Sikkha bistare Gonomaddhomer Bhumika | Bangla Rochona
রচনা সংকেত :
- ভূমিকা
- গণমাধ্যম কি ?
- সংবাতপত্র
- বেতার
- দূরদর্শন
- চলচ্চিত্র
- ইন্টারনেট
- উপসংহার |
ভূমিকা :
যে-কোনো দেশ ও জাতির উন্নতিতে শিক্ষা সর্বাগ্রে প্রয়োজন। তবে শিক্ষা বলতে যদি শুধুমাত্র বিদ্যালয়ের পাঠ্য পুস্তক কেন্দ্রিক পড়াশোনাকে বোঝায় তবে তা শিক্ষার সম্পূর্ণ রূপকে প্রকাশ করে না। পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন ঘটনা, অভিজ্ঞতা থেকেও মানুষের শিক্ষা প্রাপ্তি ঘটে। আর পাঠ্যক্রম- বহির্ভূত এই শিক্ষার আধার হিসেবে গণমাধ্যমের ভূমিকা সর্বজন স্বীকৃত। শিক্ষাকে দৃশ্য ও শ্রাব্য করে তুলে শিক্ষণীয় বিষয়কে আগ্রহের উপযোগী করে উপস্থাপন করেছে গণমাধ্যম। দূরকে করেছে নিকট। তাই পৃথিবীব্যাপী সর্বশিক্ষা অভিযানে গণমাধ্যমের ভূমিকা তাৎপর্যপূর্ণ।
গণমাধ্যম কী ?
প্রাচীনকালে গুরুগৃহে থেকে যে তপোবন কেন্দ্রিক শিক্ষার প্রচলন তা ছিল জীবনমুখী। পরবর্তীকালে ব্রতকথা, পাঁচালি, ছড়া, পুরাণ ইত্যাদির মাধ্যমে লোকশিক্ষা বা গণশিক্ষা বিস্তার লাভ করত। ক্রমে সভ্যতার অগ্রগতিতে উন্নত হল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলেই সংবাদপত্র, বেতার, দূরদর্শন, চলচ্চিত্র, ইনটারনেট লোকশিক্ষকের ভূমিকাতে অবতীর্ণ হল।
সংবাদপত্র :
সংবাদপত্র বর্তমান পৃথিবীর এক অপরিহার্য বন্ধু। দেশ-বিদেশের নানাবিধ সংবাদ নিয়ে সে হাজির হয় কৌতূহলী পাঠকের সামনে। বিশ্বরাজনীতি থেকে শুরু করে কৃষি- শিল্প- সাহিত্য সংস্কৃতি, খেলাধুলা-সিনেমা- থিয়েটার সংক্রান্ত নানা প্রতিবেদন, অর্থনীতি- ইতিহাস- ভূগোল-দর্শন-বিজ্ঞানের নানা প্রবন্ধ, সচিত্র বিজ্ঞাপন ইত্যাদির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের চেতনার উন্মেষ ঘটায় সংবাদপত্র। এ ছাড়াও আবহাওয়ার পূর্বাভাসবার্তায়, কর্মসংস্থানের খুঁটিনাটি নির্দেশে, বাজারদরের গতিপ্রকৃতি বর্ণনায়, কেবল শিক্ষাবিস্তারে নয়, আধুনিক জনজীবনে সংবাদপত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।
বেতার :
শহরের সীমানা ছাড়িয়ে গ্রামেগঞ্জে কৃষকের ঘরে ঘরে পৌঁছে যায় বেতারের বার্তা। চিত্তবিনোদন থেকে শুরু করে জ্ঞান-বিজ্ঞান, খেলাধুলা, নাট্যাভিনয়; পল্লিবাংলার স্বার্থে পল্লিমঙ্গল আসর, কৃষিকথাধর্মী বেতারানুষ্ঠান, কৃষিসমস্যা সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞের আলোচনা- অভিমত এই মাধ্যমকে জনপ্রিয় করে তুলেছে।
দূরদর্শন : মৌখিক শিক্ষাবিস্তারের আধুনিক দৃশ্য-শ্রাব্য মাধ্যম হল দূরদর্শন। শিশু থেকে বৃদ্ধ, কৃষিজীবী থেকে বুদ্ধিজীবী, শহরবাসী থেকে পল্লিবাসী—সকলের দূরদর্শনের প্রতি আকর্ষণ তীব্র। দূরদর্শনে সম্প্রচারিত ক্যুইজ, জ্ঞান-বিজ্ঞানমূলক আলোচনা, তথ্যচিত্র, ঐতিহাসিক-ভৌগোলিক ঘটনাসমূহ, চলচ্চিত্র ইত্যাদি ছাত্রসমাজকেও ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে।
চলচ্চিত্র :
লোকশিক্ষা ও লোকমনোরঞ্জনের মাধ্যম স্বরূপ চলচ্চিত্রের গুরুত্ব অপরিসীম। কাহিনিচিত্র, তথ্যচিত্র মানুষের জ্ঞানের প্রসার ঘটায়। অবসরযাপনে, সাংস্কৃতিক বোধের প্রসারে, মূল্যবোধের বিকাশে চলচ্চিত্র আধুনিক জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গণমাধ্যম।
ইনটারনেট :
পৃথিবী ও মানুষের মধ্যবর্তী দূরত্ব কমাতে বিজ্ঞানের নবতম পরিষেবা ইনটারনেট। অন্যসকল মাধ্যমকে আজ সে একসূত্রে গ্রথিত করেছে। সময়ের অপচয় রোধে ই-বুক, ই-পেপার, ইউটিউবের পাশা- পাশি ফেসবুক, হোয়াট্স অ্যাপ, টুইটার ইত্যাদি সামাজিক ই-মাধ্যমের অবদানে সমগ্র পৃথিবী আজ এক পলকে হাতের মুঠোয়। বিশ্বের যে-কোনো প্রান্তের যে-কোনো বার্তা মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ছে ইনটারনেট পরিষেবার সহায়তায়। শিক্ষাক্ষেত্রে যার ইতিবাচক প্রভাব লক্ষণীয়।
উপসংহার :
গণমাধ্যম যেমন শিক্ষাবিস্তারে, জনসাধারণের সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, তেমন গণমাধ্যমের অতিরিক্ত ব্যবহার মানুষকে বিপথে চালিত করে। গণমাধ্যমে সম্প্রচারিত কুরুচিকর বিজ্ঞাপন শিক্ষায় কুপ্রভাব বিস্তার করে। হিংসাত্মক দৃশ্য প্রভাবিত করে শিশুমনকে। তবে এই নেতিবাচক প্রভাব সরিয়ে গণমাধ্যমকে যুগোপযোগী হয়ে উঠতে হবে, সুদূরপ্রসারী প্রভাব ছড়িয়ে দিতে হবে জনমানসে। পাঠ্যক্রমকেন্দ্রিক শিক্ষার সহায়করূপে উপস্থাপিত গণমাধ্যমগুলি, তবেই—গণমাধ্যমের গণ-অভিমুখী মুখ্য উদ্দেশ্য সাধিত হবে |