ভারতে উপনিবেশ বিরোধী আন্দোলনে বামপন্থীদের ভূমিকা

ভারতে উপনিবেশ বিরোধী আন্দোলনে বামপন্থীদের ভূমিকা : মাধ্যমিক ইতিহাস


প্রশ্ন:- বিশ শতকের ভারতে উপনিবেশ বিরোধী আন্দোলনে বামপন্থীদের ভূমিকা আলোচনা কর ৷

উত্তর : ভূমিকা :- বাঙালি বিপ্লবী ও রাজনৈতিক নেতা মানবেন্দ্রনাথ রায়ের হাত ধরেই রাশিয়ার তাসখন্দে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে ভারতের উপনিবেশ বিরোধী আন্দোলন এক অন্য রূপ ধারণ করে।

ভারতে কমিউনিস্ট পার্টি গঠন : ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে কানপুরে প্রথম সর্বভারতীয় কমিউনিস্ট সম্মেলন হয় এবং এখানেই সিঙ্গারাভেলু চেট্টিয়ারের সভাপতিত্বে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর থেকেই ভারতে উপনিবেশ বিরোধী আন্দোলনে বামপন্থীরা সক্রিয় হয়ে ওঠে।

কৃষক-শ্রমিক আন্দোলনে বামপন্থীদের ভূমিকা : বাংলায় মুজাফফর আহমেদ, হেমন্তকুমার সরকার প্রমুখ কমিউনিস্টরা শ্রমিক ও কৃষকদের সংগঠিত করে ১৯২৫খ্রিস্টাব্দে ‘ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি’ গঠন করেন। এর অনুকরণে বোম্বাই, পাঞ্জাব ও যুক্তপ্রদেশে অনুরূপ পার্টি গড়ে ওঠে। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে কেন্দ্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি’।

সাইমন-কমিশন বিরােধী আন্দোলন :১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে সাইমন কমিশন ভারতে এলে কংগ্রেসের তরফে যে ব্যাপক বিক্ষোভ কর্মসূচি নেওয়া হয়, তাতে বামপন্থীরা অংশ নেয়। এর পাশাপাশি কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে শিল্প- শ্রমিকদের ধর্মঘট ইংরেজ সরকারকে বিপাকে ফেলেছিল।

পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি : কমিউনিস্ট দলের সদস্যরা জাতীয় কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশনে উপস্থিত থেকে ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ক্রমাগত পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি জানিয়ে এসেছিল।এই দাবি ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসের লাহাের অধিবেশনে পূর্ণতা পায়।

মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা : ঔপনিবেশিক সরকার কমিউনিস্টদের দমন করার জন্য ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে ৩২ জন শ্রমিক নেতাকে গ্রেপ্তার করে মামলা শুরু করে, যা মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা নামে পরিচিত। এই মামলায় মুজফ্ফর আহমেদ, কিশোরীলাল ঘোষ, ধরণী গোস্বামী, গোপেন চক্রবর্তী, রাধারমণ মিত্র, গোপাল বসাক এবং শিবনাথ মুখোপাধ্যায় অভিযুক্ত হন।

আইন অমান্য আন্দোলন : মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় ৩৩ জন নেতা কারাবন্দি হওয়ায়বামপন্থী দল দুর্বল হয়ে পড়ে। তবুও বোম্বাইয়ে রেলওয়ে মেনস ইউনিয়নের সদস্যরা লাল পতাকা নিয়ে ধর্মঘট করে। শোলাপুরে বস্ত্রশিল্প শ্রমিকেরা ধর্মঘট করে এবং সমান্তরাল সরকার গড়ে তোলে। সরকার কমিউনিস্ট দলকে নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করে।

ভারত ছাড়ো আন্দোলন : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ফ্যাসিবাদ বিরোধী ফ্রন্টে রাশিয়ার মিত্র ছিল ইংল্যান্ড। তাই কমিউনিস্ট দল ইংল্যান্ডের যুদ্ধ প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে। শ্রমিক ধর্মঘট বন্ধ রাখে এবং ভারতছাড়ো আন্দোলন থেকে দূরে থাকে। তবুও কলকাতা ট্রাম পরিবহন কর্মীরা ধর্মঘট করে এই আন্দোলনকে সমর্থন জানায়।

বিশ্বযুদ্ধোত্তর গণ আন্দোলনে নেতৃত্ব : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর বাংলার তেভাগা আন্দোলন বা তেলেঙ্গানা আন্দোলনগুলি কমিউনিস্ট পার্টির দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল।

উপসংহার : বহু বাধাবিপত্তি সত্ত্বেও কমিউনিস্টরা শ্রেণি সংগ্রামের চরিত্র বজায় রাখে। তারা তাদের নীতি ও আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়নি। কমিনটার্নের নির্দেশ ও বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের কোনো কোনো কার্যক্রম সমালোচিত হয়। কিন্তু তাদের কার্যকলাপ যে জাতীয়তাবাদী ছিল এই কথা স্বীকার করতেই হয়।

Rlearn Education