হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের শ্রেণিবিভাগ

উত্তরের পার্বত্য অঞ্চলের বর্ণনা | হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের বর্ণনা | প্রস্থ বরাবর হিমালয় পর্বতের শ্রেণিবিভাগ | উত্তর-দক্ষিণে হিমালয় পর্বতের শ্রেণিবিভাগ

Q. ভূপ্রাকৃতিক বৈচিত্র্য অনুসারে ভারতকে কয়ভাগে ভাগ করা হয় ও কী কী? যে-কোনো একটি ভাগের সংক্ষিপ্ত ভারতের উত্তরের পার্বত্য অঞ্চলের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।

★★ অথবা, ভূপ্রকৃতি অনুসারে ভারতের হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের শ্রেণিবিভাগ করো।

অথবা, উত্তর দক্ষিণে হিমালয় পর্বতের শ্রেণিবিভাগ করো |

অথবা, প্রস্থাবরাবর হিমালয় পর্বতের শ্রেণিবিভাগ করো |

উত্তর : ভূপ্রাকৃতিক বৈচিত্র্য অনুসারে ভারতকে সাধারণত 5টি ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন—

  • উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল
  • উত্তরের নদীগঠিত সমভূমি অঞ্চল,
  • উপদ্বীপীয় মালভূমি অঞ্চল
  • পশ্চিমের মরুভূমি অঞ্চল
  • উপকূলের সমভূমি অঞ্চল ও
  • দ্বীপপুঞ্জ |

উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল :

অবস্থান :

ভারতের একেবারে উত্তরে অবস্থিত পার্বত্য অঞ্চল উত্তর-পশ্চিমে জম্মু-কাশ্মীর (নাঙ্গা পর্বত) থেকে শুরু করে উত্তর-পূর্বে অরুণাচল প্রদেশ (নামচাবারওয়া পর্যন্ত ধনুক বা আধখানা চাঁদের মতো অবস্থান করছে।

পর্বতশ্রেণি : A ] হিমালয় ও B] কারাকোরাম হল এখানকার প্রধান দুটি পর্বতশ্রেণি।

প্রস্থাবরাবর হিমালয় পর্বতের শ্রেণিবিভাগ | উত্তর দক্ষিণে হিমালয় পর্বতের শ্রেণিবিভাগ

A ] হিমালয় : পৃথিবীর উচ্চতম পর্বতশ্রেণি
হল হিমালয়। হিমালয় কথার অর্থ ‘বরফের গৃহ। হিমালয়ের উত্তর থেকে দক্ষিণে চারটি সমান্তরাল পর্বতশ্রেণি দেখা যায়। যথা—

ট্রান্স বা টেথিস হিমালয় : হিমালয়ের
চারটি পর্বতশ্রেণির মধ্যে সবচেয়ে উত্তরে অবস্থিত হল ট্রান্স বা টেথিস হিমালয়। ভারতের জম্মু-কাশ্মীর ও হিমাচল প্রদেশে কিছু অংশ থাকলেও এর অধিকাংশই তিব্বতে অবস্থিত। তাই এর নাম তিব্বতীয় হিমালয়। টেথিস নামক মহিখাতে কোটি বছর আগে প্রথম ভূআলোড়নে হিমালয়ের এই অংশ সৃষ্টি হয় বলে একে টেথিস হিমালয় বলা হয় ।

বৈশিষ্ট্য :

  • (i) হিমালয়ের একেবারে উত্তরে .অবস্থিত টেথিস হিমালয় ধীরে ধীরে তিব্বত, মালভূমিতে মিশেছে।
  • (ii) এখানকার গড় উচ্চতা 3,000 – 4,000 মিটার।
  • (ii) হিমালয়ের এই অংশে জাস্কর পবত অবস্থিত। এর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ লিওপারগেল (7,420 মি.)।
  • (iv) প্রায় 40-225 কিমি চওড়া এই অংশটি প্রকৃতপক্ষে একটি তুষারাবৃত মালভূমি।
  • (v) এর দৈর্ঘ্য প্রায় 1000 কিমি।

হিমাদ্রি বা গ্রেট হিমালয় : টেথিস হিমালয়ের দক্ষিণে অবস্থিত সর্বোচ্চ পর্বতশ্রেণি হিমাদ্রি নামে পরিচিত। টেথিস হিমালয় সৃষ্টির সময়ই হিমাদ্রি হিমালয় সৃষ্টি হয়।

বৈশিষ্ট্য :

