শিক্ষার বিস্তারে ও শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধিতে ছাপা বইয়ের ভূমিকা

শিক্ষার বিস্তারে ও শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধিতে ছাপা বইয়ের ভূমিকা : মাধ্যমিক ইতিহাস

ভূমিকা : ঔপনিবেশিক আমলে বাংলা তথা ভারতে আধুনিক মুদ্রণব্যবস্থা চালু হলে মানুষের হাতে প্রচুর ছাপা বইপত্র আসতে থাকে। এসব ছাপা বইয়ের সঙ্গে শিক্ষা বিস্তারের গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ছাপা বই একদিকে যেমন শিক্ষার অগ্রগতি ঘটায়, অন্যদিকে ক্রমবর্ধমান শিক্ষার অগ্রগতি ছাপা বইয়ের চাহিদা বৃদ্ধি করে।


[1] গণশিক্ষার দিকে যাত্রা: ইতিপূর্বে হাতে লেখা বইয়ের দাম খুব বেশি হত। তাই এসব বই সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে ছিল এবং শিক্ষাদান ব্যবস্থা ছিল উচ্চবিত্তদের মধ্যে
সীমাবদ্ধ। কিন্তু ছাপা বই দামে সস্তা হওয়ায় তা সাধারণ মানুষ কেনার ও পড়ার সুযোগ পায়। এভাবে শিক্ষাক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ ঘটে যা গণশিক্ষার প্রসারের পটভূমি তৈরি করে।

[2] পাঠ্যবইয়ের সহজলভ্যতা: ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রচুর পরিমাণ মুদ্রিত ও দামে সস্তা পাঠ্যবই বাজারে আসতে থাকে| ফলে বইয়ের অভাব দূর হয় এবং শিক্ষা বিস্তারের পথ মসৃণ হয়।

[3] মাতৃভাষায় শিক্ষা: ছাপাখানার মাধ্যমে বাংলা ভাষায় ভাষাশিক্ষা, গণিত, ইতিহাস, ভূগোল, বিজ্ঞান ইত্যাদি বই, বোধিনী বা সহায়িকা বই বাংলা ভাষায় ছাপা হতে থাকে।
ফলে, সাধারণ শিক্ষার্থীরা মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পায়।

[4] শিশুশিক্ষা: ছাপা বই শিশুশিক্ষার অগ্রগতি ঘটাতে সহায়তা করে। ছাপাখানায় মুদ্রিত মদনমোহন তর্কালংকারের ‘শিশুশিক্ষা’, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ‘বর্ণপরিচয়’,রামসুন্দর
বসাকের ‘বাল্যশিক্ষা’র মতো বইগুলি শিশু শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।

[5] উচ্চশিক্ষা: আশিস খাস্তগীর উল্লেখ করেছেন যে, উনিশ শতকের মধ্যভাগে ব্যাপক পরিমাণে পাঠ্যবই প্রকাশ হতে থাকলে তা উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বিশেষ সহায়ক হয়ে ওঠে।
ফলে, বাঙালির উচ্চশিক্ষার অগ্রগতি অনেক সহজ হয়।

[6] নারীশিক্ষার অগ্রগতি: উনিশ শতকের শেষার্ধে নারীশিক্ষার দাবি ক্রমশ জোরদার হতে থাকে। এই পরিস্থিতিতে সুলভ ছাপা বই নারীদের হাতে পৌঁছালে নারীশিক্ষার গতি ত্বরান্বিত হয়।

উপসংহার: ছাপা বই একদিকে শিক্ষার বিস্তারে ভূমিকা নিয়েছিল, অন্যদিকে শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *