শিক্ষা সংস্কারক হিসেবে বিদ্যাসাগরের অবদান

শিক্ষা সংস্কারক হিসেবে বিদ্যাসাগরের অবদান : মাধ্যমিক ইতিহাস

প্রশ্ন:- শিক্ষা সংস্কারক হিসেবে বিদ্যাসাগরের অবদান আলোচনা কর।

ভূমিকা : শিক্ষাবিস্তারের ক্ষেত্রে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন। অজ্ঞানতার অন্ধকার দূর করে মানুষের মধ্যে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে তিনি বাংলার জনশিক্ষা, উচ্চশিক্ষা ও নারীশিক্ষার প্রসারে এবং বাংলা গদ্যের বিকাশে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন।

মডেল স্কুল স্থাপন: শিক্ষার মানোন্নয়নের উদ্দেশ্যে বিদ্যাসাগর বাংলার বিভিন্ন জেলায় মডেল স্কুল বা আদর্শ বিদ্যালয় স্থাপন করেন। এগুলির মধ্যে বেশ কয়েকটি বিদ্যালয় তিনি নিজ ব্যয়ে চালাতেন।

নারী শিক্ষার প্রসার: বিদ্যাসাগর বুঝেছিলেন যে নারী সমাজের মুক্তির জন্য তাদের শিক্ষার অত্যন্ত প্রয়োজন। তাই তিনি নারী শিক্ষার প্রসারে সক্রিয় উদ্যোগ নেন। তাঁর উদ্যোগে গ্রামাঞ্চলে ৩৫টি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দে জন এলিয়ট ড্রিংকওয়াটার বেথুনের সহায়তায় কলকাতায় তিনি প্রতিষ্ঠা করেন হিন্দু ফিমেল স্কুল, যা বর্তমানে বেথুন স্কুল নামে পরিচিত।

মেট্রোপলিটন ইন্সটিটিউশন: শিক্ষাবিস্তারের কাজে বিদ্যাসাগরের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি হল কলকাতায় মেট্রোপলিটন ইন্সটিটিউশনের প্রতিষ্ঠা। বর্তমানে এটি বিদ্যাসাগর কলেজ নামে পরিচিত।

মাতৃভাষায় শিক্ষাদান: মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের উপর বিদ্যাসাগর প্রথম থেকেই জোর দিয়েছিলেন। তবে একই সঙ্গে তিনি পাশ্চাত্য শিক্ষার গুরুত্বকে অস্বীকার করেননি। এরই পাশাপাশি তিনি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সমন্বয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন।

পাঠ্যপুস্তক রচনা: শিক্ষাবিস্তারের কাজে একটি অন্যতম আবশ্যিক উপাদান হল পাঠ্যপুস্তক। বিদ্যাসাগর নিজে এই উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ‘বর্ণপরিচয়’, ‘কথামালা’, ‘বোধোদয়’, ‘নীতিবোধ’ প্রভৃতি পাঠ্যপুস্তক রচনার মধ্য দিয়ে তিনি এই কাজে অগ্রসর হন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -এর কাছে তিনি ছিলেন বাংলা ভাষার প্রথম যথার্থ শিল্পী।

নিয়মকানুন তৈরি: শিক্ষার কাজে তিনি বেশকিছু নিয়ম কানুন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কেবলমাত্র ব্রাহ্মণ ও বৈদ্য সন্তানরা সংস্কৃত পড়তে পারবে এই নীতি তুলে দিয়ে তিনি সকল বর্ণের হিন্দু ছাত্রদের জন্য সংস্কৃত পড়ার দ্বার খুলে দেন। তিনি শিক্ষকদের ইচ্ছামতো আসা ও যাওয়া বন্ধ করে নতুন নিয়ম কানুন প্রবর্তন করেন। পাশাপাশি রবিবার ছুটির নিয়ম চালু করেন।

উপসংহার : মানবদরদি, ন্যায় ও সত্যের জন্য দ্বিধাহীন সংগ্রামের প্রতিমূর্তি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বাংলায় শিক্ষা প্রসারের জন্য আজীবন সংগ্রাম করেগিয়েছেন। তিনি তার একাধিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে বাংলায় সর্ব- সাধারণের জন্য নবরূপে শিক্ষার সূচনা করেছিলেন। নারীশিক্ষার প্রসারে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে তিনি নারীশিক্ষা বিস্তারের পথিকৃৎ হয়ে রয়েছেন।

Rlearn Education