  • (i) হিমাদ্রি হিমালয় পশ্চিমে নাঙ্গা পর্বত থেকে পূর্বে নামচাবারওয়া পর্যন্ত বিস্তৃত। (ii) হিমাদ্রির গড় উচ্চতা 6,000 মিটারের বেশি।
  • (iii) এই অংশে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট, পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা এবং অন্নপূর্ণা, নন্দাদেবী, কাঞ্চনজঙ্ঘা, কেদারনাথ, মাকালু, ধবলগিরি প্রভৃতি শৃঙ্গ অবস্থিত৷
  • (iv) এই শৃঙ্গগুলিতে সারাবছর বরফ জমে থাকে।
  • (v) হিমাদ্রির উত্তর ঢাল ঢালু হলেও দক্ষিণ ঢাল খুব খাড়া।
  • (vi) এটি প্রায় 25 কিমি প্রশস্ত এবং প্রায় 2500 কিমি দীর্ঘ।
  • (vii) এখানে বেশ কিছু গিরিপথ রয়েছে। যেমন নাথুলা, বুর্জিলা, জেলেপলা, জোজিলা, সিপকিলা প্রভৃতি।
  • (viii) হিমাদ্রি হিমালয়ের প্রধান হিমবাহগুলি হল গঙ্গোত্রী, যমুনোত্রী প্রভৃতি। এই সকলহিমবাহ থেকে বহু নদনদীর জন্ম হয়েছে।
  • (ix) মাউন্ট এভারেস্টকে নেপালি ভাষায় সাগরমাথা এবং তিব্বতীয় ভাষায় চোমোলুংমা বলা হয়।

হিমাচল হিমালয় : হিমাদ্রি হিমালয়ের দক্ষিণে যে সুউচ্চ পর্বতশ্রেণি পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত তাকে হিমাচল হিমালয় বা মধ্য হিমালয় বলে। প্রায় 2.5 থেকে 3 কোটি বছর আগে দ্বিতীয়বার সংঘটিত প্রবল ভূ-আলোড়নে হিমালয়ের এই অংশটি সৃষ্টি হয়।

বৈশিষ্ট্য :

  • (i) হিমাচল হিমালয়ের গড় উচ্চতা 3,000 – 4,500 মিটার।
  • (ii) পিরপাঞ্জাল ও ধওলাধর পর্বতশ্রেণি দুটি এই অংশে অবস্থিত।
  • (iii) কাশ্মীর উপত্যকা,দার্জিলিং, সিমলা, নৈনিতাল, মানালি, মুসৌরি প্রভৃতি মনোরম সৌন্দর্যময় স্থানগুলি এখানে অবস্থিত।
  • (iv) এখানকার প্রধান গিরিপথগুলি হল বানিহাল, পিরপাঞ্জাল, সোলারগড় প্রভৃতি।
  • (v) এই পর্বতশ্রেণি 60 – 90 কিমি চওড়া |

শিবালিক হিমালয় : হিমালয়ের সর্ব দক্ষিণের
পর্বতশ্রেণি শিবালিক বা বহিঃহিমালয় নামে পরিচিত। প্রায় 20 লক্ষ থেকে 2 কোটি বছর
আগে তৃতীয়বার প্রবল ভূআলোড়নে শিবালিক হিমালয় সৃষ্টি হয়।

বৈশিষ্ট্য :

  • (i) হিমাচল হিমালয়ের সমান্তরালে প্রায় অবিচ্ছিন্নভাবে শিবালিক হিমালয় বিস্তৃত।
  • (ii) এর দৈর্ঘ্য প্রায় 2,500 কিমি এবং প্রস্থ প্রায় 15 – 50 কিমি।
  • (iii) শিবালিকের গড় উচ্চতা 1,500 মিটারের কম।
  • (iv) শিবালিক ও হিমাচল হিমালয়ের মাঝের সংকীর্ণ উপত্যকাকে দুন বলা হয়। যেমন দেরাদুন, কোটা প্রভৃতি।
  • (v) শিবালিক হিমালয়ের পাদদেশের ঘন অরণ্যাবৃত স্যাঁতসেঁতে অঞ্চল হল তরাই।

[B] কারাকোরাম :

অবস্থান : জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যে হিমাদ্রি হিমালয়ের উত্তরে অবস্থিত পর্বতশ্রেণিটি হল কারাকোরাম।

বৈশিষ্ট্য :

  • (i) এখানকার উল্লেখযোগ্য শৃঙ্গগুলি হল গডউইন অস্টিন, হিডেক পিক প্রভৃতি। এটি পৃথিবীর দ্বিতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ।
  • (ii) এখানে অবস্থিত সিয়াচেন হিমবাহ ভারতের দীর্ঘতম হিমবাহ। এছাড়া বলটারো, হিসপার প্রভৃতি হিমবাহ উল্লেখযোগ্য। এখানে রয়েছে কারাকোরাম গিরিপথ যা পৃথিবীর উচ্চতম গিরিপথ।
  • (iii) এই পর্বতশ্রেণির উচ্চতা খুব বেশি বলে পর্বতের শীর্ষদেশ সারা বছর বরফে ঢাকা থাকে। সেজন্য কারাকোরাম পর্বতকে ‘বসুধার ধবলশীর্ষ’ বলা হয়।
  • (iv) কারাকোরামের দৈর্ঘ্য প্রায় 400 কিমি।
Rlearn Education