MADHYAMIK HISTORY MODEL QUESTION |SWAAMI VIVEKANANDA NABBA BEDANTA
প্রশ্ন:- স্বামী বিবেকানন্দের ‘নব্য বেদান্ত’ সম্পর্কে কী জান?
অথবা, স্বামী বিবেকানন্দের ধর্মসংস্কারের আদর্শ ব্যখ্যা কর।
ভূমিকা :- উনিশ শতকে ভারত -এর খাঁটি আধ্যাত্মবাদ, নিখাদ দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদের মূর্ত প্রতীক ছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। ধর্মীয় ক্ষেত্রে তিনি যে আদর্শ প্রচার করেন তা ‘নব্য বেদান্ত’ নামে পরিচিত।
লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য : ব্যক্তিগত জীবনে দারিদ্র্য, দুঃখ, শ্রীরামকৃষ্ণ -এর উপদেশ, ভারত পরিক্রমার সময় নিজের চোখে ভারতবাসীর দুর্দশা পর্যবেক্ষণ প্রভৃতি তার ধর্মচিন্তাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। তাই তিনি মানুষকে অনুষ্ঠান-সর্বস্ব ধর্মের বেড়াজাল থেকে মুক্ত করে সেবার আদর্শ তুলে ধরাই তাঁর ধর্মচিন্তার মূল লক্ষ্য বলে ঘোষণা করেন।
দরিদ্রদের সেবা : ভারতবর্ষের পথে-প্রান্তরে ভ্রমণ করে বিবেকানন্দ দরিদ্র ও অজ্ঞ ভারতবাসীর মধ্যে ঈশ্বরকে প্রত্যক্ষ করেছিলেন। জীবের মধ্যে তিনি ভগবান শিবকে প্রত্যক্ষ করে বলেছিলেন, “যত্র জীব তত্র শিব”।
গঠনমূলক সমালোচনা : প্রকাশ্য রাজনীতিতে যোগ না দিলেও বিভিন্ন রচনার মাধ্যমে বিবেকানন্দ তৎকালীন ভারতের দারিদ্র, অস্পৃশ্যতা, অশিক্ষা, কুসংস্কার, নারী নির্যাতন, জাতিভেদ, ধর্মীয় বিরোধ প্রভৃতির বিরুদ্ধে তীব্র কষাঘাত হেনেছিলেন।
নতুন ধর্মাদর্শ : ভারতের প্রাচীন অদ্বৈত বেদান্ত দর্শনের নতুন ব্যাখ্যা দেন স্বামী বিবেকানন্দ, যা ‘নব্য বেদান্তবাদ’ নামে পরিচিত। এই ব্যাখ্যায় তিনি বলেন যে, সর্বত্রই ব্রহ্মের উপস্থিতি রয়েছে। সাধারণ মানুষের সেবা করাই হল ব্রহ্মের সেবা করা।
শিকাগো সম্মেলন : স্বামী বিবেকানন্দ ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দের ১১-২৭ সেপ্টেম্বর আমেরিকার শিকাগো বিশ্বধর্ম সম্মেলনে যোগ দেন। সেখানে তিনি তাঁর বক্তৃতায় ভারতের সনাতন হিন্দুধর্মের অদ্বৈত বেদান্তের বিশ্বজনীন আদর্শ ও বিশ্বজনীন মানবপ্রেমের আদর্শ ব্যাখ্যা করেন।
সমাধি : প্রাচীন অদ্বৈত দর্শনে সমাধির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। বিবেকানন্দ তাঁর নব্য বেদান্তবাদে মানুষের মুক্তি অর্জনের জন্য সমাধি অর্থাৎ বাহ্যজ্ঞান বিবর্জিত ধ্যানমগ্ন অবস্থার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন। এই ভাবে স্বামীজি তাঁর ‘নব্য বেদান্তবাদের’ মাধ্যমে মানুষকে মুক্তির নতুন পথ দেখান।
উপসংহার :- স্বামী বিবেকানন্দের “নব্য বেদান্ত ” এর আদর্শ বর্তমান সময়ে সমান গুরুত্বপূর্ণ। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন এবং সমন্বয় সাধন করতে পারে এই নব্য বেদান্ত বাদ।