উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র | মাধ্যমিক ভূগোল

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর : উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র | মাধ্যমিক ভূগোল ষষ্ঠ অধ্যায়

আলোচ্য বিষয় :

1. ছদ্ম রং বা FCC

2. সেন্সর ( Sensor )

3. দূরসংবেদন বা রিমোট সেন্সিং

4. তড়িৎচুম্বকীয় বর্ণালি

5. TCC কী ?

6. পিক্সেল কী ?

7. ব্যান্ড কী ?

8. GIS

9. GPS

10. গ্রাটিকিউল এবং গ্রিড |

উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র : সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

ছদ্ম রং ( FCC ) :

সংজ্ঞা : FCC এর পুরো কথা হল False Colour Composite | উপগ্রহ চিত্র প্রস্তুত করার সময় লক্ষ্যবস্তুর প্রকৃত রঙের বহিঃপ্রকাশ না করে যদি অন্য রং দ্বারা প্রকাশ করা হয়, তবে তাকে ছদ্ম রং বা False Colour Composite বলে |

ব্যবহারের কারণ :

  • ছদ্ম রং ব্যবহার করা হলে ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন বস্তুকে পৃথক পৃথক ভাবে চিহ্নিত করা যায়।
  • উপগ্রহ থেকে প্রেরিত ছবিকে নিখুঁত করার জন্য কোনো বস্তুর প্রকৃত রঙের পরিবর্তে ছদ্ম রং ব্যবহার করা হয়।
  • উপগ্রহ চিত্রে ছদ্ম রং ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান সংক্রান্ত তথ্য এবং সেনাবাহিনীর নানা কাজ সংক্রান্ত তথ্য গোপন রাখা যায়।

সেন্সর ( Sensor ) :

সংজ্ঞা : সেন্সর (Sensor) হল এমন একটি বিশেষ যন্ত্র বা Device যা মহাকাশ থেকে ভূপৃষ্ঠের কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুর দ্বারা প্রতিফলিত আলোকতরঙ্গ গ্রহণ করে ওই বস্তুর বৈশিষ্ট্য তুলে ধরতে সাহায্য করে।

শ্রেণিবিভাগ :

সক্রিয় সেন্সর (Active Sensor) : যে সেন্সরগুলি কোনো বস্তু বা উপাদানের তথ্য সংগ্রহের সৌরশক্তির ওপর নির্ভর না করে নিজের দেহ থেকে আলোকতরঙ্গ পাঠিয়ে তারই প্রতিফলন সংগ্রহ করে, সেগুলিকে সক্রিয় সেন্সর বলে। এগুলি দিন ও রাত উভয় সময়েই তথ্যসংগ্রহ করতে সক্ষম। উদাহরণ- অ্যাকটিভ রেডিয়োমিটার, র‍্যাডার প্রভৃতি।

নিষ্ক্রিয় সেন্সর (Passive Sensor) : যে সেন্সরগুলি কোনো বস্তু বা উপাদানের তথ্যসংগ্রহের জন্য সৌরশক্তির প্রতিফলনের ওপর নির্ভর করে থাকে, সেগুলিকে নিষ্ক্রিয় সেন্সর বলে। এগুলি রাত্রে বা অন্ধকারাচ্ছন্ন স্থানে তথ্যসংগ্রহ করতে পারে না। উদাহরণ- ফটোগ্রাফিক ক্যামেরা, টিভি ক্যামেরা প্রভৃতি।

দূর সংবেদন বা Remote Sensing :

যে উন্নত বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি বা কলাকৌশলের সাহায্যে ভূপৃষ্ঠের কোনো বস্তু বা উপাদানকে স্পর্শ না করে দূর থেকে তার সম্বন্ধে তথ্য আহরণ এবং তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে ওই বস্তু বা উপাদান সম্পর্কে ধারণা লাভ করা হয়, তাকে রিমোট সেন্সিং বলে।

ইংরেজি ‘Remote’ কথার অর্থ ‘দূর’ এবং ‘Sense’ কথার অর্থ ‘সংবেদন’ বা ‘অনুভূতি’। অর্থাৎ, Remote Sensing কথার অর্থ হল ‘দূর সম্বন্ধে অনুভূতি’ |

