উদ্বাস্তু সমস্যা সমাধানে ভারত সরকারের উদ্যোগ | মাধ্যমিক ইতিহাস

প্রশ্ন : উদ্বাস্তু সমস্যা সমাধানে ভারত সরকার কী কী উদ্যোগ গ্রহণ করে ? মাধ্যমিক 2020

উদ্বাস্তু সমস্যা সমাধানে ভারত সরকারের উদ্যোগ :

উত্তর : ভূমিকা : 1947 খ্রিস্টাব্দে দেশভাগের পর পশ্চিম পাকিস্তান এবং পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ পূর্ববঙ্গ থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে পাঞ্জাব, পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসাম সহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে আশ্রয় নেয়। স্বাধীন ভারত সরকারকে বাধ্য হয়ে উদ্বাস্তু সমস্যার সমাধানে নানা উদ্যোগ নিতে হয়।

সরকারের উদ্যোগ: উদ্বাস্তু সমস্যা সমাধানে ভারত সরকার যে সমস্ত উদ্যোগ গুলি নেয়া হয়েছিল সেগুলি হল:-

১. পুনর্বাসন নীতি: ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু উদ্বাস্তু সমস্যার ব্যাপকতা উপলব্ধি করেন এবং ছিন্নমূল উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের নীতির ওপর গুরুত্ব দেন বলে স্বাধীনতার প্রথম পাঁচ বছর পূনর্বাসনের যুগ নামে পরিচিত।

২. আশ্রয়দান: ভারতে আগত নিঃস্ব-রিক্ত উদ্বাস্তুরা অনেকেই প্রথমে বিভিন্ন রেলস্টেশন, ফুটপাত, পরিত্যক্ত ঘর বাড়িতে বা খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নেয় সরকারি বিভিন্ন স্থানে উদ্বাস্তু শিবির প্রতিষ্ঠা করে আপাতত সেখানে উদ্বাস্তুদের বসবাসের ব্যবস্থা করে।

৩. ত্রাণ: উদ্বাস্তু শিবির গুলিতে বসবাসের সময় সরকার উদ্বাস্তুদের খাদ্য, পোশাক- পরিচ্ছদ পানীয় জল, আলো, ঔষধপত্র কিছু নগদ অর্থ প্রভৃতি সরবরাহ করত। উদ্বাস্তু পরিবারগুলির বালক বালিকাদের জন্য শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা হয়।

৪. সরকারি সাহায্য: গ্রামীণ স্তরের উদ্বাস্তুদের জমি দান কৃষি ঋণ ও গৃহ নির্মাণে ভর্তুকি বা সরকারী সাহায্য দেওয়া হয়। এবং শহরাঞ্চলে উদ্বাস্তুদের জন্য শিল্প ও কারিগরি শিক্ষা প্রদান ও কুটির শিল্প প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করা হয়।

৫. পাঞ্জাবে গৃহীত ত্রাণব্যবস্থা: পাঞ্জাবে আশ্রয়গ্রহণকারী উদ্বাস্তুদের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার পর্যাপ্ত ত্রাণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দেয়। বিভিন্ন স্থানে নতুন নতুন উপনগরী গড়ে তুলে সেখানে তাদের পুনর্বাসন দেওয়া হয়।

———————————————————

আরও দেখো : মাধ্যমিক বাংলা সাজেশান 2024

———————————————————

৬. পশ্চিমবঙ্গে গৃহীত ত্রাণব্যবস্থা: পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয়গ্রহণকারী উদ্বাস্তুরা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে পর্যাপ্ত ত্রাণ ও পুনর্বাসনের সহযোগিতা পায়নি বলে অনেকে সমালোচনা করেন। তা ছাড়া বহু বাঙালি উদ্বাস্তুকে মধপ্রদেশ-উড়িষ্যা সংলগ্ন দণ্ডকারণ্য, আন্দামান প্রভৃতি দূরবর্তী স্থানে পুনর্বাসনে পাঠালে তারা বাংলার পরিবেশ ও সংস্কৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। উপসংহার: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের পর ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং পাঞ্জাব প্রদেশে সবচেয়ে বেশি উদ্বাস্তু আশ্রয় নেয়। অভিযোগ ওঠে যে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু পাঞ্জাবের উদ্বাস্তুদের ত্রাণ ও পুনর্বাসনের বিষয়ে যতটা যত্নবান ছিলেন, ততটা যত্নবান বাঙালি উদ্বাস্তুদের বিষয়ে ছিলেন না।

৭. দিল্লি চুক্তি: ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু উদ্বাস্তু সমস্যা সমাধানের জন্য পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের সঙ্গে নেহেরু লিয়াকত চুক্তি অর্থাৎ দিল্লী চুক্তিতে আবদ্ধ হন 1950 খ্রিস্টাব্দে। সেখানে বলা হয় সংখ্যালঘু রাষ্ট্রের প্রতি উদ্বাস্তুরা অনুগত থাকবে এবং উদ্বাস্তুদের নিজের দেশে প্রত্যাবর্তন উৎসাহ দান করা হবে।

মূল্যায়ন : পরিশেষে বলা যায় যে, উদ্বাস্তু সমস্যা সমাধানে ভারত সরকারের উদ্যোগ প্রশংসনীয় হলেও তা ছিল মূলত দিল্লি এবং পূর্ব পাঞ্জাব নির্ভর তুলনামূলকভাবে পশ্চিমবঙ্গের উদ্বাস্তু সমস্যা যথেষ্ট অবহেলিত হয়েছিল।

Rlearn Education