বর্যাশেষে শীতের প্রারম্ভে শুকিয়ে যায়।

[3] উষ্ণ প্রস্রবণ : বৃষ্টির জল বা ভৌমজল ভূত্বকের দারণ বা ফাটলের মধ্য দিয়ে ভূত্বকের অভ্যন্তরে প্রবেশ করলে তা ভূ-অভ্যন্তরস্থ তাপীয় শক্তির প্রভাবে উত্তপ্ত হয়ে ভূপৃষ্ঠের কোনাে দুর্বল অংশ দিয়ে উষ্ণ জল প্রবাহরূপে বেরিয়ে এলে তাকে উয় প্রস্রবণ বলে। এই জলের উয়তা ভূপৃষ্ঠীয় জলের উয়তা অপেক্ষা অনেক বেশি হয়। যেসব মালভূমি ও পার্বত্য অঞ্চলের ভূত্বকীয় তাপ বেশি সেসব অঞ্চলের প্রস্রবণগুলি সাধারণত উষ্ণ হয়। পশ্চিমবঙ্গের বক্রেশ্বর, ঝাড়খণ্ডের রাজগির, হিমাচল প্রদেশের সিমলার নিকট তাতাপানি, বিপাশার উপনদী পার্বতীর পূর্ব তীরে মণিকরণের প্রশ্রবণগুলি উষ্ণ প্রস্রবণের উদাহরণ।

[4] শীতল প্রস্রবণ : যেসব প্রস্রবণের জলের উয়তা ভূপৃষ্ঠীয় জলের উয়তা অপেক্ষা কম বা এর সমান, সেসব প্রস্রবণকে শীতল প্রস্রবণ বলে। উত্তরাঞ্চলের দেরাদুনের সহস্রধারা একটি শীতল প্রস্রবণের উদাহরণ।

[5] গিজার : গিজার একটি আইরিশ শব্দ। এর অর্থ গর্জন। যেসব প্রস্রবণ দিয়ে ভূগর্ভে সঞ্চিত অত্যুয় জল ও বাম্প নিয়মিতভাবে একটা নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে গর্জন করতে করতে প্রবল বেগে সংকীর্ণ উপপৃষ্ঠীয় পথে ভূপৃষ্ঠের ঊর্ধ্বে উৎক্ষিপ্ত হয়, সেসব উয় প্রস্রবণকে গিজার বলে।আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমের পার্বত্য অঞ্চলে ইয়েলােস্টান পার্কের ওল্ড ফেথফুল গিজার পৃথিবী বিখ্যাত।

গঠন অনুসারে প্রস্রবণের শ্রেণিবিভাগ :
ভূতত্ত্ববিদ ব্রায়ান এই প্রস্রবণগুলিকে- [1] অভিকর্ষজ ও [2] অ-অভিকর্ষজ এই দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করেছেন। যে প্রস্রবণ থেকে ভূগর্ভস্থ জল পৃথিবীর অভিকর্ষীয় টানের অনুকূলে নির্গত হয় তাকে অভিকর্ষজ প্রস্রবণ এবং যে প্রস্রবণগুলি পৃথিবীর অভিকর্ষীয় টানের প্রতিকূলে সৃষ্টি হয় তাদের অ- অভিকর্ষজ প্রস্রবণ বলে।

অভিকর্ষজ প্রস্রবণ :

[1] অবনত জলগীঠ প্রস্রবণ : জলপীঠ অবনত হয়ে ভূপৃষ্ঠে উন্মুক্ত হলে ভূগর্ভস্থ জলের নির্গমন ঘটিয়ে যে প্রস্রবণ গঠিত হয় তাকে অবনত জলপীঠ প্রস্রবণ বলে। একই প্রকার প্রবেশ্য শিলার ভূমিরূপের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জলপীঠ বিস্তৃত হয়। উচ্চভূমি বা পর্বতের পাদদেশে জলপীঠ উন্মুক্ত হলেই এই প্রকার প্রস্রবণ সৃষ্টি হয়।


[2] সংযােগ প্রস্রবণ বা নতি প্রস্রবণ : অপ্রবেশ্য শিলাস্তরের ওপর প্রবেশ্য শিলাস্তর অনুভূমিকভাবে অবস্থান করলে ওই দুই শিলাস্তরের সংযােগস্থল কখনাে কখনাে ভূপৃষ্ঠে উন্মুক্ত হয়। শিলাস্তরের সংযােগস্থলে জলপীঠ উন্মুক্ত হলে ভূগর্ভস্থ জল প্রক্রবণের আকারে নির্গত হয়। এরূপ প্রস্রবণকে সংযােগ প্রস্রবণ বলে। নতি বরাবর অপ্রবেশ্য ও প্রবেশ্য শিলাস্তরের সংযােগস্থলে জলপীঠ উন্মুক্ত হয়ে প্রস্রবণ সৃষ্টি হয় বলে একে নতি প্রস্রবণও বলে।

[3] ডাইক প্রস্রবণ : প্রবেশ্য শিলাস্তরের মধ্যে ডাইক বা সিল জাতীয় আগ্নেয় উদ্ভেদ ভূপৃষ্ঠ পর্যন্ত উথিত হলে এর পেছনে জলবাহী স্তরে জল আটকে পড়ে। এই জলবাহী স্তরের জলপীঠ ডাইকের উচ্চতাকে অতিক্রম করলে ভূগর্ভস্থ জল প্রক্রবণের আকারে নির্গত হয়। এইরূপ প্রস্রবণকে ডাইক প্রস্রবণ বলে।

