Sustainable Development

ধারণযোগ্য উন্নয়ন | Sustainable Development

Question: ধারণযোগ্য উন্নয়ন (Sustainable Development) বা সুস্থায়ী উন্নয়ন বা স্থিতিশীল উন্নয়ন বলতে কী বোঝো? [ME 18] ; জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে এর সম্পর্ক আলোচনা করো।


উত্তর:

পরিবেশবিদ এভা বেলফোর (Eva Balfour) প্রথম সাসটেনেল ডেভেলপমেন্ট’ শব্দটির ব্যবহার করেন। এর বাংলা অর্থ হল ‘ধারণযোগ্য উন্নয়ন’ বা ‘স্থিতিশীল উন্নয়ন’ বা ‘স্থায়ী উন্নয়ন’।

সংজ্ঞা :

ব্রুন্টল্যান্ড কমিশন (Brundtland Commission)-এর মতে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রয়োজন মেটানোর ক্ষেত্রে কোনো আপস না করে, বর্তমান প্রজন্মের চাহিদা মেটানোর জন্য গৃহীত পরিকল্পনাকে ধারণযোগ্য উন্নয়ন বা সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্ট (Sustainable Development) বলে।

ধারণযোগ্য উন্নয়নের ধারণা :

ধারণযোগ্য বা সুস্থায়ী উন্নয়ন (Sustainable Development) বলতে বোঝায় এমন এক দীর্ঘমেয়াদি, সামগ্রিক ও বাস্তব উন্নয়ন ব্যবস্থা যা প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটাতে সক্ষম অর্থাৎ, ধারণযোগ্য উন্নয়ন বলতে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকল মানুষের সর্বাঙ্গীণ ও দীর্ঘ মেয়াদি কল্যাণকে বোঝায়। ব্রুন্টল্যান্ড কমিশনের মতে মানুষকে দুঃখ-দারিদ্র্যতা থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য, নিরক্ষরতা দূর
করার জন্য, মানুষকে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী করে তোলার জন্য এবং সমস্ত সম্পদের ওপর ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অধিকার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে
পাঁচটি মূল বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।

এগুলি হল—

  • সামাজিক বিকাশ,
  • অর্থনৈতিক শ্রীবৃদ্ধি
  • সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি,
  • বাস্তুতান্ত্রিক ক্রমোন্নতি এবং
  • ভৌগোলিক পরিবেশের উন্নতি |

প্রয়োজনীয়তা বা উদ্দেশ্য :

বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মানুষের সার্বিক উন্নতি ধারণযোগ্য উন্নয়নের প্রধান লক্ষ। এই উন্নয়ন কর্মসূচির উদ্দেশ্যগুলি হল-

  • এমন এক বাসভূমি গড়ে তোলা যেখানে মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পাবে।
  • পরিবেশের কোনো ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই মানুষ সম্পদ ব্যবহার করতে পারবে।
  • স্থিতিশীল উন্নয়নে অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, বাস্তুতান্ত্রিক, ভৌগোলিক প্রভৃতি সকল দিকের শ্রীবৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
  • এই উন্নয়নের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। ধারণযোগ্য উন্নয়নে দারিদ্র্য দুরীকরণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
  • জীববৈচিত্র্য ও মানুষের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য রক্ষা ধারণযোগ্য উন্নয়নের একটি অন্যতম উদ্দেশ্য।
  • মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি এই উন্নয়নের অন্যতম একটি কর্মসূচি।

জনসংখ্যার বৃদ্ধির সঙ্গে ধারণযোগ্য উন্নয়নের সম্পর্ক :

জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রথম অবস্থায় মানুষ শ্রম ও প্রযুক্তির সাহায্যে সম্পদকে ব্যবহার করতে পারে। ফলে, জন প্রতি সম্পদ উৎপাদনের হার বৃদ্ধি পেতে থাকে, কৃষি, খনিজ, শক্তিসম্পদের ব্যবহার তথা উন্নয়ন ঘটে কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার যদি সম্পদ উৎপাদন বৃদ্ধির হারকে ছাড়িয়ে যায় তখনই শ্রমশক্তি উদ্বৃত্ত হয়, শ্রম অপচয় হয়, কারণ জমির ধারণক্ষমতা বা সম্পদ উৎপাদন বৃদ্ধির একটি নির্দিষ্ট সীমা আছে। আর এখানেই তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে ধারণযোগ্য উন্নয়নের ধারণা, এর নীতি ও পদ্ধতি। এই ধারণার সামগ্রিক পদক্ষেপের প্রথমেই বলা আছে, স্বল্প জন্মহার ও মৃত্যুহারের মাধ্যমে পৃথিবীতে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং এটি করতে পারলেই জনসংখ্যা সম্পদের অনুপাতে গড়ে উঠলে কাম্য জনসংখ্যার সৃষ্টি হবে। এই অবস্থায় বেকারত্ব থাকবে না, জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে, দেশের জমি সম্পদ উৎপাদনে নিয়োজিত হবে। শিক্ষা, কৃষি, শক্তিসম্পদের ক্ষেত্রে দেশ লক্ষ্যমাত্রার দিকে এগিয়ে যাবে।

Rlearn Education