শিক্ষার প্রসারে জাতীয় শিক্ষা পরিষদের ভূমিকা | মাধ্যমিক ইতিহাস

প্রশ্ন : শিক্ষার প্রসারে জাতীয় শিক্ষা পরিষদের ভূমিকা কী ছিল?

ভূমিকা: ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম কর্মসূচি রূপে গড়ে ওঠে জাতীয় শিক্ষা আন্দোলন | এর পরিণতিতে স্থাপিত হয় জাতীয় শিক্ষা পরিষদ।

[1] প্রতিষ্ঠা : ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের ১১ মার্চ সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সভাপতিত্বে ৯১ জন সদস্য নিয়ে জাতীয় শিক্ষা পরিষদ গঠিত হয়। রাজা সুবোধচন্দ্র মল্লিক, ব্রজেন্দ্র কিশোর রায়চৌধুরী, সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরী প্রমুখ যথাক্রমে জাতীয় শিক্ষার প্রসারের জন্য ১ লক্ষ, ৫ লক্ষ ও ২.৫ লক্ষ টাকা দান করেন।

[2] উদ্দেশ্য : জাতীয় শিক্ষা পরিষদ প্রতিষ্ঠার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল—

[i] জাতীয় আদর্শের ভিত্তিতে ভাষা, সাহিত্য, বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা করা।

[ii] শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেশসেবার মনোভাব গড়ে তোলা।

[iii] নৈতিক শিক্ষার প্রসার ঘটানো।

[iv] মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষার প্রসার ঘটানো।

[3] শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন : জাতীয় শিক্ষা পরিষদের উদ্যোগে গড়ে ওঠে একাধিক জাতীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে স্থাপিত হয় বেঙ্গল ন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। এর প্রথম অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন বিপ্লবী অরবিন্দ ঘোষ। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাধাকুমুদ মুখোপাধ্যায়, বিনয়কুমার সরকার, ডি ডি কোসাম্বি প্রমুখ পণ্ডিতগণ অধ্যাপনা করেন। এ ছাড়া জাতীয় শিক্ষা পরিষদ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠারউদ্যোগও গ্রহণ করে। বিখ্যাত কংগ্রেস নেতা তথা শিক্ষাবিদ রাসবিহারী ঘোষ এই প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি পদে নিযুক্ত হন |

[4] ব্যর্থতা : জাতীয় শিক্ষা পরিষদ স্বদেশি আদর্শের ধাঁচে জাতীয় শিক্ষার প্রসারে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করলেও শেষপর্যন্ত নানান কারণে এই উদ্যোগ ব্যর্থ হয়। এর কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে—

[i] জাতীয় শিক্ষা পরিষদের প্রতি ব্রিটিশ সরকারের নেতিবাচক মনোভাব |

[ii] জাতীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে অর্জিত ডিগ্রি লাভের পরও শিক্ষার্থী সরকারি চাকরি পেত না।

[iii] প্রবল অর্থসংকটের মুখোমুখি হয়ে জাতীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির কাজকর্ম অনেকাংশেই বন্ধ হয়ে যায়।

[iv] অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীদের একাংশ জাতীয় শিক্ষা অপেক্ষা ব্রিটিশ সরকারের শিক্ষাব্যবস্থাকে বেশি কার্যকরী মনে করত।

উপসংহার: তবে ব্যর্থতা সত্ত্বেও জাতীয় শিক্ষা পরিষদের উদ্যোগে জাতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলি বহু মেধাবী শিক্ষার্থীর জন্ম দেয়। সর্বোপরি, বিকল্প শিক্ষাভাবনার বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নানা উদ্যোগ গ্রহণ ও জাতীয় শিক্ষার প্রসারের মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠানটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

Rlearn Education