সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে ছাত্রদের ভূমিকা

ভূমিকা: ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলন একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে ছাত্রসমাজ বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করে। বিপ্লবীদের স্মৃতিকথা, সমসাময়িক ঐতিহাসিক বিবরণী বা সরকারি প্রতিবেদন থেকে বিপ্লবী আন্দোলনে ছাত্রদের অংশগ্রহণের কথা জানা যায়।

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে ছাত্রদের ভূমিকা :

বিপ্লবী দলসমূহ: বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের আগে এবং পরে বাংলায় কয়েকটি গুপ্ত সমিতি গড়ে ওঠে। এই সমিতিগুলিতে যোগদানের মাধ্যমে বাংলার ছাত্রসমাজ সশস্ত্র বৈপ্লবিক কাজে অংশগ্রহণ করে।

অনুশীলন সমিতি : বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়-এর ‘অনুশীলন তত্ত্ব’ এই বিপ্লবী দলের আদর্শ ছিল। ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে সতীশচন্দ্র বসু অনুশীলন সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন। বহু ছাত্র এই দলের সদস্য ছিল। এখানে শারীরশিক্ষা ও অস্ত্রশিক্ষা দেওয়া হত।

যুগান্তর দল : ভগিনী নিবেদিতা ও অরবিন্দ ঘোষের উৎসাহে ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে যুগান্তর দল প্রতিষ্ঠিতহয়। বারীন্দ্র ঘোষ, ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত, হেমচন্দ্র কানুনগো এই দলের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।

অ্যান্টি সার্কুলার সোসাইটি: স্বদেশি আন্দোলনের সময় স্কুলছুট ছাত্রদের নিয়ে অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন শচীন্দ্রপ্রসাদ বসু। ডিফেন্স অ্যাসোসিয়েশন নামে এই সমিতির একটি শাখা ছিল। সেখানে অস্ত্রশিক্ষা দেওয়া হত।

বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স: ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত মুক্তিসংঘ ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স নামে পরিচিত হয়। এই দলের কার্যাবলি পরবর্তীকালে বাংলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে।

ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি : মাস্টারদা সূর্য সেন ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি নামে একটি বিপ্লবী দল গঠন করেন। এখানে সদস্যদের অস্ত্র ও বিস্ফোরক তৈরির শিক্ষা দেওয়া হত।

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে ছাত্রদের অংশগ্রহণ : বাংলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা এইসব বিপ্লবী দলের বিভিন্ন দুঃসাহসিক বৈপ্লবিক অভিযানেও ছাত্ররা অংশগ্রহণ করত।

কিংসফোর্ড হত্যা : বাংলা প্রেসিডেন্সির অত্যাচারী ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ডকে মুজফফরপুরে বদলি করা হলে বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকী তাকে হত্যা করতে মুজফফরপুরে যান। কিন্তু ভুলবশত তাঁরা অন্যব্যক্তিকে হত্যা করেন। ক্ষুদিরাম বসু ধরা পড়েন এবং বিচারে ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে তাঁর ফাঁসি হয়।

রাইটার্স অভিযান : ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ৮ ডিসেম্বর তিন বিপ্লবী ছাত্র বিনয়কৃষ্ণ বসু, বাদল গুপ্ত ও দীনেশ গুপ্ত রাইটার্স বিল্ডিং-এ অভিযান চালান। তাঁরা কারা বিভাগের কর্তা সিম্পসনকে গুলি করে হত্যা করেন। বিনয় ও বাদল আত্মহত্যা করেন। পরে দীনেশের ফাঁসি হয়।

চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠন: ছাত্রদের নিয়ে মাস্টারদা সূর্য সেন ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি গড়ে তোলেন। তিনি এই দলের সাহায্যে ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ১৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠন করেন | সরকারি সেনাবাহিনীয় বিরুদ্ধে তিনি জালালাবাদ পাহাড়ে তিন দিন ধরে অসম যুদ্ধ চালিয়ে যান |

মূল্যায়ন : এইভাবে বাংলার ছাত্রসমাজ ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে প্রতিবাদ জানায়। বিপ্লবী আদর্শ তাদের উদ্বুদ্ধ করেছিল। ফলে সশস্ত্র প্রতিবাদ সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে পরিণত হয়। বিভিন্ন ইংরেজ সাহেবকে হত্যা ও বিপ্লবীদের কার্যকলাপে ইংরেজ সরকার সন্ত্রস্ত হয়ে ওঠে।

Rlearn Education