ভূবৈচিত্র্যসূচক বা টোপোগ্রাফিকাল মানচিত্র | মাধ্যমিক ভূগোল

Topographical Map | Biodiversity Map | Bhuboychitrosuchok Manchitro | Madhyamik Geography

Content Topic :

1. ভূবৈচিত্র্যসূচক বা টোপোগ্রাফিকাল মানচিত্র কাকে বলে ?

2. ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রের বৈশিষ্ট্য |

3. ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রের প্রয়োজনীয়তা |

4. ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রে ব্যবহৃত বিভিন্ন স্কেল |

মাধ্যমিক ভূগোল : ভূবৈচিত্র্যসূচক বা টোপোগ্রাফিকাল মানচিত্র

★★ ভূবৈচিত্র্যসূচক বা টোপোগ্রাফিকাল মানচিত্র কাকে বলে ? [MP 2018]

সংজ্ঞা : গ্রিক শব্দ ‘Topos’-এর অর্থ ‘স্থান’ এবং ‘Grapho’-এর অর্থ ‘আঁকা’। এই দুই শব্দের মিলনে সৃষ্টি হয়েছে Topographical। অর্থাৎ, কোনো একটি স্থানের সঠিক অবস্থান, আয়তন এবং প্রাকৃতিক (ভূপ্রকৃতি, নদনদী, স্বাভাবিক উদ্ভিদ) ও সাংস্কৃতিক (পরিবহণ, যোগাযোগ ব্যবস্থা, জনবসতি প্রভৃতি) বিষয়- গুলি বিভিন্ন প্রচলিত প্রতীক চিহ্ন দ্বারা চিত্রায়িত করে যে মানচিত্র তৈরি করা হয়, তাকে ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র বা টোপোগ্রাফিকাল মানচিত্র বলে।

ভূবৈচিত্র্যসূচক বা টোপোগ্রাফিকাল মানচিত্রের বৈশিষ্ট্য :


বৈশিষ্ট্য :

স্কেল : এই মানচিত্র কতকগুলি সুনির্দিষ্ট
স্কেল অনুসারে আঁকা হয়। যেমন – 1:50,000, 1 : 2,50,000 প্রভৃতি।

বিস্তার : এই মানচিত্রের নির্দিষ্ট অক্ষাংশগত ও দ্রাঘিমাগত বিস্তার থাকে।

প্রতীক চিহ্ন : প্রচলিত নির্দিষ্ট প্রতীক চিহ্ন (Conventional Signs) ও রঙের সাহায্যে এই মানচিত্রের প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়গুলি চিত্রায়িত করা হয়।

সূচক সংখ্যা : প্রত্যেক টোপো মানচিত্রের একটি নির্দিষ্ট সূচক সংখ্যা থাকে। যেমন—

72 B/4 , 73 B/16 প্রভৃতি |

উপাদান : এই মানচিত্রে ভূপ্রকৃতি, নদনদী,
স্বাভাবিক উদ্ভিদ প্রভৃতি প্রাকৃতিক এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা, জনবসতি প্রভৃতি সাংস্কৃতিক উপাদান উপস্থাপন করা হয়।

প্রকাশনা : ভারতবর্ষে Survey of India এই মানচিত্র প্রস্তুত করে ও প্রকাশ করে।

★★ ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রের প্রয়োজনীয়তা বা উদ্দেশ্য : পর্ষদ নমুনা প্রশ্ন

ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র থেকে কোনো স্থানের বহু বিষয় সম্পর্কে নানান তথ্য জানা যায়। যেমন-

1. অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমারেখার ভিত্তিতে কোনো স্থানের অবস্থান সঠিকভাবে নির্ণয় করা যায়।

2. কোনো স্থান কোন্ রাজ্যের, কোন্ জেলায়, কোন্ মহকুমায় অবস্থিত তা জানা যায়।

3. কোনো অঞ্চলের প্রাকৃতিক বিষয়গুলি যেমন – · ভূপ্রকৃতি, নদনদী, জলাশয়, স্বাভাবিক উদ্ভিদ এবং সাংস্কৃতিক বিষয়গুলি যেমন— জনবসতি, পরিবহণ, যোগাযোগ ব্যবস্থা, ধর্ম প্রভৃতি সম্পর্কে বিশদ তথ্য আহরণ করা যায়।

4. ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র থেকে প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক উপাদানগুলির পারস্পরিক সম্পর্ক অনুধাবন করা যায়।