[4] বিদার ও সন্ধি প্রস্রবণ : ব্যাসল্ট ও গ্রানাইট জাতীয় অপ্রবেশ্য শিলার মধ্যে সৃষ্ট বিদার ও সন্ধিতল দিয়ে বৃষ্টির জল ভূ-অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। পরে তা আবার ভূপৃষ্ঠে উন্মুক্ত বিদার ও সন্ধিপ্রান্ত দিয়ে প্রস্রবণের আকারে বেরিয়ে আসে। একে বিদার ও সন্ধি, প্রস্রবণ বলে। ছত্তিশগড়ের অমরকন্টকে ব্যাসল্ট শিলায় সৃষ্ট দারণপ্রান্ত দিয়ে নির্গত শােনমুড়া প্রস্রবণ বিদার ও সন্ধি প্রস্রবণের উদাহরণ।

[5] চ্যুতি প্রস্রবণ : চ্যুতির ফলে জলবাহী প্রবেশ্য শিলাস্তর অপ্রবেশ্য শিলাস্তর দ্বারা আবদ্ধ হয়ে জলবাহী প্রবেশ্য শিলাস্তরের জল চ্যুতি বরাবর ভূপৃষ্ঠের ওপরে উঠে এলে তাকে চ্যুতি প্রস্রবণ বলে।


[6] ভ্যকুসিয়ান প্রস্রবণ বা দ্রবণ প্রস্রবণ : চুনাপাথর প্রকৃতিগতভাবে ভীষণ দারণযুক্ত হয়। বৃষ্টির জল দারণের মধ্য দিয়ে প্রবেশ করলে ওই দারণ বা ফাটল বরাবর চুনাপাথর দ্রবীভূত হয়। ফলে ফাটল বা দারণ ক্রমশ প্রসারিত হতে থাকে। ভূ-অভ্যন্তরের জল প্রসারিত ফাটলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে চুনাপাথর স্তরের পাদদেশ থেকে প্রবল বেগে বেরিয়ে আসে। একে ভ্যকুসিয়ান বা দ্রবণ প্রস্রবণ বলে। ফ্রান্সের রােন উপত্যকায় ফনটেন দ্য ভ্যস নামক প্রস্রবণ থেকে দ্রবণ প্রস্রবণের নামকরণ হয়েছে ভ্যকুসিয়ান প্রস্রবণ।

অ-অভিকর্ষজ প্রস্রবণ :

অ-অভিকর্ষজ প্রস্রবণগুলি হল-

[1] আর্তেজীয় প্রস্রবণ : ভাঁজপ্রাপ্ত শিলার অধােভঙ্গে দুটি অপ্রবেশ্য শিলার মধ্যে প্রবেশ্য শিলা অবস্থান করলে এবং এদের প্রান্ত দুটি ভূপৃষ্ঠে উন্মুক্ত হলে বৃষ্টির জল ভূপৃষ্ঠের উন্মুক্ত অংশ দিয়ে প্রবেশ্য শিলা স্তরের নীচের অংশে সঞ্চিত হয়। একে আবদ্ধ জলবাহী স্তর বলে। এই অবস্থায় ভৌমজল প্রচণ্ড চাপের মধ্যে অবস্থান করে। জলবাহী স্তরের এইরূপ অবস্থাকে আর্তেজীয় অবস্থা এবং স্তরটিকে আর্তেজীয় স্তর বলে। এই অবস্থায় ওপরের অপ্রবেশ্য শিলাস্তরের ফাটল বা দুর্বল অংশ দিয়ে জল ফোয়ারার মতাে ভূপৃষ্ঠে বেরিয়ে আসে। একে আর্তেজীয় প্রস্রবণ বলে। ফ্রান্সের আর্ত্তায়েস প্রদেশে এইরূপ আর্তেজীয় স্তরে প্রথম কূপ খনন করা হয় বলে এই জাতীয় কূপের নাম আর্তেজীয় কূপ এবং প্রস্রবণের নাম আর্তেজীয় প্রস্রবণ।

[2] আগ্নেয় প্রস্রবণ : উত্তপ্ত আগ্নেয় শিলার মধ্য দিয়ে জল প্রবাহিত হয়ে আগ্নেয়গিরির প্রধান বা গৌণ জ্বালামুখ দিয়ে ভূগর্ভের জল অত্যন্ত গরম অবস্থায় বেরিয়ে এলে তাকে আগ্নেয় প্রস্রবণ বলে।

[3] গিজার : যে প্রস্রবণ দিয়ে ভূগর্ভের সঞ্চিত অত্যুয় জল ও বাষ্প নিয়মিতভাবে একটা নির্দিষ্ট সময় অন্তর গর্জন করতে করতে প্রবল বেগে ভূপৃষ্ঠের সংকীর্ণ পথ ধরে ভূপৃষ্ঠে উৎক্ষিপ্ত হয় তাকে গিজার বলে। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম অংশে মন্টানা প্রদেশের ইয়েলােস্টোন জাতীয় উদ্যানের ওল্ড ফেথফুল গিজার পৃথিবী বিখ্যাত।

Rlearn Education