তড়িৎচুম্বকীয় বর্ণালি বা Electro Magnetic Spectrum বা EMS

সূর্যের আলো প্রিজমের মধ্যে দিয়ে প্রতিসৃত হয়ে সাতটি বিভিন্ন রং যথা – বেগুনি, নীল, আকাশি, সবুজ, হলুদ, কমলা ও লাল (বেনীআসহকলা) প্রভৃতি সম্পন্ন যে চওড়া পটির সৃষ্টি করে, তাকে বলা হয় বর্ণালি (Spectrum)। সৌরশক্তি যখন বিভিন্ন তরঙ্গ দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট রশ্মিসমূহের ব্যাপ্তি ঘটায়, তখন তাকে তড়িৎচুম্বকীয় বর্ণালি বা EMS (Electro Magnetic Spectrum) বলে। এই বর্ণালির মধ্যে বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোকরশ্মি দেখা যায়, যেমন— দৃশ্যমান তরঙ্গ (Visible Wave), X-Ray, গামা রশ্মি, UV-Ray প্রভৃতি।

ব্যান্ড (Band) :

পৃথিবীপৃষ্ঠের কোনো বস্তু থেকে প্রতিফলিত তড়িৎ-চৌম্বকীয় বিকিরণ উপগ্রহ সেন্সরে স্থাপিত ডিভাইসের যে নির্দিষ্ট অংশে লিপিবদ্ধ হয়, তাকে ব্যান্ড (Band) বলে।

TCC :

উপগ্রহ চিত্রে প্রকৃত রং প্রতিস্থাপনের জন্য সাধারণত লাল, সবুজ ও নীল এই তিনটি রঙের ব্যান্ড ব্যবহৃত হয়। এর ফলে নীল বস্তু নীল ব্যান্ডে, লাল বস্তু লাল ব্যান্ডে এবং সবুজ বস্তু সবুজ ব্যান্ডের রঙে দেখানো হয়। এই ব্যবস্থাকে True Colour Composite বলে।

পিক্সেল ( Pixel ) :

উপগ্রহ ক্ষুদ্রতম উপাদান (Picture element) যার একটি নির্দিষ্ট মান (Value) এবং ঠিকানা (অক্ষাংশ / দ্রাঘিমাংশ এবং সারি / স্তম্ভ) থাকে, তাকে পিক্সেল বলে। এক একটি পিক্সেল ভূপৃষ্ঠের এক নির্দিষ্ট অংশের প্রতিনিধিত্ব করে।

GIS ( Geographical Information System) :

পুরোকথা : GIS-এর পুরোকথা হল
Geographical Information System |

সংজ্ঞা :

কোনো ভৌগোলিক স্থানের তথ্য উপস্থাপনের জন্য যদি কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার, সফ্টওয়্যার এবং ভৌগোলিক উপাত্ত (database) ও ব্যক্তিগত নকশা ব্যবহার করা হয়, আর তা যদি উপাত্ত সংগ্রহ, সংরক্ষণ, সংস্করণ, বিশ্লেষণ ও প্রদর্শন করতে সাহায্য করে তবে সেই প্রক্রিয়াকে জি. আই. এস বলে।

গুরুত্ব : ভৌগোলিকদের ফিল্ডে গিয়ে ডেটা সংগ্রহ করতে হয় না। ও সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হয়। ও ভৌগোলিক অবস্থানের মানচিত্র উপস্থাপন করা যায়।

GPS ( Global Positioning System ) :

GPS : পুরোকথা : GPS-এর পুরোকথা হল
Global Positioning System |

সংজ্ঞা : কৃত্রিম উপগ্রহের সাহায্যে পৃথিবী পৃষ্ঠের কোনো স্থানের অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমা নির্ণয়ের মাধ্যমে অবস্থান নির্ণয়ের পদ্ধতিকে জি .পি .এস বলে।
গুরুত্ব : যে-কোনো স্থানের অবস্থান জানা সম্ভব। ও প্রতিরক্ষার কাজে এর গুরুত্ব সর্বাধিক। ও জরিপ কার্যে, ম্যাপ প্রস্তুতিতে জি পি এস ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

উদাহরণ : 1973 সালে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র সামরিক প্রয়োজনে প্রথম GPS পদ্ধতি ব্যবহার করে। তাদের ব্যবহৃত 24টি উপগ্রহ একত্রে ‘NAVSTAR’ নামে পরিচিত।

গ্রিড (Grid) এবং গ্রাটিকিউল :

পৃথিবীতে কল্পিত অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমারেখা গুলিকে সমতলক্ষেত্রে বিশেষ পদ্ধতিতে অঙ্কন করলে যে জালিকাকার ছকের সৃষ্টি হয় তাকে গ্রাটিকিউল (Graticule) বলে। এই গ্রাটিকিউল- এর প্রত্যেক ছককে গ্রীড (Grid) বলে।

Rlearn Education