5. কোনো অঞ্চলের মানুষ ও তার পারিপার্শ্বিক অবস্থাকে জানতে গেলে, তাদের সুবিধা- অসুবিধা ও বিভিন্ন সমস্যা বুঝতে গেলে এবং ওই সকল সমস্যার সুষ্ঠু সমাধানের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হলে ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র পাঠ একান্ত প্রয়োজন।

6. নতুন জনবসতি ও শিল্পস্থাপন, বাঁধ তৈরি, খাল খনন, সড়কপথ, রেলপথ নির্মাণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে এই মানচিত্রের সাহায্য নেওয়া হয়।

7. সামরিক উদ্দেশ্যেও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রের গুরুত্ব অপরিসীম।

★★ ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রে ব্যবহৃত বিভিন্ন স্কেল: [MP 2017], পর্ষদ নমুনা প্রশ্ন


ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রে উপস্থাপন অনুযায়ী তিন ধরনের স্কেলের ব্যবহার লক্ষ করা যায়। যথা—

ভগ্নাংশসূচক স্কেল ( Representative Fraction) :

সংজ্ঞা : মানচিত্রের দূরত্ব ও ভূমি দূরত্বের অনুপাতকে যখন ভগ্নাংশে প্রকাশ করা হয়, তখন তাকে ভগ্নাংশসূচক স্কেল বা RF
(Representative Fraction) বলে।

RF = মানচিত্রের দূরত্ব / ভূমির দূরত্ব

ব্যবহার :

1. এই স্কেলকে যে-কোনো এককে প্রকাশ করা যায়, যদিও এই স্কেলে কোনো একক (Unit) দেওয়া থাকে না।
2. মানচিত্রের দূরত্ব ও ভূমির দূরত্বের একক একই ধরা হয়।
3. স্কেলের লব সর্বদা 1 হয়।

4. এই স্কেল থেকে সহজেই বিবৃতিমূলক বা
রৈখিক স্কেল তৈরি করা যায়।

5. এই স্কেল ব্যবহার করে অঙ্কনজনিত
ত্রুটি দূর করা যায়।

B. বিবৃতিমূলক স্কেল (Statement Scale) :
সংজ্ঞা :

মানচিত্রের স্কেলকে যখন লিখিতবিবৃতির দ্বারা বা ভাষায় বর্ণনামূলক ভাবে প্রকাশ করা হয়, তখন তাকে বিবৃতিমূলক স্কেল বলে।

ব্যবহার :

1. এই স্কেলে অঙ্ক কষার জটিলতা নেই।

2. এই স্কেল বোঝা খুব সহজ বলে মানচিত্র পাঠে অনভিজ্ঞ লোকেরও কোনো অসুবিধা হয় না।

3. CGS ও FPS যে-কোনো একটি ইউনিটেই এটি প্রকাশ করা যায়।

4. গাণিতিক পদ্ধতি দ্বারা ছবি আঁকার জটিলতা নেই।

5. এই স্কেল প্রকাশ করার জন্য মাপজোখ, ভৌগোলিক যন্ত্রপাতি ইত্যাদির দরকার হয় না।

6. মানচিত্রের দূরত্ব ও ভূমিভাগের দূরত্বের
মধ্যে সহজে তুলনা করা যায়।

রৈখিক স্কেল (Linear Scale) :

সংজ্ঞা :

মানচিত্রে সরলরেখার মাধ্যমে ভূমির দূরত্ব প্রকাশ করে যে স্কেল প্রদর্শন করা হয়, তাকে রৈখিক স্কেল বলে। এই স্কেলকে দুভাগে ভাগ করা হয়— ও মুখ্য বিভাগ (Primary Division) এবং ও গৌণ বিভাগ (Secondary Division)।

ব্যবহার :

1. মানচিত্র পাঠকরা সহজেই রেখার মাপের সঙ্গে মানচিত্রের তুলনা করে বাস্তব দূরত্ব সম্পর্কে ধারণা লাভ করেন।

2. মানচিত্রের ক্ষুদ্র দূরত্বও সহজে গৌণ বিভাগের দ্বারা নির্ণয় ও প্রকাশ করা যায়।

3. মানচিত্রের স্কেল ও ক্ষেত্রফলের মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় থাকে।

4. মানচিত্র বড়ো বা ছোটো হলে এই স্কেলও বড়ো বা ছোটো হয়।

5. এই স্কেল বোঝা ও অঙ্কন সকলের পক্ষে সুবিধাজনক।

Rlearn Education